জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সপ্তম সাী আমিনুল ইসলামকে বৈরি ঘোষনা করে তাকে কারা হেফাজতে নেয়ার আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম না বলায় রাষ্ট্রপক্ষ তাকে বৈরি ঘোষনা করে। এরপর তাকে জুড়িশিয়াল কাস্টডিতে নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করে। তবে ট্রাইব্যুনালে সে আবেদন নাকচ করে দেয়।
আজ চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষীকে কারা হেফাজতে নেয়ার আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশে বলেন, আমরা এই সাক্ষীকে নিরাপত্তা হেফাজদে নেয়ার আবেদন গ্রহণ করলাম না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এই সাক্ষী অন্য সাক্ষীদের যাতে ইনফুয়েন্স করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইনফুয়েন্স করলে ব্যবস্থা নেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সাক্ষীকে ফলো করবে। একই সাথে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে নিরাপদে সাী আমিনুল ইসলামকে বাড়িতে পৌছে দেয়ার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে প্রসিকিউশনের কার্যালয়ে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে সকালে জবানবন্দিকালে আসামির নাম না বলায় রাষ্ট্রপক্ষ সপ্তম সাী আমিনুল ইসলামকে বৈরি ঘোষনা করে। এরপর তাকে কাস্টডিতে (কারাগারে) পাঠানোর আবেদন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। সাক্ষ্য প্রদান কালে আমিনুল ইসলাম এটিএম আজহারের নাম উল্লেখ না করে বলেন, একাত্তর সালে পাক বাহিনী ও তার দোসররা রংপুরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ সময় প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাীকে বৈরী ঘোষণা করে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করেন।
এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম বলেন, সাক্ষ্য দেয়ার পর কেন তাকে আমরা জুডিশিয়াল কাস্টুডিতে পাঠাবো।
আবেদনে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন সাী আমিনুল ইসলামকে নিরাপত্তা দিতে কাস্টডিতে (কারাগারে) পাঠানো প্রয়োজন। তখন আদালত সাীর কাছে জানতে চায় আপনি কি নিরাপত্তা চান। জবাবে সাী বলেন, আমি নিরাপত্তা চাই না।
এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, একজন সাক্ষীকে বৈরী ঘোষনা করা হল রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক। এরপর তারা তাকে কাস্টুডিতে নেয়ার আবেদন করেছে। আমি যতদূর জানি এই আইনে অভিযুক্ত ছাড়া কাউকে কাস্টুডিতে পাঠানোর অনুমতি নেই। এখানে এই ভদ্রলোক (সাক্ষী) নিরাপত্তা চেয়েছে। এ অবস্থায় তাকে পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে সাক্ষী বিশাবালীর যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি হবে। একজন সাক্ষীকে সরকার হোস্টাইল ঘোষণা করে সেই ব্যক্তিকে নিরাপত্তায় নিলে তিনি কতটা নিরাপদ সেটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে যেয়ে যেন কোন ধরণের ভয়ভীতির স্বীকার না হয় সেটা মনে রাখতে হবে। একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে তোলার পর তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে।
এরপর জেয়াদ আল মালুম সাক্ষীকে আবারও কাস্টুডিতে রাখার আবেদন করেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে এবিষয়ে লিখিত আবেদন করা নির্ধেশ দেন।
দুপুর ২টায় লিখিত আবেদনের শুনানিতে জেয়াদ আল মালুম বলেন, এই সাক্ষী অন্য সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারে, এজন্য সাক্ষীকে জুডিশিয়াল কাস্টুডিতে রাখার আবেদন জানাচ্ছি।
জবাবে আসামীপরে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রসিকিউশনের ইচ্ছানুযায়ী জবানবন্দী না দেয়ায় সাীকে বৈরী ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে জেরাও করা হয়েছে। প্রসিকিউশন সাীকে বৈরী ঘোষণা করে ান্ত হননি বরং তাকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় করাগারে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। এটা ন্যায় বিচারকে ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো করার সামিল। সাক্ষী কারোর পক্ষের নন। তিনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে যা জানেন বলবেন। সব কিছু তাদের পক্ষে না নিতে পেরে রাষ্ট্রপক্ষ এই সাক্ষীকে করাগারে নিতে চাচ্ছে। এই সাক্ষীকে জেলে পাঠানো হলে আর কেউই সাক্ষী দিতে আসবে না। ন্যায় বিচারকে ধ্বংস করতে এই আবেদন করা হয়েছে। সাী নিরাপত্তা চায় না, তারপরও তাকে নিরাপত্তা দেয়ার দোহাই দিয়ে কারাগারে নিয়ে নির্যাতন করার জন্যই এ আবেদন করা হয়েছে।
সাক্ষীর জবানবন্দী ও রাষ্ট্রপক্ষের জেরা:
জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমার নাম মো: আমিনুল ইসলাম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৬ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম-উত্তর মোকছেদপুর ধাপপাড়া, উপজেলা-বদরগঞ্জ, জেলা-রংপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি গড়াশোনা করতাম এবং আমি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলাম। ১৯৭০ সালে আমাদের এলকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন আফজাল হোসেন এবং মোখলেছুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আনিছুল হক চৌধুরী ও মজিবুর রহমান মাষ্টার।
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুরের দিকে রংপুর থেকে একটি ট্রেন পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের এদেশীয় দোসরসহ সেই ট্রেনে টেকশোর হাট ৬নং রেল গোমাটিতে এসে দাঁড়ায় এবং ট্রেন থেকে নেমে তারা সকলেই উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং রাস্তার দুই ধারে অবস্থিত বাড়ি ঘর অগ্নিসংযোগ এবং এলোপাতারি গুলি করতে করতে ধাপপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে ফেলে। ঐ সময় আমার চাচা ইউসুফ আলীর বাড়িতে একটি মাটির ঘরে আমার বড় আম্মা (চাচী) মরিময় নেছা ওরফে কালটি মাই, যিনি নয় মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন এবং আমি অবস্থান করছিলাম। তারপর আমার চাচী আম্মা বলে পাকিস্তানী আর্মিরা খুব কাছাকাছি এসে গেছে, চলো আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমার বড় আম্মা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু আমি ঘরেই অবস্থান করতে থাকি। বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় পাকিস্তানী আর্মিরা আমার বড় আম্মাকে ধরে ফেলে। তখন আমার বড় আম্মা পাকিস্তানী আর্মিদের পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে, ‘আমি নয় মাসের অন্তস্বত্তা, আমাকে মেরো না- আমাকে মেরে ফেললে আমার গর্ভের সন্তানও মারা যাবে’। আমি তখন মাটির ঘরের জানালা দিয়ে ঐ ঘটনা দেখছিলাম। পিছন দিক থেকে একজন পাক সেনা এসে আমার বড় আম্মাকে গুলি করে। বড় আম্মা মারা যায় এবং তার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তানী আর্মিরা সেখান থেকে আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদরে গ্রামে এলে আমার চাচা ইউসুফ আলী আত্মরক্ষার জন্য বাড়ির কাছে একটি বড় বট গাছের উপরে আশ্রয় নেয়। আমার বড় আম্মাকে গুলি করে হত্যা করার পর পাকিস্তানী আর্মিরা ঐ স্থান থেকে আরো উত্তর দিকে চলে গেলে আমার চাচা ইউসুফ আলী গাছ থেকে নেমে বাড়িতে আসে, বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য। তিনি তার নিজ ঘরে ঢুকে দেখেন তার জীবিকা নির্বাহের মাছ ধরা জাল ও টেবিলে রক্ষিত একটি রেডিও পাকিস্তানী আর্মিরা নিয়ে গেছে। পাকিস্তানী আর্মিরা কিছু সময় পরে যখন পুনরায় গ্রামের দিকে ফিরে আসছিল তখন আমার চাচা রাস্তায় গিয়ে পাকিস্তানী আর্মিদের ঐ জাল ও রেডিওটি ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। আমি তখন বাড়ির বাহিরে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে দেখছিলাম। তখন একজন পাকিস্তানী আর্মি বলে ‘ম্যারা জুট বাদ বলেগা’- এই কথা বলে তাকে গুলি করে হত্যা করে। ঐ দিন আমার চাচা ও বড় আম্মাসহ প্রায় ১৫ জনকে ঐ পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের এদেশীয় দোসররা হত্যা করে। যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে জঙ্গুলী ভরসা, আম মাই, চিনি মাই, বিষু, ওসমান আলী, ছহির আলী, জহির আলী, মৌলভী আব্দুল কুদ্দুস, মমতাজ, তমির উদ্দিন, আজিজার রহমান খোকা, সাধিনা, আমার চাচী মরিময় নেছা কালটি মাই, চাচা ইউসুফ আলী ছিলেন।
এই পর্যায়ে প্রসিকিউশন পক্ষ এই সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করেন এবং তাকে জেরা করেন।
প্রসিকিউশন পক্ষ কর্তৃক জেরা:
জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে আসা এদেশীয় দোষরদের কারো নাম বলতে পারব না। আমার মনে কোন ভয় কাজ করছে না। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে এলাকায় যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যারা বিপক্ষে ছিল তাদের নাম জানা স্বাভাবিক এবং আমার নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন সময় হতে এ পর্যন্ত আমাদের এলাকার সকলে জানে আমিও জানি। আমার এলাকার যে সমস্ত রাজনৈতিক দল আছে সে সমস্ত দলগুলো সম্পর্কে জানি এবং সেই সমস্ত দলের নেতা কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আমি চিনি, তাদের নাম ও ভূমিকা সম্পর্কেও জানি। আমার এলাকা বদরগঞ্জের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেবের মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসেছি। এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ইহা সত্য নহে যে, আমি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে নিজেকে দাবী করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার গ্রামে পাকিস্তানী আর্মিদের ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের প্রকৃত নাম গোপন করিয়াছি। ইহা সত্য নহে যে, আমার চাচী মরিয়ম নেছা ওরফে কালটি মাইকে পাকিস্তানী আর্শি তাদের এদেশীয় দোষর আসামী এটিএম আজহারুল ইসলামের উপস্থিতিতে এবং তার নির্দেশে হত্যা করা হইয়াছে, তাহা আমি গোপন করি।
আসামী পক্ষ কর্তৃক জেরা:
এই মামলার সাক্ষী অধ্যাপক মেছের উদ্দিন, মোখলেছুর রহমান, তাহের সরকার, আইয়ুব আলী, মকবুল হোসেন এবং আব্দুর রহমান কে আমি চিনি। আমি আমার বড় আম্মা কালটি মাইকে হত্যাকান্ডের ব্যাপারে উপরোক্ত সাক্ষীদের বলেছি। ১৯৯৬ সালের পূর্বে আসামী এটিএম আজহারুল ইসলাম আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
এরপর আগামী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
##
আজ চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষীকে কারা হেফাজতে নেয়ার আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশে বলেন, আমরা এই সাক্ষীকে নিরাপত্তা হেফাজদে নেয়ার আবেদন গ্রহণ করলাম না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এই সাক্ষী অন্য সাক্ষীদের যাতে ইনফুয়েন্স করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইনফুয়েন্স করলে ব্যবস্থা নেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই সাক্ষীকে ফলো করবে। একই সাথে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে নিরাপদে সাী আমিনুল ইসলামকে বাড়িতে পৌছে দেয়ার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে প্রসিকিউশনের কার্যালয়ে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে সকালে জবানবন্দিকালে আসামির নাম না বলায় রাষ্ট্রপক্ষ সপ্তম সাী আমিনুল ইসলামকে বৈরি ঘোষনা করে। এরপর তাকে কাস্টডিতে (কারাগারে) পাঠানোর আবেদন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। সাক্ষ্য প্রদান কালে আমিনুল ইসলাম এটিএম আজহারের নাম উল্লেখ না করে বলেন, একাত্তর সালে পাক বাহিনী ও তার দোসররা রংপুরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ সময় প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাীকে বৈরী ঘোষণা করে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর আবেদন করেন।
এসময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম বলেন, সাক্ষ্য দেয়ার পর কেন তাকে আমরা জুডিশিয়াল কাস্টুডিতে পাঠাবো।
আবেদনে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন সাী আমিনুল ইসলামকে নিরাপত্তা দিতে কাস্টডিতে (কারাগারে) পাঠানো প্রয়োজন। তখন আদালত সাীর কাছে জানতে চায় আপনি কি নিরাপত্তা চান। জবাবে সাী বলেন, আমি নিরাপত্তা চাই না।
এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, একজন সাক্ষীকে বৈরী ঘোষনা করা হল রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক। এরপর তারা তাকে কাস্টুডিতে নেয়ার আবেদন করেছে। আমি যতদূর জানি এই আইনে অভিযুক্ত ছাড়া কাউকে কাস্টুডিতে পাঠানোর অনুমতি নেই। এখানে এই ভদ্রলোক (সাক্ষী) নিরাপত্তা চেয়েছে। এ অবস্থায় তাকে পুলিশের হাতে ছেড়ে দিলে সাক্ষী বিশাবালীর যে ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনার পুনুরাবৃত্তি হবে। একজন সাক্ষীকে সরকার হোস্টাইল ঘোষণা করে সেই ব্যক্তিকে নিরাপত্তায় নিলে তিনি কতটা নিরাপদ সেটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে যেয়ে যেন কোন ধরণের ভয়ভীতির স্বীকার না হয় সেটা মনে রাখতে হবে। একজন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে তোলার পর তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে।
এরপর জেয়াদ আল মালুম সাক্ষীকে আবারও কাস্টুডিতে রাখার আবেদন করেন।
এরপর ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে এবিষয়ে লিখিত আবেদন করা নির্ধেশ দেন।
দুপুর ২টায় লিখিত আবেদনের শুনানিতে জেয়াদ আল মালুম বলেন, এই সাক্ষী অন্য সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারে, এজন্য সাক্ষীকে জুডিশিয়াল কাস্টুডিতে রাখার আবেদন জানাচ্ছি।
জবাবে আসামীপরে আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রসিকিউশনের ইচ্ছানুযায়ী জবানবন্দী না দেয়ায় সাীকে বৈরী ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে জেরাও করা হয়েছে। প্রসিকিউশন সাীকে বৈরী ঘোষণা করে ান্ত হননি বরং তাকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় করাগারে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। এটা ন্যায় বিচারকে ভেঙ্গে গুড়োগুড়ো করার সামিল। সাক্ষী কারোর পক্ষের নন। তিনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে যা জানেন বলবেন। সব কিছু তাদের পক্ষে না নিতে পেরে রাষ্ট্রপক্ষ এই সাক্ষীকে করাগারে নিতে চাচ্ছে। এই সাক্ষীকে জেলে পাঠানো হলে আর কেউই সাক্ষী দিতে আসবে না। ন্যায় বিচারকে ধ্বংস করতে এই আবেদন করা হয়েছে। সাী নিরাপত্তা চায় না, তারপরও তাকে নিরাপত্তা দেয়ার দোহাই দিয়ে কারাগারে নিয়ে নির্যাতন করার জন্যই এ আবেদন করা হয়েছে।
সাক্ষীর জবানবন্দী ও রাষ্ট্রপক্ষের জেরা:
জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমার নাম মো: আমিনুল ইসলাম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৬ বৎসর। আমার ঠিকানা গ্রাম-উত্তর মোকছেদপুর ধাপপাড়া, উপজেলা-বদরগঞ্জ, জেলা-রংপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি গড়াশোনা করতাম এবং আমি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলাম। ১৯৭০ সালে আমাদের এলকায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ছিলেন আফজাল হোসেন এবং মোখলেছুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আনিছুল হক চৌধুরী ও মজিবুর রহমান মাষ্টার।
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুরের দিকে রংপুর থেকে একটি ট্রেন পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের এদেশীয় দোসরসহ সেই ট্রেনে টেকশোর হাট ৬নং রেল গোমাটিতে এসে দাঁড়ায় এবং ট্রেন থেকে নেমে তারা সকলেই উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং রাস্তার দুই ধারে অবস্থিত বাড়ি ঘর অগ্নিসংযোগ এবং এলোপাতারি গুলি করতে করতে ধাপপাড়া গ্রাম ঘেরাও করে ফেলে। ঐ সময় আমার চাচা ইউসুফ আলীর বাড়িতে একটি মাটির ঘরে আমার বড় আম্মা (চাচী) মরিময় নেছা ওরফে কালটি মাই, যিনি নয় মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন এবং আমি অবস্থান করছিলাম। তারপর আমার চাচী আম্মা বলে পাকিস্তানী আর্মিরা খুব কাছাকাছি এসে গেছে, চলো আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আমার বড় আম্মা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু আমি ঘরেই অবস্থান করতে থাকি। বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় পাকিস্তানী আর্মিরা আমার বড় আম্মাকে ধরে ফেলে। তখন আমার বড় আম্মা পাকিস্তানী আর্মিদের পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে, ‘আমি নয় মাসের অন্তস্বত্তা, আমাকে মেরো না- আমাকে মেরে ফেললে আমার গর্ভের সন্তানও মারা যাবে’। আমি তখন মাটির ঘরের জানালা দিয়ে ঐ ঘটনা দেখছিলাম। পিছন দিক থেকে একজন পাক সেনা এসে আমার বড় আম্মাকে গুলি করে। বড় আম্মা মারা যায় এবং তার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তানী আর্মিরা সেখান থেকে আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদরে গ্রামে এলে আমার চাচা ইউসুফ আলী আত্মরক্ষার জন্য বাড়ির কাছে একটি বড় বট গাছের উপরে আশ্রয় নেয়। আমার বড় আম্মাকে গুলি করে হত্যা করার পর পাকিস্তানী আর্মিরা ঐ স্থান থেকে আরো উত্তর দিকে চলে গেলে আমার চাচা ইউসুফ আলী গাছ থেকে নেমে বাড়িতে আসে, বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য। তিনি তার নিজ ঘরে ঢুকে দেখেন তার জীবিকা নির্বাহের মাছ ধরা জাল ও টেবিলে রক্ষিত একটি রেডিও পাকিস্তানী আর্মিরা নিয়ে গেছে। পাকিস্তানী আর্মিরা কিছু সময় পরে যখন পুনরায় গ্রামের দিকে ফিরে আসছিল তখন আমার চাচা রাস্তায় গিয়ে পাকিস্তানী আর্মিদের ঐ জাল ও রেডিওটি ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। আমি তখন বাড়ির বাহিরে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে দেখছিলাম। তখন একজন পাকিস্তানী আর্মি বলে ‘ম্যারা জুট বাদ বলেগা’- এই কথা বলে তাকে গুলি করে হত্যা করে। ঐ দিন আমার চাচা ও বড় আম্মাসহ প্রায় ১৫ জনকে ঐ পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের এদেশীয় দোসররা হত্যা করে। যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে জঙ্গুলী ভরসা, আম মাই, চিনি মাই, বিষু, ওসমান আলী, ছহির আলী, জহির আলী, মৌলভী আব্দুল কুদ্দুস, মমতাজ, তমির উদ্দিন, আজিজার রহমান খোকা, সাধিনা, আমার চাচী মরিময় নেছা কালটি মাই, চাচা ইউসুফ আলী ছিলেন।
এই পর্যায়ে প্রসিকিউশন পক্ষ এই সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করেন এবং তাকে জেরা করেন।
প্রসিকিউশন পক্ষ কর্তৃক জেরা:
জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি পাকিস্তানী আর্মিদের সাথে আসা এদেশীয় দোষরদের কারো নাম বলতে পারব না। আমার মনে কোন ভয় কাজ করছে না। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে এলাকায় যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যারা বিপক্ষে ছিল তাদের নাম জানা স্বাভাবিক এবং আমার নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন সময় হতে এ পর্যন্ত আমাদের এলাকার সকলে জানে আমিও জানি। আমার এলাকার যে সমস্ত রাজনৈতিক দল আছে সে সমস্ত দলগুলো সম্পর্কে জানি এবং সেই সমস্ত দলের নেতা কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আমি চিনি, তাদের নাম ও ভূমিকা সম্পর্কেও জানি। আমার এলাকা বদরগঞ্জের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেবের মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসেছি। এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। ইহা সত্য নহে যে, আমি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে নিজেকে দাবী করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমার গ্রামে পাকিস্তানী আর্মিদের ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের প্রকৃত নাম গোপন করিয়াছি। ইহা সত্য নহে যে, আমার চাচী মরিয়ম নেছা ওরফে কালটি মাইকে পাকিস্তানী আর্শি তাদের এদেশীয় দোষর আসামী এটিএম আজহারুল ইসলামের উপস্থিতিতে এবং তার নির্দেশে হত্যা করা হইয়াছে, তাহা আমি গোপন করি।
আসামী পক্ষ কর্তৃক জেরা:
এই মামলার সাক্ষী অধ্যাপক মেছের উদ্দিন, মোখলেছুর রহমান, তাহের সরকার, আইয়ুব আলী, মকবুল হোসেন এবং আব্দুর রহমান কে আমি চিনি। আমি আমার বড় আম্মা কালটি মাইকে হত্যাকান্ডের ব্যাপারে উপরোক্ত সাক্ষীদের বলেছি। ১৯৯৬ সালের পূর্বে আসামী এটিএম আজহারুল ইসলাম আমাদের এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তাহা আমার জানা নাই।
এরপর আগামী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
##
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন