মেহেদী হাসান, ২৯/৪/২০১৪, মঙ্গলবার, ঢাকা।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাবি মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তার নির্দেশে এবং সিদ্ধান্তে ডালিম হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে অপহরন করে এনে বন্দী করে রাখা, নির্যাতন করা এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তাতে দেখা যায় মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার ছিলেননা। চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার ছিল ফেনির নাসির নামে এক লোক। সেক্রেটাারি ছিল সন্দ্বীপের ফয়জুল্লাহ।
মিজানুল ইসলাম আজ আসামী সনাক্তকরন প্রক্রিয়া, আলবদর কমান্ডার ইস্যু বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের পর অভিযোগ খন্ডন করে যুক্তি পেশ শুরু করেন। এরপর বিচার কার্যক্রম আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মীর কাসেম আলী আলবদর কমান্ডার ছিলেন কি-না :
মিজানুল ইসলাম শুনানীর শুরুতে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দাবি হল মীর কাসেম পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারন সম্পাদক ছিলেন, তিনি চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন, তার নির্দেশে এবং সিদ্ধান্তে ডালিম হোটেল পরিচালিত হত যেখানে লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন এবং হত্যা করা হয়েছে।
অপরদিকে এ মামলায় আসামি পক্ষের দাবি হল মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেননা। ডালিম হোটেল মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নিয়যন্ত্রন করত। ডালিম হোটেল কোন ক্যাম্প ছিলনা।
মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তার কোথাও তিনি আল বদর কমান্ডার ছিলেন এ মর্মে উল্লেখ নেই। বরং অপর তিন থেকে চারজন ব্যক্তিকে এসব বইয়ে আলবদর প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাহবুবুল আলমের লেখা বই যা রাষ্ট্রপক্ষ জমা দিয়েছে তাতে ফেনির নাসির নামে একজন লোক চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার ছিল বলে উল্লেখ আছে। সেক্রেটারি ছিল সন্দ্বীপের ফয়জুল্লাহ। এছাড়া চট্টগ্রাম আলবদর নেতা হিসেবে জাকির হোসেন এবং মনসুর এর নাম উল্লেখ আছে। এসময় ট্রাইব্যুনাল বইটি নিয়ে বিষয়টি পড়ে দেখেন।
এরপর মিজানুল ইসলাম বলেন, তাহলে রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টেই দেখা যাচ্ছে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার ছিলেননা। ছিল অন্যরা।
মিজানুল ইসলাম বলেন, ডালিম হোটেল যে মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নিয়ন্ত্রনে ছিল সে মর্মে আমরা দুটি ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। ১৯৭২ সালে মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার বিরুদ্ধে একটি মামলার ডকুমেন্ট দিয়েছি । এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম একটি প্রামান্য দলিল বইয়েও এ বিষয়ে উল্লেখ আছে।
তদন্ত কর্মকর্তাও জেরায় স্বীকার করেছেন ডালিম হোটেল নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মর্মে কোন রিপোর্ট তিনি দেখেননি।
অভিযোগ খন্ডন :
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মোট ১৪টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এক এবং পাঁচ নং অভিযোগ বিষয়ে কোন সাক্ষী হাজির করেনি। মিজানুল ইসলাম আজ দুই, তিন, চার, ছয় এবং আট নং অভিযোগ খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দুই নং অভিযোগ হল লুৎফর রহমানকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। মিজানুল ইসলাম বলেন, লুৎফর রহমান বলেছেন, নির্যাতনের ফলে তার সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি এ ঘটনার পরে বিয়ে করেছেন। তিনি যদি পুরুষত্বহীন হবেন তাহলে তিনি বিয়ে করলেন কিভাবে? এথেকে বোঝা যায় নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে তিন নং অভিযোগে বলা হয়েছে ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামীর নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। অপর দিকে শফিউল আলম তার আনন্দ বেদনার সেই সে সময় বইয়ে লিখেছেন ২৭ নভেম্বর তাকে (শফিউল আলম) ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে চারদিন আগে জাহাঙ্গীর আলম ডালিম হোটেলে শফিউল আলমকে দেখল কি করে? কাজেই জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য অসত্য এবং তিনি ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলীকে জড়িয়ে যেসব কথা বলেছেন তাও অসত্য। অপর দিকে শফিউল আলমও তার বইয়ে চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেখ করেননি । তিনি তার আরেকটি বইয়ে আলবদর কমান্ডার হিসেবে ভিন্ন লোকের নাম উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষই এসব বই জমা দিয়েছে।
তাহলে মীর কাসেম আলী আলবদর কমান্ডার ছিল এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকেই তিন রকম তথ্য দিয়েছে দেখা যায়। তাদের জমা দেয়া বইয়ে মীর কাসেম আলী নয় বরং ফেনির নাসিরকে আল বদর কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাদের অভিযোগ এবং সাক্ষীদের বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আল বদর কমান্ডার ছিল। মীর কাসেম আলী আল বদর কমান্ডার ছিল এ দাবি বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের তিনরকম তথ্য রয়েছে এবং বেনিফিট অব ডাউটের সুবিধা তারা পাবেনা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার নং অভিযোগে বলা হয়েছে ডাবলমুরিং থানায় সাইফুদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাাতন করা হয়। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সাইফুদ্দিনের বোন নুরজাহান ঘটনা দেখেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু তাকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি।
মীর কাসেম আীল বিরুদ্ধে ছয় নং অভিযোগ হল চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন করা। মিজানুল ইসলাম বলেন, হারুনুর রশিদের স্ত্রী এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্যই বেশি গ্রহণযোগ্য হবার কথা। কিন্তু তিনি যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার বিপরীত তথ্য রয়েছে তার স্বামীর কথায়। তার স্বামী হারুনুর রশিদের উদ্ধুতি দিয়ে মাহবুবুল আলম তার বইয়ে লিখেছেন, আল বদর কমান্ডারদের তিনি চিনতেননা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আট নং অভিযোগ হল নুরুল কুদ্দুস, মো : নাসির, নুরুল হোসেনসহ চারজনকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তিনজনই জীবিত আছে। তাদের জবানবন্দীও রেকর্ড করা হয়েছে এবং সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাউকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি। কি কারনে আনা যায়নি তারও কোন ব্যাখ্যা রাষ্ট্রপক্ষ দেয়নি।
এসময় ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে আনা না হলে তাতে কি অভিযোগের গুরুত্ব কমবে? মিজানুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই কমবে। রুলসে এটা বলা আছে এবং রায়ে এ বিষয়ে মূল্যায়ন ভিন্ন হবে।
বাঙ্গাল খান :
মিজানুল ইসলাম বলেন, মীর কাসেম আলী বাঙ্গাল খান নামে পরিচিত ছিল বলে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যেই দেখা যায় বাঙ্গাল খান নামে আরেক ব্যক্তি ছিলেন, মীর কাসেম আলী নয়।
যেমন রাষ্ট্রপক্ষের আট নং সাক্ষী এস্কান্দার আলম বলেছেন, তিনি শুনেছেন মীর কাসেম আলী বলছেন খান সাহেব কোথায়? তখন খান সাহেব বলছেন, মীর কাসেম আমি আসছি।
১৯ নং সাক্ষী বলছেন, চোখ খুলে মীর কাসেম আলীর সাথে আরো একজনকে দেখি। উনি খান সাহেব হতে পারে। এ থেকে স্পষ্ট যে মীর কাসেম আলী খান সাহেব ছিলেননা। খান সাহেব নামে আরেকজন আলাদা ব্যক্তি ছিলেন।
আসামী সনাক্তকরন :
মিজানুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ মামলর তদন্ত শুরু হয়েছে। আইন অনুসারে তদন্ত শুরু হয়নি। জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কোন মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ ছিলনা। তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে ব্যক্তি হিসেবে মীর কাসেম আলীকে বাছাই করে তার নিজস্ব ধারণা অনুসারে তদন্ত শুরু করেছে । এরপর ডালিম হোটেলের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে সে মোতাবেক শিখিয়ে পরিয়ে সাক্ষী হাজির করা হয়েছে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, যখন মামলা শুরু হয় তখন মীর কাসেম আলী বাংলাদেশে একজন পরিচিত ব্যক্তি। যারা পত্রপত্রিকা পড়েন এবং টিভিতে খবর দেখেন তারা তাকে চেনেন। ট্রাইব্যুনাল আইনে আসামী সনাক্তকরন প্রকৃয়া বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। তবে বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলায় আসামী সনাক্তকরন প্রকৃয়া উল্লেখ আছে। কি পদ্ধতিতে সাক্ষী আসামীকে সনাক্তকরন করবে তা বলা আছে। আসামীকে আট থেকে ১০ জন লোকের সাথে মিলিয়ে রেখে সাক্ষীকে আসামী সনাক্ত করতে বলা হয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী কর্তৃক আসামী সনাক্ত করা খুব সহজ ছিল। কারণ এখানে ডকে আসামী ছাড়া আর কেউ থাকেনা। তারপর সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়ার পর সাক্ষীকে বলা হয় আপনি যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন তিনি আজ ডকে উপস্থিত আছেন কি-না দেখেনতো। এভাবে খুব সহজেই সাক্ষী আসামীকে সনাক্ত করতে পারে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী সৈয়দ এমরান বলেছেন মীর কাসেম আলী তার স্কুলের সহপাঠী ছিলেন সেই হিসেবে তিনি তাকে চিনতেন। সৈয়দ এমরান বলেছেন তিনি ১৯৬৮ সালে এমএনসি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন।
অথচ মীর কাসেম আলী এসএসসি পাশ করেন ১৯৬৭ সালে। সহপাঠী হতে হলে একই কাসে পড়তে হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মীর কাসেম আলী তার এক বছর আগে এসএসসি পাশ করেন। কাজেই সাক্ষী অসত্য তথ্য দিয়েছে ।
যুক্তি উপস্থাপনে মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আসাদ উদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিক।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাবি মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তার নির্দেশে এবং সিদ্ধান্তে ডালিম হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে অপহরন করে এনে বন্দী করে রাখা, নির্যাতন করা এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তাতে দেখা যায় মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার ছিলেননা। চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার ছিল ফেনির নাসির নামে এক লোক। সেক্রেটাারি ছিল সন্দ্বীপের ফয়জুল্লাহ।
মিজানুল ইসলাম আজ আসামী সনাক্তকরন প্রক্রিয়া, আলবদর কমান্ডার ইস্যু বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের পর অভিযোগ খন্ডন করে যুক্তি পেশ শুরু করেন। এরপর বিচার কার্যক্রম আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
মীর কাসেম আলী আলবদর কমান্ডার ছিলেন কি-না :
মিজানুল ইসলাম শুনানীর শুরুতে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দাবি হল মীর কাসেম পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারন সম্পাদক ছিলেন, তিনি চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন, তার নির্দেশে এবং সিদ্ধান্তে ডালিম হোটেল পরিচালিত হত যেখানে লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন এবং হত্যা করা হয়েছে।
অপরদিকে এ মামলায় আসামি পক্ষের দাবি হল মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেননা। ডালিম হোটেল মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নিয়যন্ত্রন করত। ডালিম হোটেল কোন ক্যাম্প ছিলনা।
মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তার কোথাও তিনি আল বদর কমান্ডার ছিলেন এ মর্মে উল্লেখ নেই। বরং অপর তিন থেকে চারজন ব্যক্তিকে এসব বইয়ে আলবদর প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাহবুবুল আলমের লেখা বই যা রাষ্ট্রপক্ষ জমা দিয়েছে তাতে ফেনির নাসির নামে একজন লোক চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার ছিল বলে উল্লেখ আছে। সেক্রেটারি ছিল সন্দ্বীপের ফয়জুল্লাহ। এছাড়া চট্টগ্রাম আলবদর নেতা হিসেবে জাকির হোসেন এবং মনসুর এর নাম উল্লেখ আছে। এসময় ট্রাইব্যুনাল বইটি নিয়ে বিষয়টি পড়ে দেখেন।
এরপর মিজানুল ইসলাম বলেন, তাহলে রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্টেই দেখা যাচ্ছে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার ছিলেননা। ছিল অন্যরা।
মিজানুল ইসলাম বলেন, ডালিম হোটেল যে মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার নিয়ন্ত্রনে ছিল সে মর্মে আমরা দুটি ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি। ১৯৭২ সালে মতিউর রহমান ওরফে মইত্যা গুন্ডার বিরুদ্ধে একটি মামলার ডকুমেন্ট দিয়েছি । এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম একটি প্রামান্য দলিল বইয়েও এ বিষয়ে উল্লেখ আছে।
তদন্ত কর্মকর্তাও জেরায় স্বীকার করেছেন ডালিম হোটেল নির্যাতন কেন্দ্র ছিল মর্মে কোন রিপোর্ট তিনি দেখেননি।
অভিযোগ খন্ডন :
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মোট ১৪টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ এক এবং পাঁচ নং অভিযোগ বিষয়ে কোন সাক্ষী হাজির করেনি। মিজানুল ইসলাম আজ দুই, তিন, চার, ছয় এবং আট নং অভিযোগ খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দুই নং অভিযোগ হল লুৎফর রহমানকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। মিজানুল ইসলাম বলেন, লুৎফর রহমান বলেছেন, নির্যাতনের ফলে তার সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি এ ঘটনার পরে বিয়ে করেছেন। তিনি যদি পুরুষত্বহীন হবেন তাহলে তিনি বিয়ে করলেন কিভাবে? এথেকে বোঝা যায় নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে তিন নং অভিযোগে বলা হয়েছে ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর আসামীর নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে তার কদমতলা বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়।
মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। অপর দিকে শফিউল আলম তার আনন্দ বেদনার সেই সে সময় বইয়ে লিখেছেন ২৭ নভেম্বর তাকে (শফিউল আলম) ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে চারদিন আগে জাহাঙ্গীর আলম ডালিম হোটেলে শফিউল আলমকে দেখল কি করে? কাজেই জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য অসত্য এবং তিনি ডালিম হোটেলে মীর কাসেম আলীকে জড়িয়ে যেসব কথা বলেছেন তাও অসত্য। অপর দিকে শফিউল আলমও তার বইয়ে চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেখ করেননি । তিনি তার আরেকটি বইয়ে আলবদর কমান্ডার হিসেবে ভিন্ন লোকের নাম উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষই এসব বই জমা দিয়েছে।
তাহলে মীর কাসেম আলী আলবদর কমান্ডার ছিল এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকেই তিন রকম তথ্য দিয়েছে দেখা যায়। তাদের জমা দেয়া বইয়ে মীর কাসেম আলী নয় বরং ফেনির নাসিরকে আল বদর কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাদের অভিযোগ এবং সাক্ষীদের বক্তব্যে দাবি করা হয়েছে মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আল বদর কমান্ডার ছিল। মীর কাসেম আলী আল বদর কমান্ডার ছিল এ দাবি বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের তিনরকম তথ্য রয়েছে এবং বেনিফিট অব ডাউটের সুবিধা তারা পাবেনা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার নং অভিযোগে বলা হয়েছে ডাবলমুরিং থানায় সাইফুদ্দিন খানকে তার নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাাতন করা হয়। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় সাইফুদ্দিনের বোন নুরজাহান ঘটনা দেখেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু তাকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি।
মীর কাসেম আীল বিরুদ্ধে ছয় নং অভিযোগ হল চট্টগ্রাম শহরের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুনুর রশিদ নামে একজনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেল এবং সালমা মঞ্জিলে নির্যাতন করা। মিজানুল ইসলাম বলেন, হারুনুর রশিদের স্ত্রী এ ঘটনায় সাক্ষ্য দিয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে তার বক্তব্যই বেশি গ্রহণযোগ্য হবার কথা। কিন্তু তিনি যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার বিপরীত তথ্য রয়েছে তার স্বামীর কথায়। তার স্বামী হারুনুর রশিদের উদ্ধুতি দিয়ে মাহবুবুল আলম তার বইয়ে লিখেছেন, আল বদর কমান্ডারদের তিনি চিনতেননা।
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আট নং অভিযোগ হল নুরুল কুদ্দুস, মো : নাসির, নুরুল হোসেনসহ চারজনকে অপহরন করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন। মিজানুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তিনজনই জীবিত আছে। তাদের জবানবন্দীও রেকর্ড করা হয়েছে এবং সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাউকে সাক্ষী হিসেবে আনা হয়নি। কি কারনে আনা যায়নি তারও কোন ব্যাখ্যা রাষ্ট্রপক্ষ দেয়নি।
এসময় ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন করেন তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে আনা না হলে তাতে কি অভিযোগের গুরুত্ব কমবে? মিজানুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই কমবে। রুলসে এটা বলা আছে এবং রায়ে এ বিষয়ে মূল্যায়ন ভিন্ন হবে।
বাঙ্গাল খান :
মিজানুল ইসলাম বলেন, মীর কাসেম আলী বাঙ্গাল খান নামে পরিচিত ছিল বলে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যুক্তি উপস্থাপনের সময় বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যেই দেখা যায় বাঙ্গাল খান নামে আরেক ব্যক্তি ছিলেন, মীর কাসেম আলী নয়।
যেমন রাষ্ট্রপক্ষের আট নং সাক্ষী এস্কান্দার আলম বলেছেন, তিনি শুনেছেন মীর কাসেম আলী বলছেন খান সাহেব কোথায়? তখন খান সাহেব বলছেন, মীর কাসেম আমি আসছি।
১৯ নং সাক্ষী বলছেন, চোখ খুলে মীর কাসেম আলীর সাথে আরো একজনকে দেখি। উনি খান সাহেব হতে পারে। এ থেকে স্পষ্ট যে মীর কাসেম আলী খান সাহেব ছিলেননা। খান সাহেব নামে আরেকজন আলাদা ব্যক্তি ছিলেন।
আসামী সনাক্তকরন :
মিজানুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ মামলর তদন্ত শুরু হয়েছে। আইন অনুসারে তদন্ত শুরু হয়নি। জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে কোন মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ ছিলনা। তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে ব্যক্তি হিসেবে মীর কাসেম আলীকে বাছাই করে তার নিজস্ব ধারণা অনুসারে তদন্ত শুরু করেছে । এরপর ডালিম হোটেলের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে সে মোতাবেক শিখিয়ে পরিয়ে সাক্ষী হাজির করা হয়েছে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, যখন মামলা শুরু হয় তখন মীর কাসেম আলী বাংলাদেশে একজন পরিচিত ব্যক্তি। যারা পত্রপত্রিকা পড়েন এবং টিভিতে খবর দেখেন তারা তাকে চেনেন। ট্রাইব্যুনাল আইনে আসামী সনাক্তকরন প্রকৃয়া বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। তবে বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলায় আসামী সনাক্তকরন প্রকৃয়া উল্লেখ আছে। কি পদ্ধতিতে সাক্ষী আসামীকে সনাক্তকরন করবে তা বলা আছে। আসামীকে আট থেকে ১০ জন লোকের সাথে মিলিয়ে রেখে সাক্ষীকে আসামী সনাক্ত করতে বলা হয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী কর্তৃক আসামী সনাক্ত করা খুব সহজ ছিল। কারণ এখানে ডকে আসামী ছাড়া আর কেউ থাকেনা। তারপর সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়ার পর সাক্ষীকে বলা হয় আপনি যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন তিনি আজ ডকে উপস্থিত আছেন কি-না দেখেনতো। এভাবে খুব সহজেই সাক্ষী আসামীকে সনাক্ত করতে পারে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী সৈয়দ এমরান বলেছেন মীর কাসেম আলী তার স্কুলের সহপাঠী ছিলেন সেই হিসেবে তিনি তাকে চিনতেন। সৈয়দ এমরান বলেছেন তিনি ১৯৬৮ সালে এমএনসি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন।
অথচ মীর কাসেম আলী এসএসসি পাশ করেন ১৯৬৭ সালে। সহপাঠী হতে হলে একই কাসে পড়তে হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মীর কাসেম আলী তার এক বছর আগে এসএসসি পাশ করেন। কাজেই সাক্ষী অসত্য তথ্য দিয়েছে ।
যুক্তি উপস্থাপনে মিজানুল ইসলামকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আসাদ উদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন