শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের কথপোকথন রেকর্ড ইকনোমিস্টের কাছে // চিফ এডিটরসহ দুইজনের বিরুদ্ধে রুল জারি


মেহেদী হাসান, 6/12/2012  
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুুল হক  কর্তৃক বিদেশে একজনের সাথে কথপোকথনের  রেকর্ড এবং ইমেইলের  ডকুমেন্ট চলে গেছে লন্ডনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন  ইকনোমিস্টের কছে।  বিচারপতি নিজামুল  হক এর  স্কাইপি ও  ইমেইল একাউন্টস এবং কম্পিউটর হ্যাক করে  ইকনোমিস্ট  এসব তথ্য হস্তগত করেছে বলে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আজ নিজেই বিষয়টি ওপেন কোর্টে প্রকাশ করে  একটি আদেশ পাশ করেছেন।

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের যেসব পোগনীয় তথ্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ইকনোমিস্ট  সংগ্রহ করেছে তা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে ইকনোমিস্টের চিফ এডিটর রব গিফর্ড এবং দণি এশিয়া ব্যুরো চিফ এ্যাডাম রবার্টের  প্রতি রুল জারি করা হয়েছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি   করে। ট্রাইব্যুনালের আদেশ লঙ্ঘন করে যদি তারা সংগৃহীত  গোপন তথ্য ফাঁস করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,   ব্রাসেলসে বসবাসরত আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কাছ থেকে ট্রাইব্যুনালের  বিচার প্রকৃয়া চলাকালে এবং বিভিন্ন আদেশের  সময় সহায়তা নিয়েছেন তিনি। এ উপলক্ষে তাদের দুজনের মধ্যে স্কাইপির মাধ্যমে কথপোকথন হয়েছে। এ  তথ্য হ্যাক করে ইকনোমিস্ট হস্তগত করেছে বলে   উল্লেখ করেন তিনি। 
গত বুধবার রাত দশটায় ইকনোমিস্ট থেকে বিচারপতি নিজামুল হককে জানানো হয় ড. আহমেদ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে তিনি  যেসব কথাবার্তা বলেছেন এবং  ইমেইলের মাধ্যমে যেসব জিনিস গ্রহণ করেছেন তার সবকিছুই তাদের কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে তারা চেয়ারম্যানকে আরো কিছু প্রশ্ন করেন।

ইকনোমিস্টের প্রতি আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন  ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা মর্মে জারি করা নোটিশের জবাব তিন সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

আজ  সকালে  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় আসামী পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন চলছিল। এর এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন মিজান সাহেব আমরা আপনার কাছ থেকে দশ মিনিট সময় নিতে চাই একটি অর্ডার পাসের জন্য। বিচারপতি নিজামুল হক বেঞ্চ অফিসারকে ডেকে  অর্ডার ডিকটেট করতে থাকেন।   আদেশের সময়  বিষয়টির ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথে ট্রাইব্যুনালে পিনপতন নিরবতা  নেমে আসে।  উপস্থিত  সাংবাদিকরাও বিষয়টি তখনই অবহিত হন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আদেশ পাশের সময় ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।

আদেশ : 
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আদেশ ঘোষনা করে বলেন, এই  ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং অপর দুই সদস্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর চেয়ারম্যান এবং অপর দুই সদস্য নিয়োগের পর তারা   ওপেন কোর্টে বলেছেন যে, ইন্ট্রারন্যানশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ তাদের কাছে একটি নতুন আইন। আইনটি বোঝার জন্য  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আসামী পক্ষের আইনজীবী এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহনের পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের  বিচার প্রকৃয়া, আদেশ এবং সেগুলো পরীক্ষা  নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। দেশে এবং বিদেশে গবেষকদের কাছ থেকে তারা সহায়তা নিতে পারেন এবং এভাবে   ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রকৃয়া চলছিল।

আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের সুযোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন এবং আরো  কয়েকজন বাংলাদেশী যারা ব্রাসেলসহ অন্যান্য  জায়গায় বাস করেন তাদের সহায়তা গ্রহনের । বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের উন্নয়ন বিষয়ে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে চেয়ারম্যানের প্রায়ই আলোচনা হত এবং তার কাছ থেকে  চেয়ারম্যান এ বিষয়ে সহায়তা গ্রহণ করেছেন। এই বিচার প্রকৃয়া চলাকালে এবং বিভিন্ন আদেশের  সময় চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে সহায়তা নিয়েছেন। এ উপলক্ষে তাদের দুজনের মধ্যে স্কাইপির মাধ্যমে কথপোকথন হয়েছে।

আদেশে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, দুই বা তিনদিন আগে চেয়ারম্যানের ইমেইল, স্কাইপি  একাউন্টস এবং কম্পিউটার  হ্যাক হয়। গতকাল (বুধবার) রাত দশটায় ৯১৯৮১০০১৬৬২ নম্বর থেকে চেয়ারম্যানের কাছে ফোন আসে। ফোন নম্বরটি  লন্ডনভিত্তিক ইকনোমিস্ট  ম্যাগাজিনের। ফোন করে চেয়ারম্যানকে বলা হয় চেয়ারম্যান ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সাথে যেসব কথাবার্তা বলেছেন তা তাদের কাছে আছে। এবং এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে   কিছু প্রশ্ন করা হয়। ফোনে তিনি  আরো জানান  যে, চেয়ারম্যান নিয়মতি ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে কথা বলেন এবং তার কাছ থেকে  উপদেশ  গ্রহণ করেন।  তিনি জানান, চেয়ারম্যান ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের কাছ থেকে ইমেইলের মাধ্যমে যেসব জিনিস গ্রহণ করেছেন তার সবকিছুই তাদের কাছে রয়েছে। এভাবে চেয়ারম্যান এ উদ্বেগজনক বিষয়টি জানতে পারেন।

আদেশে বলা হয়, ইমেইল, স্কাইপি, কম্পিউটার হ্যাক করা, চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করা   ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন এবং  বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতিকে প্রভাবিত করার শামিল। টেলিফোনে চেয়ারম্যানের সাথে যিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি  নিজেকে চেয়ারম্যানের সাথে কথপোকথনে লিপ্ত করেছেন এবং আইন অনুযায়ী তিনি এটি পারেননা। চেয়্যাারম্যান আরো জানতে পেরেছেন যে, ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের ইমেইল, স্কাইপি এবং কম্পিউটারও হ্যাক হয়েছে। এতে এটি পরিষ্কার যে, যারা এ  ট্রাইব্যুনালের চলমান  বিচার কার্যক্রমকে ব্যহত করার কাজে লিপ্ত তারা এর সাথে জড়িত । এটা কোনমতেই  মেনে নেয়া যায়না। কাজেই  ইকনোমিস্টের  সাউথ এশিয়া ব্যুরো চিফ এ্যাডাম রবার্টস এবং ইকনোমিস্টের চিফ এডিটর রব গিফর্ডের প্রতি আমরা নোটিশ জারি করছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ১১(৪) ধারা মোতাবেক কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রকৃয়া শুরু করা হবেনা  সে মর্মে তিন সপ্তাহের মধ্যে  জবাব দিতে হবে। তারা  ইমেইল, স্কাইপি একাউন্টস এবং  চেয়ারম্যানের কম্পিউটর  থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাও গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হল। এটি প্রকাশ করলে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবে এবং চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত পোগনীয়তা রক্ষা করা দরকার। তারা যদি এটি ভঙ্গ  এসব প্রকাশ  করে তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য আদেশের কপি ইনেসপেক্টর  জেনারেল অব পুলিশ এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর নিদের্শ  দেয়া হয় হয়েছে।
(স্কাইপি : ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে দুজনের কথপোকথন যেখানে পরস্পরের ছবি দেখারও ব্যবস্থা থাকে। ) 

স্কাইপি সংলাপ বিষয়ে ইকনোমিস্টের রিপোর্ট প্রকাশ// বিচার কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন



মেহেদী হাসান, ১৩/১২/২০১২
যে স্কাইপি সংলাপ নিয়ে বর্তমানে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে তা সর্বপ্রথম পাবার দাবি করে লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দি ইকনোমিস্ট।

ইকনোমিস্ট তাদের চলতি অনলাইন সংস্করনে  স্কাইপি সংলাপ পর্যালোচনা করে একটি  দীর্ঘ বিশ্লেষনমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর প্রিন্ট এডিশনে এটি প্রকাশিত হবে। ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও  বেলজিয়াম প্রবাসী ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার স্কাইপি সংলাপ, ইমেইল  বিশ্লেষন করে  ইকনোমিস্ট তাদের প্রতিবেদনে  মন্তব্য করেছে এই বলে যে,  ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম সম্পূর্ণ পুনর্বিচার প্রয়োজন  হতে পারে । বাংলাদেশ সরকারের উচিত এটি বিশদভাবে তদন্ত   করে দেখা। বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের প্রেক্ষিতে এটি এখন অধিকতর জরুরি হয়ে পড়েছে। যেসব তথ্য প্রমান  উদ্ধার হয়েছে তাতে বিচারের উপযুক্ত প্রকৃয়া নিয়ে আইনগত প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমে কিভাবে সরকার এবং বাইরের মহলের প্রভাব  বিস্তার করেছে এবং এর ফলে এ বিচারের  নিরপেক্ষতা কোন পর্যায়ে পৌছেছে  তা  দফা অনুসারে বিশ্লেষন করে দেখিয়েছে ইকনোমিস্ট। 

বিচারপতি নিজামুল হকের কাছে গত ৫ ডিসেম্বর  রাতে ফোন করে ইকনোমিস্ট কর্তৃপক্ষ  জানায় তাদের কাছে  স্কাইপি সংলাপ এবং  ২৩০টি ইমেইল ডকুমেন্ট রয়েছে।  পরের দিন ৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১  এ গোপন ডকুমেন্ট প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইকনোমিস্টের প্রতি রুল জারি করে। ৮ ডিসেম্বর ইকনোমিস্ট এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত  রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায় তারা  বিষয়টি তদন্ত করছে। যদি বিষয়টি বৃহত্তর জনগনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে তারা এটি প্রকাশ করবে। সে আলোকে ইকনোমিস্ট চলতি সংখ্যায় এ বিষয়ে তারা তাদের বিশ্লেষনমূলক  রিপোর্ট প্রকাশ করল। রিপোর্টটির শিরোনাম ‘দি ট্রায়াল অব দি বার্থ অব এ নেশন’।

ইকনোমিস্টের প্রতি  নিষেধাজ্ঞা  আরোপ করে ট্রাইব্যুনালের  রুল জারির পর অনেকে  অপেক্ষা করছিল ইকনোমিস্টের পদক্ষেপ বিষয়ে। তারা এ রিপোর্ট আদৌ প্রকাশ করে কি-না এবং করলে কতটুকু কিভাবে করবে তা নিয়ে।  তবে বাংলাদেশে দৈনিক আমার দেশ গত ৯ ডিসেম্বর থেকে স্কাইপি সংলাপ হুহবু প্রকাশ করে সারা দেশে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। 

৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল -১ যখন ইকনোমিস্টের ওপর রুল জারি করে আদেশ দেন তখনই স্কাইপি সংলাপ হ্যাক হওয়ার বিষয়টি গোটা জাতি এবং বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ হয়  ।  স্বয়ং  ট্রাইব্যুনাল সর্বপ্রথমন বিষয়টি সবার  সামনে উন্মুক্ত করেছেন  জাতির সামনে।
কোর্টের সে আদেশ থেকে জানা যায় বিচারপতি নিজামুল হক ব্রাসেলসে বসবাস রত ড. আহমেদর জিয়া উদ্দিনের কাছে বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয়, আদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করেছেন স্কাইপির মাধ্যমে। সে স্কাইপি সংলাপ এবং তাদের দুজনের মধ্যকার আদান প্রদানকৃত সমস্ত ইমেইল হ্যাক বা আক্রান্ত হয়েছে। ইকনোমিস্টের কাছে সেসব রয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।

ইকনোমিস্ট লিখেছে ২৮ আগহস্ট থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত  ১৭ ঘন্টার কথোপকথন হয়েছে দুজনের মধ্যে। দৈনিক গড়ে ২০ মিনিট। বিচারপতি নিজামুল হক এবং ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের আদান প্রদান করা ইমেইল এবং টেলিফোনে কথোপকথনের  যতটুকু আমরা এখন পর্যন্ত পর্যালোচনা করেছি তাতে এ বিচার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন  রয়েছে। এসব বিষয় থেকে এটা স্পষ্ট যে সরকার  জনাব নিজামুল হকের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।   
ইকনোমিস্ট বলেছে প্রাপ্ত তথ্য থেকে তিনটি বিষয় পরিস্কার যেমন রাষ্ট্রপক্ষ কিভাবে  কেস সাজাবে এবং কোর্ট কিভাবে চার্জ গঠন করবে সে বিষয়ে জিয়া উদ্দিনের প্রভাব ছিল। সর্বশেষ হল সাঈদীর মামলা বিষয়ে ‘সাঈদী জাজমেন্ট’   নামে একটি ডকুমেন্ট আহমেদ জিয়াউদ্দিন নিজামুল হকের কাছে পাঠিয়েছেন। ১৪ অক্টোবর এটি সর্বশেষ এডিট করা হয়েছে বলে  উল্লেখ করা হয়েছে ইমেইলে।  এ ডকুমেন্টের চূড়ান্ত হেডলাইন ছিল ‘কনভিকশন/বেসিস’  বা  দণ্ডাদেশ এবং ‘সেনটেন্সিং’  বা শাস্তি।

ইকনোমিস্ট বলছে  অথচ তখনো মাওলানা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে মাওলানা সাঈদীর  বিরুদ্ধে মামলায়   আসামী পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহনের আগেই নিজামুল হক তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে রায় দেয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।

আরেকটি উদাহরন পেশ করে ইকনোমিস্ট লিখছে  মে মাসে  আহমেদ জিয়াউদ্দিন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে  একটি  ফাইনাল ড্রাফট তৈরি করে পঠিয়েছেন নিজামুল হকের কাছে।  এর ছয় দিন পর ১৩ মে  নিজামুল হক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  চার্জ গঠনের যে আদেশ দিয়েছেন তা ওই ড্রাফটেরই   হুবহু  একটি ভার্সন ছিল মাত্র।
 
ইকনোমিস্ট মন্তব্য করেছে এই বলে যে, এটা অতিশয়  গুরুতর একটি উদ্বেগের বিষয় । কারণ এতে  যে শুধুমাত্র   ন্যায় বিচার নস্যাত হওয়া ঝুকি রয়েছে এবং কোন  ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে তা নয় বরং  ত্রুটিপূর্ণ এ বিচার বাংলাদেশকে আরো অনেক ভোগান্তির মধ্যে  টেনে নেবে। ইতোমধ্যে এ  ভুলের কারনে বাংলাদেশ অনেক ভোগান্তির শীকার হয়েছে  এবং এভাবে এগিয়ে গেলে তা বাংলাদেশের ক্ষত সারাবেনা বরং আরো  বৃদ্ধি করবে।



ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগ


মেহেদী হাসান, ১১/১২/২০১৩
স্কাইপ  কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে অবশেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম পদত্যাগ করেছেন। আজ  বিকালে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তিনি পদত্যাগপত্র জমা  দেন। আইন সচিব শেখ মো: জহিরুল হক তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক  মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিচারপতি  নাসিমের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে  জানান, শিগগিরই ট্রাইব্যুনালে (১) নতুন  একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যনালের চেয়ারম্যান  পদত্যাগ করলেও এর কার্যক্রম পরিচালনা  নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। কারণ দুটি ট্রাইব্যুনালের  কার্যক্রমের সাথে জড়িত বিচারক ও প্রসিকিউশনের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে স্কাইপিতে এমন কিছু সংলাপ রয়েছে যা আইন ও সংবিধান বিরোধী ।

আজ সকালে ট্রাইব্যুনাল-১ বসার কথা থাকলেও বসেনি। সোয়া দুইটার দিকে  চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের  অনুপস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল বসে।    এরপর বিকালে তার পদত্যাগের খবর আসে। 

এর আগে  গত ২৮ আগস্ট এই ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্য বিচারক জহির আহমেদকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এখন তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে দুইজন সদস্য থাকলেন যারা বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার অনেক পরে  ট্রাইব্যুনালে যোগদান করেন।

ট্রাইব্যুনালের বিচার বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হক বেলজিয়ামে অবস্থানরত ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে   স্কাইপ সংলাপ  বা ভিডিও কথোপকথন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। ইমেইলেও বিচারের  বিভিন্ন বিষয় আদান প্রদান করেছেন।  তার সকল ভিডিও কথোপকথনের রেকর্ড এবং ইমেইল ডকুমেন্ট বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকনোমিস্টের কাছে চলে যায়।  দৈনিক আমার দেশও একটি বিদেশী সূত্র থেকে এ  সংলাপ ও ডকুমেন্ট পাওয়ার কথা জানায়। এরপর   বিচারপতি নিজামুল হকের  দীর্ঘ স্কাইপ সংলাপ গত রোববার থেকে ধারাবাহিকভাবে  প্রকাশ করা শুরু করে   আমার দেশ।   এ নিয়ে দেশে বিদেশে তুমুল ঝড়  ওঠে।    বিচারপতি নিজামুল হকের কথোপোকথনের বিষয়বস্তু পড়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা জাতি। বিশিষ্ট আইনজ্ঞরা একে  দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একজন বিচারপতির জন্য এর চেয়ে খারাপ কোন অসদাচরন আর  হতে পারেনা বলেও  মন্তব্য করেন তারা।

বিচারপতি নিজামুল হক ড. আহমেদ জিয়া উদ্দিনের সাথে যেসব কথাবর্তা বলেছেন তার মধ্যে  রয়েছে  অভিযুক্তদের  মামলার শুনানী কখন হবে, কোন মামলার রায় আগে হবে, কোনটার  রায় পরে  হবে, কোন ট্রাইব্যুনালে কোন মামলায় কতজন সাক্ষী আসামী পক্ষকে আনতে দেয়া হবে, রায়ের কাঠামো কি হবে,  অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় সাক্ষী  সুলতানা কামাল, মুনতাসির মামুন এবং জেনারেল কে এম শফিউল্লাহকে দিয়ে কোন কোন বিষয় কিভাবে বলানো হবে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।  বিচারের রায়ের কাঠামো কি হবে সে বিষয়ে  বেলজিয়াম থেকে আহমেদ  জিয়া উদ্দিনের মাধ্যমে লিখিয়ে আনা বিষয়ে  তথ্য আদান প্রদান হয়।  পুরো বিচার প্রকৃয়া নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সাথে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের  গোপন যোগসাজস, আইনমন্ত্রী, আইন প্রতিমন্ত্রীর সাথে যোগসাজসসহ বিচার  কার্যক্রমের সাথে যে  বাইরের আরো  বিভিন্ন মহলের প্রভাবে  এবং ইশারা ইঙ্গিতে চলেছে  তা জানা যায় এ সংলাপ ফাঁস হওয়ার  মাধ্যমে।  বিশেষ করে সুদুর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থানরত ড, আহমেদ জিয়াউদ্দিনই যে এ বিচারের বিভিন্ন গতি প্রকৃতি নির্ধারন  করে দিচ্ছিলেন তা স্পষ্ট হয়েছে। ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন  এ বিচার প্রকৃয়ার গতি প্রকৃতি নির্ধারনের জন্য  কোন কোন ব্যক্তি এবং মহলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন তাও  স্পষ্ট হয়ে যায়।    এ কারনে দেশের আইনজ্ঞ মহল থেকে বলা হয়েছে এ বিচার যে একটি সাজানো নাটক এবং প্রহসন ছিল তা প্রমানিত হয়েছে।

বিচারপতি নিজামুল   হকের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে  ড. জিয়াউদ্দিন কোন ট্রাইব্যুনালের কোন মামলা  এগিয়ে আনতে হবে, কোনটি পিছিয়ে দিতে হবে সেজন্য দুই ট্রাইব্যুনালের সব বিচারপতিদের আইনমন্ত্রীর বাসায় তিনি বসার ব্যবস্থা করবেন  বলে স্কাইপির মাধ্যমে আলাপকালে জানান বিচারপতি নিজামুল হককে।

বিচারপতি নিজামুল হক আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন, “গভর্নমেন্ট রায়ের জন্য পাগল হইয়া গেছে। সাঈদীরটা হলে ডিসেম্বরের মধ্যে রায় দেতে পারবো। গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া। তারা একটা রায় চায়।  সাঈদীর রায়ডা হইয়া গেলে গভর্নমেন্ট ঠাণ্ডা হইত।..আমাদের তো স্টেট মিনিস্টার (কামরুল ইসলাম) যাচ্ছে হজে। আজকে আসছিল আমার লগে দেখা করতে সন্ধ্যায়। ওনি বললেন যে রায়টা তাড়াতাড়ি দেবেন। ”

৬ সেপ্টেম্বরের কথোপকথনে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বলেন, ‘সিনহা বাবু কইছে-ডিসম্বরের মধ্যে তিনডা দিয়া লন, তারপর আমরা আপনারে এহানে নিয়া আসি।’
চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর ড. আহমদ জিয়াউদ্দিনের কাছে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম জানতে চান, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চার্জের  কপিটা আছে কি না। তিনি এ-ও বলেন, ‘থাকতেই হবে, থাকতেই হবে। তো, এই জিনিসগুলোর রিপলাইডা আপনি যদি একটু ইয়ে করে দেন আমাকে। তাইলে আমি জাজমেন্টর জন্য একটু রেডি হইতে পারি।’
একই দিনের স্কাইপি কথোপকথনে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম  বলেন, ‘জাজমেন্টের কাজ তো শুরু করছি আমি, অন্য কাজ ফেলাইয়া টাইপ শুরু করছি আমি।’ তখন তাকে আহমদ জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘আপনি ওই জায়গাটাকে, আপনি করেন কি যে... এ জায়গাটিতে একটু গ্যাপ রাখেন। কারণ এখনও লিগ্যাল আরগুমেন্ট কিন্তু তারা প্লেস করে নাই।’  এ থেকে বোঝা যায়  আরগুমেন্ট শুরুর আগেই বিচারপতি নিজামুল হক  রায় লেখার কাজ শুরু করে দেন এবং রায়ের কিছু বিষয় লিখে পাঠানোর জন্য ড. আহমদ জিয়াউদ্দিনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। 

নিজামুল হক নাসিম  নাসিম সংলাপের সময় বলেন, “এই গোলাম আযম হইলো টিম লিডার। সাঈদী সাইড ট্র্যাক। সাঈদীর লগে আপনার লিডার-টিডারশিপের কোনো প্রশ্ন আসতেছে না। গোলম আযমের রায়ের পরে আপনার নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান—সবগুলা রায় হইতে পারে, এর পরে। কিন্তু গোলাম আযম ফাস্টে। ওই গ্রুপের থেকে একমাত্র সাঈদী, সাকা এরা বায়রায় (বাইরে)। সাকারে তো আমি থামাইয়াই দিছি। সাঈদীরে থামাচ্ছি না। কারণ, সাঈদী প্রায় শেষ। এইটা যদি উনাদেরকে বইল্লা... এইডা ওনাদেরকে (ট্রাইব্যুনাল-২) হায়ার লেভেল থেইকা বইল্লা, থামায়া দিতে হবে যে, আপনি কাদের মোল্লারে ঢিল দেন। ঢিল দিয়া বাকিগুলারে সামনে আগান। কেননা, ওই যে অ্যাবসেন্ট যে আছে, ওর নাম জানি কী...? ও বাচ্চু, হ্যারে দিয়া শুরু করেন। আরেকজনরে নিয়া আগান সামনে। এরপর আপনার, পর পর ৩-৪টা রায় দিয়া দেন, অসুবিধা নাই কোনো। বাট আফটার গোলাম আযম। নট বিফোর দ্যাট।”


বিচারপতি জহির আহমেদকে পদত্যাগে বাধ্য করার পর নতুন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। এ বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ড. জিয়াউদ্দিনের সাথে।  বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের  বিষয়ে তিনি বলেন,  “তাকে বলে দেয়া হয়েছে চেয়ারম্যান যা বলবে তুমি তাতে শুধু ইয়স বলবা।  তুমি যা বলবা রুমে বলবা, কোর্টে চেয়ারম্যান যা বলবে তাতে ওকে বলবা”
এছাড়া বিচারপতি নিজামুল   হক ট্রাইব্যুনালের নতুন সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে সোনা জাহাঙ্গীর, দুর্নীতি পরায়ন বলেছেন। আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে কামরুল টামরুল, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে খাতুন টাতুন সহ আরো  বিভিন্ন ব্যক্তিকে চোরসহ বিভিন্নভাবে ব্যাঙ্গ করে কথা বলেছেন। তাদেরকে আওয়ামী বলে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করেছেন। (বিচারপতি নিজামুল হক ছাত্র জীবনে জাসদ ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন)।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হকের বিষয়ে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন আমরা দুইজন শক্ত আছি।
এসব আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে  ট্রাইব্যুনালে তিনজন সদস্য থাকলেও মূলত বিচারপতি নিজামুল হকের একক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হত। এবং তার সিদ্ধান্ত গ্রহনের পেছনে বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তি, মহলের প্রভাব ছিল।

বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম আলোচনার এক পর্যায়ে  বলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুমকে শুধু লাফায়। আমি তাকে বসিয়ে দিয়েছি। পরে তাকে রুমে ডাকাই। মালুম বলে এটাই ঠিক আছে। আমি শুধু দাড়িয়ে যাব আপনি আমাকে বসিয়ে দেবেন। লোকে দেখবে আমাদের মধ্যে কোন খাতির নেই।

ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি জহির আহমেদকে সচিবালয়ে ডেকে  আইনমন্ত্রলয় পদত্যাগে বাধ্য করেছিল সে বিষয়টিও উল্লেখ আছে বিচারপতি নিজামুল হকের সংলাপে।   এ সংলাপ থেকে জানা যায় বিচারক জহির আহমেদকে আইনমন্ত্রীর বাসায় ডেকে প্রথমে পদত্যাগ করতে বলা হয়।  এরপর সচিবালয়ে ডেকে পদত্যাগে স্বাক্ষর রাখা হয়।

স্কাইপি সংলাপের কথা স্বীকার করে বিচারপতি নিজামুল হক গত ৬ ডিসেম্বর ইকনোমিস্টের বিরুদ্ধে একটি রুল জারি করেন । ইকনোমিস্ট  যাতে তার গোপন সংলাপ ফাঁস না করে সেজন্য তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া  হয়। এ রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার পর থেকে  গতকাল পর্যন্ত আসামী  পক্ষের আইনজীবীরা  ট্রাইব্যুনাল-১ এ যায়নি। 
গত রোববার থেকে দৈনিক আমার দেশ সে সংলাপ ফাঁস করতে থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয় ওই রিপোর্ট বন্ধ করে  দেয়ার জন্য।  গতকাল আমার দেশ বিষয়ে আদেশ দেয়ার কথা থাকলেও ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান আসেননি।
এরপর থেকেই ট্রাইব্যুনালে আসা সাংবাদিকরা বলাবলি করতে থাকেন তিনি হয়ত আর আসবেননা এবং সেটাই  সত্য  হল শেষ পর্যন্ত।
২০১০ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়। এ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে জামায়াতের সাবেক  আমীর অধ্যাপক গোলাম  আযম, আমীর মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধরীসহ আরো কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একমাত্র মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার কার্যক্রম শেষ হয়েছে।


বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি  (ঘাদানিক)  গঠিত  জাতীয়  গণতদন্ত কমিশিনের সেক্রেটারিয়েট এর সদস্য ছিলেন। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে   বন্দী  অধিকাংশ নেতাসহ  মোট ১৬ জন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য  এ কমিশন গঠন করা হয়েছিল।

বিচারপতি নিজামুল হক  নাসিম  ১৯৯২ সালে জাহানারা    ইমামের নেতৃত্বে পরিচালিত  গনআদালতের মাধ্যমে  অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রদত্ত প্রতিকী  রায় বাস্তাবায়নের দাবিতে তখন সমাবেশে  অংশ নিয়েছিলেন।  এ বিষয়ে সকল প্রমান হাজির করে আসামী পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি করা হয়  ২০১১ সালের মাঝামাঝি থেকে।  এ নিয়ে দীর্ঘ আইনী লড়াই  চলে। দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরাও তার প্রতি  পদত্যাগের দাবি জানান। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বারের পক্ষ থেকেও  সম্মিলিতভাবে আইনজীবী মহল তার পদত্যাগ দাবি করেন ন্যায় বিচারের স্বার্থে।  তার পদত্যাগের দাবিদে  ট্রাইব্যুনাল বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি।

ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন আইনী বিষয় নিয়ে আসামী পক্ষ থেকে একের পর এক বানের মত দরখাস্ত আসতে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু সমস্ত চাপ উপেক্ষা করে তিনি শক্ত হাতে পরিচালনা করতে থাকেন ট্রাইব্যুনাল। বাতিল করেন আসামী পক্ষের অসংখ্য আবেদন।  অবশেষে কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে সরে যেতে হল বিচারপতি নিজামুল হককে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী গ্রহণ শেষে জেরা শুরু


২৬/৯/২০১৩
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দী গ্রহণ শেষে আজ জেরা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ।

২৬/৯/২০১৩ তারিখ দ্বিতীয় দিনের মত পুনরায়  জবানবন্দী গ্রহণ :
০৩-০৩-২০১১ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান কর্তৃক কুষ্টিয়া জেলা বিশেষ শাখা হইতে জব্দকৃত ফোর্টনাইটলি রিপোর্ট অন পলিটিকেল সিচিউশন এপ্রিল ১৯৭১ টু নভেম্বর ১৯৭১ জব্দ করিলে তাহা অত্র মামলায় ১৬-০৩-২০১১ইং তারিখে জব্দতালিকা হিসাবে গ্রহন করি যাহা জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমানপত্র এর ৯ম খন্ডের ২৬৩৭-২৬৪১ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে। এই সেই জব্দতালিকা যাহা প্রদর্শনী-১৭ হিসাবে চিহ্নিত হইল। আমি মোঃ মতিউর রহমান তদন্তকারী কর্মকর্তার দস্তখত চিনি। জব্দনামায় এই তার দস্তখত প্রদর্শনী-১৭/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। উক্ত জব্দনামায় উল্লেখিত ০১ হইতে ১৬ নম্বর আইটেমের দলিল পত্রাদি উক্ত ৯ম খন্ডের ২৬৫০ পৃষ্ঠা হইতে ২৭৯৮ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে। যাহা প্রদর্শনী- ১৮-১৮/১৫ সিরিজ হিসাবে চিহ্নিত হইল। উক্ত জব্দনামায় উল্লেখিত ৫,৯ ও ১২ নং ক্রমিকে মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি হিসাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মী রাজাকারদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে।
০৮-০৫-১৯৭১ইং তারিখে সাথিয়া থানার করমজা গ্রামে পাকিস্তানী দখলদার হানাদার বাহিনী ও তার সহযোগীদের হাতে মেগা ঠাকুরসহ ০৮ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাহাদের মৃত দেহ মেগা ঠাকুরের বাড়ির আঙ্গিনায় কুপের ভিতর মাটি চাপা দেওয়া হয়। ০৭-১২-২০০০ইং তারিখে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাঈদ সাহেব, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উক্ত কূপটি খুড়িয়ে আট জন নিহত ব্যক্তির কংকাল উদ্ধার করিয়া সাথিয়া থানার মালখানায় সংরক্ষিত রাখা হয়। ০৯-০৩-২০১১ইং তারিখে আমি সাথিয়া থানার মালখানা হইতে উক্ত কংকাল গুলির হাড়গোড় জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দতালিকা প্রদর্শনী-১৯ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী-১৯/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। জব্দকৃত হাড়গোড় গুলি সাথিয়া থানার মালখানা অফিসার এসআই রেজাউল করিম এর নিকট জিম্মনামা মূলে জিম্মায় প্রদান করি। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-২০ এবং উহাতে এসআই রেজাউল করিমের দস্তখত প্রদর্শনী-২০/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল।
১৫-০৩-২০১১ইং তারিখে আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান সাহেব বাংলা একাডেমী থেকে দৈনিক অবজারভার প্রতিকার বিভিন্ন তারিখে মোট ৩০টি পেপার কাটিং-এর সত্যায়িত ফটোকপি জব্দনামা মূলে জব্দ করেন। এই সেই জব্দনামা প্রদর্শনী-২১ এবং উহাতে মোঃ মতিউর রহমান সাহেবের দস্তখত প্রদর্শনী-২১/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল (৮ম খন্ডের ২৫৫৯-২৫৬১ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে)। এই সেই জব্দকৃত ৩০টি পেপার কিপিং যাহা প্রদর্শনী-২২-২২/২৯ হিসাবে চিহ্নিত হইল (যাহা ৮ম খেন্ডর ২৫৬২ পৃষ্ঠা থেকে ২৬০০ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে)।
২৪-০৩-২০১১ইং তারিখে আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান সাহেব বাংলা একাডেমী থেকে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার বিভিন্ন তারিখে মোট ২৫টি পেপার কিপিং-এর সত্যায়িত ফটোকপি জব্দনামা মূলে জব্দ মূলে জব্দ করেন। এই সেই জব্দনামা প্রদর্শনী-২৩ এবং উহাতে মোঃ মতিউর রহমান সাহেবের দস্তখত প্রদর্শনী-২৩/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল (৮ম খন্ডের ২৬০১-২৬০৩ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে। এই সেই জব্দকৃত ২৫টি পেপার কিপিং যাহা প্রদর্শনী-২-২৪/২৪ হিসাবে চিহ্নিত হইল (যাহা ৮ম খন্ডের ২৬০৪ থেকে ২৬৩৭ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে)।
২৯-০৫-২০১১ইং তারিখে আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা জেড এম আলতাফুর রহমান বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট থেকে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার বিভিন্ন তারিখে মোট ১০টি পেপার কিপিং-এর সত্যায়িত ফটোকপি জব্দনামা মূলে জব্দ করেন। এই সেই জিম্মানামা প্রদর্শনী-২৫ এবং উহাতে জেড এম আলতাফুর রহমান সাহেবের দস্তখত প্রদর্শনী-২৫/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল (৯ম খন্ডের ২৯২৮ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে)। জব্দকৃত ১০টি পেপার কিপিং-এর মধ্যে ০১-১১-২০০৭ইং তারিখের ভোরের কাগজ পত্রিকার পেপার কিপিং যাহা প্রদর্শনী- ২৬ হিসাবে চিহ্নিত হইল (যাহা ৯ম খন্ডের ২৯৩৬-২৯৩৭ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে)।
০৯-০৬-২০১১ ইং তারিখে আমি সাগর পাবলিশার্স, ২৬ নাটক স্মরণী, নিউ বেইলী রোড, ঢাকা থেকে ০৮টি বই জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা প্রদর্শনী- ২৭ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী- ২৭/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল (৯ম খন্ডের ২৯৫১-২৯৫২ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে)। সেই জব্দকৃত ০৮টি বইয়ের মধ্যে জব্দনামায় উল্লেখিত ০১ নং ক্রমিকের বই প্রদর্শনী- ২৮, ৪ নং ক্রমিকের বই প্রদর্শনী- ২৮/১, ৬ নং ক্রমিকের বইয়ের বাংলা অনুবাদ প্রদর্শনী- ২৮/২, ৮ নং ক্রমিকের বই প্রদর্শনী- ২৮/৩ হিসাবে চিহ্নিত হইল।
মামলাটি আমি সরেজমিনে তদন্ত করে তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণাদিতে ১৯৭১ সালের জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সমগ্র পাকিস্তানের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান তথা এস সুপিরিয়র সিভিলয়ান লিডার আসামী মতিউর রহমান নিজামী, পিতা- মৃত- লুৎফর রহমান, সাং- মনমথপুর, থানা- সাথিয়া, জেলা- পাবনা বর্তমান ঠিকানা বাড়ি নং- ৬০, রোড নং- ১৮, বনানী, থানা- গুলশান, ঢাকা এর বিরুদ্ধে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ও তাদের অপরাপর সহযোগী বাহিনীর দ্বারা বিশেষত শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী দ্বারা পাবনা জেলাসহ সারা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ এর ৩ (২) ধারার অধিনে মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা- বেসামরিক জনসমষ্টির বিরুদ্ধে নরহত্যা, গণহত্যা, বিতাড়ন, আটক, শারীরিক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তি সমষ্টিকে সম্পূর্ণ বা আংশিক হত্যা করিয়া উল্লেখিত আইনের ৩(২) ধারার (ধ) (প) (ম) মোতাবেক মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকিয়া প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মাননীয় ট্রাইব্যুনালের বিচারের উদ্দেশ্যে ৩০-১০-২০১১ ইং তারিখে বিজ্ঞ চীফ প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করি।
৩০-১০-২০১১ ইং তারিখে অত্র মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর আসামী মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সাক্ষ্য সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রাখি। অতিরিক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহকালে আমি বিগত ২৬-০৮-২০১২ ইং তারিখে সাগর পাবলিশার্স, ২৬ নাটক স্মরণী, বেইলী রোড, ঢাকা থেকে জব্দ নামা মূলে শাহরিয়ার কবীর কর্তৃক লিখিত ‘বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা’ নামক বইটি জব্দ করি। এই সেই জব্দনামা প্রদর্শনী- ২৯ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী- ২৯/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই জব্দকৃত বই প্রদর্শনী- ৩০ হিসাবে চিহ্নিত হইল।

আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মূসা খান জালাজাই কর্তৃক লিখিত
Sectarianism and Politico- Religious Terrorism in Pakistan’ নামক বইটি সংগ্রহ করি। এই সেই বই প্রদর্শনী- ৩১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। (চলবে)

২৬-০৯-২০১৩ ইং ০২.০০ টায় পুনরায় জবানবন্দী শুরুঃ
২৮-০৫-২০১৩ ইং তারিখে সাগর পাবলিশার্স, ২৬ নাটক স্মরণী, বেইলী রোড, ঢাকা থেকে মোঃ জহরুল ইসলাম বিশু কর্তৃক লিখিত ‘পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের কথা’ নামক বইটি জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দতালিকা প্রদর্শনী- ৩২ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী- ৩২/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই বইটি প্রদর্শনী- ৩৩ হিসাবে চিহ্নিত হইল।
১০-০৭-২০১৩ ইং তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে ডঃ আহম্মদ শরীফ গং কর্তৃক সম্পাদিত ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়’ নামক বইটিসহ অপর একটি রিপোর্ট জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দতালিকা প্রদর্শনী- ৩৪ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী- ৩৪/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই বইটি প্রদর্শনী- ৩৫ হিসাবে চিহ্নিত হইল।
২৪-০৭-২০১৩ ইং তারিখে সাগর পাবলিশার্স, ২৬ নাটক স্মরণী, বেইলী রোড, ঢাকা থেকে জাহানারা ইমাম কর্তৃক লিখিত ‘একাত্তরের দিনগুলি’ নামক বইটি জব্দনামা মূলে জব্দ করি। এই সেই জব্দতালিকা প্রদর্শনী- ৩৬ এবং উহাতে আমার দস্তখত প্রদর্শনী- ৩৬/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। এই সেই বইটি প্রদর্শনী- ৩৭ হিসাবে চিহ্নিত হইল।
আমার সহযোগী তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম, ১০-০৩-২০১১ ইং তারিখে সাক্ষী শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী ও ২৫-০৮-২০১২ ইং তারিখে সৈয়দা সালমা মাহমুদ ওরফে হক এর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করেন। আমি ৩০-০৬-২০১২ ইং তারিখে সাক্ষী মোঃ জানে আলম ওরফে জানু, ১৬-০৫-২০১৩ ইং তারিখে সাক্ষী আলহাজ্ব তহুরুল আলম মোল্লা, ১৭-০৫-২০১৩ ইং তারিখে সাক্ষী মোঃ জহুরুল হক, মোঃ ইউনুস আলী বিশ্বাস ও মোঃ আবু সামা ফকির, ১৯-০৫-২০১৩ ইং তারিখে সাক্ষী মোঃ শাহজাহান আলী এর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করি।
আমি ০৬-১১-২০১০ ইং তারিখে সাক্ষী শংকর হালদার ও মোঃ আনছার প্রামাণিক এবং ২৭-০৮-২০১১ ইং তারিখে সাক্ষী সমর চন্দ্র কুন্ডু এর জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করি। উক্ত সাক্ষী শংকর হালদার ২৭-০২-২০১২ ইং তারিখে, মোঃ আনছার আলী প্রামাণিক ২৫-০৫-২০১৩ ইং তারিখে এবং সাক্ষী সমর চন্দ্র কুন্ডু ১৬-০২-২০১২ ইং তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। আমার নিকট সাক্ষী শংকর হালদারের প্রদত্ত জবানবন্দী প্রদর্শনী- ৩৮, সাক্ষী মোঃ আনছার প্রমাণিকের প্রদত্ত জবানবন্দী প্রদর্শনী- ৩৯ এবং সাক্ষী সমর চন্দ্র কুন্ডুর প্রদত্ত জবানবন্দী প্রদর্শনী- ৪০ হিসাবে চিহ্নিত হইল। ইহাই আমার জবানবন্দী।


জেরা- ঃ
এই মামলার আসামী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে ২০১০ সালের ২৯শে জুন রেজাউল হক চাদপুরীর দায়ের করা একটি মামলায় প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছিল কিনা তাহা আমার জানা নাই। এই রেজাউল হক চাদপুরী সাহেব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন কিনা তাহা আমার জানা নাই। পল্লবী থানার মামলা ৬০(১)২০০৮ মামলাটির জুডিশিয়াল রেকর্ড আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রেজিষ্ট্রার মহোদয়ের কার্যালয় থেকে তদন্ত সংস্থায় প্রেরণের পূর্বে অন্য কোন মামলার জুডিশিয়াল রেকর্ড তদন্ত সংস্থায় প্রেরণ করা হয় নাই। উক্ত মামলার সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা হচ্ছেন সিআইডি এর ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী। ঐ মামলায় মতিউর রহমান নিজামী সাহেবকে ৩--০৬-২০১০ইং তারিখে গ্রেফতারের আবেদন জানানো হয়। বিজ্ঞ সিএমএম ঢাকা সি, আর মামলা নং- ১০১২/১০ ধারা ২৯৮/১০৯ দঃবিঃ গ্রেফতারী পরোয়ানা মুলে প্রথমে নিজামী সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তৎপর তাকে পল্লবী থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়।


জাফরুল্লাহ-মাহফুজউল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে তলব


২৬/৯/২০১৩
চ্যানেল-২৪ এর টকশোতে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা বিষয়ে মন্তব্যের ব্যাখা দিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে তলব করা হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মন্তব্যের বিষয়ে ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে।

আজ  বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল-১ এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে আদালত অবমাননার অভিযোগে চ্যানেল-২৪ সহ আটজন বিবাদীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে ওই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে চ্যানেল-২৪ এর মুক্তবাক অনুষ্ঠানের ওই পর্ব যেন আর পুন:প্রচারিত না হয় তা নিশ্চিত করতে চ্যানেল কর্তৃপকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অভিযোগ করা হয়- ১৯৭৩ এর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব–্যনাল আইন ১১(৪) ধারা অনুযায়ী তারা চার ধরনের আদালত অবমাননা করেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করা, বিচারাধীন বিষয়ে না জেনে অযাচিত মন্তব্য করা, বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা এবং ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি ুণœ করে এমন মন্তব্যসম্বলিত অনুষ্ঠান প্রচারে সহযোগিতা করার অভিযোগে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।

গত মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে চ্যানেল-২৪ কর্তৃপ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করে রাষ্ট্রপ। গত বুধবার ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করে আজ  বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করেন। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন।

ট্রাইব্যুনাল নোটিশ জারির  আদেশে বলেছেন,

"They deliberately criticized the trial process, without knowing the facts made false statement on a sub judice matter. Dr Zafrullah Chowdhury and Mahfuz Ullah deliberately tried to make the trial process questionable, and all the accused facilitated and contributed in broadcasting the said programme with the intent of lowering the image and dignity of the tribunal,"
ট্রাইব্যুনালের আদেশের পরে জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আদেশে চ্যানেল-২৪ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী পরিচালক, হেড অব প্রগ্রাম, টিভি চ্যানেলটির মুক্তবাক অনুষ্ঠানের প্রডিউসার, অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মাহমুদুর রহমান মান্না ও দুই আলোচকের  বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি করেছেন।


গত ১৮ সেপ্টেম্বর চ্যানেল-২৪ এর টকশো অনুষ্ঠান ‘মুক্তবাক’ অংশ নেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মনে প্রাণে ঘৃণা করি আমি। এই লোক দাবি করেছেন, তিনি (মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে) ছিলেন না। তিনি হাসনাইন (হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন) নামের এক জজ সাহেবকে সাী মেনেছেন, সেই জজ সাহেব কেন সাী দেন নাই। এটাকে যদি না দেওয়া হয়, তাহলে কি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না?... এই বিচারক কেন সাী দেবেন না?’ এরপর মাহফুজ উল্লাহ বলেন ‘এজন্যই প্রশ্নগুলো বারবার উত্থাপিত হচ্ছে’। এতে আদালতের অবমাননা হয়েছে দাবি করে আবেদনটি দায়ের করে রাষ্ট্রপ। আবেদনে, ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ১১(৪) ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না-জানতে চেয়ে শ্যোকজ, একই সঙ্গে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা করারও আর্জি জানানো হয়।
বুধবার শুনানিতে জেয়াদ আল মালুম বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনালকে মানুষের সামনে হেয় প্রতিপান্ন করার উদ্দেশ্যে চ্যানেল-২৪ এর মুক্তবাক অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল, বিচারপতি ও ট্রাইব্যুনালে রায়ের জন্য অপেক্ষামান মামলা সম্পার্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা হয়েছে। এই অধিকার বাংলাদেশের কোন মানুষের নেই, থাকার কথাও নয়।
২০১২ সালের চার এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুীরর বিচার শুরু হয়। বিচার কার্যক্রম শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেমান রাখা হয়েছে। যে কোন দিন ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় প্রদান করবেন।





দুই বিচারপতির প্রতি অনাস্থা আবেদন খারিজ



২৬/৯/২০১৩, বৃহষ্পতিবার
দুই বিচারপতির প্রতি অনস্থা জানিয়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ সকালে আবেদনটি খারিজ করে  দেয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানীর জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চ থেকে দু’জন বিচারপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য গতকাল বুধবার আবেদন করা  হয়েছিল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষ থেকে। এরা হলেন বিচারপত সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।

আজ সকালে আপিল বেঞ্চ এর বিচার কার্যক্রম শুরু হলে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আবেদনটি উপস্থাপন করেন । তিনি বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষ থেকে যে প্রেক্ষাপটে এ দুজন বিচারপতিকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন করা হয়েছিল সেই একই কারন দেখিয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষ থেকেও আবেদনটি করা হয়েছে।
এরপর পাঁচ বিচারপতি আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন । যে দুজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আবেদন করা হয়েছে সেই দুজন বাদে অপর তিনজন বিচারপতি  একটু পরে আদালত কক্ষে প্রবশে করেন। এরা হলেন প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা  এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিন সদস্যের বিচারপতির সমন্বয়ে বেঞ্চ বসার পর প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে এ আবেদন বিষয়ে যে আদেশ দেয়া হয়েছে এ ক্ষেত্রেও একই আদেশ দেয়া হল। এভাবে মাওলানা সাঈদীর আবেদনটি খারিজ করে দেয়া হয়। 

এরপর তিন সদস্যের বেঞ্চ আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন এবং একটু পরে আবার আপিল শুনানীর জন্য গঠিত  পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ বসে। এরপর মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন বিষয়ে  শুনানী শুরু হয়। আজ তৃতীয় দিনের মত আপিল শুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী রোববার পর্যন্ত শুনানী মুলতবি করা হয়েছে। শুনানীতে মাওলানা সাঈদীর পক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের রায় পড়ে শোনানো হচ্ছে বর্তমানে।

রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু


২৫/৯/২০১৩
জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ২৬ তম সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে আজ।

জবানবন্দী

আমার নাম মোঃ আব্দুর রাজ্জাক খান, আমার বয়স আনুমানিক ৫৯ বৎসর।
আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন এএসপি। আমি অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্মারক নং- স্বঃ মঃ (আইন-২)/তদন্তকারী সংস্থা/১-৫/২০১০/১০১ তারিখ ২৫-০৩-২০১০ইং এর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। সেই মোতাবেক আমি ২৮-০৩-২০১০ইং তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থায় যোগদান করি এবং বর্তমানে কর্মরত আছি। তদন্ত সংস্থায় কর্মরত থাকিয়া মামলার তদন্তের প্রস্তুতিকালে  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পটভূমি সংক্রান্তে বিভিন্ন বই ও পত্রিকার সংশ্লিষ্ট অংশ পাঠ পূর্বক সংগ্রহ করি। ২১-০৭-২০১০ইং তারিখে মাননীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রার মহোদয়ের অফিসের মাধ্যমে পল্লবী থানা (ডিএমপি) মামলা নং- ৬০ তারিখ ২৫-০১-২০০৮ ধারা ১৪৮/৪৪৮/৩০২/৩৪/২০১/৩২৬/৩০৭/৪৩৬ দঃ বিঃ এর জুডিসিয়াল নথি পৃষ্ঠা ০১-৮৮ পর্যন্ত প্রাপ্ত হইয়া তদন্ত সংস্থা ডাইরী নং- ১০১(১) তারিখ ২১-০৭-২০১০ইং মোতাবেক পত্র পাপ্তি রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অতঃপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এর ১৫ জুলাই ২০১০ এর বিধি ০৫ এর বিধান অনুযায়ী তদন্ত সংস্থায় রক্ষিত কমপ্লেইন্ট রেজিষ্ট্রারে ক্রমিক নং- ০১ তারিখ ২১-০৭-২০১০ হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ঐ তারিখে আমাকে তদন্ত সংস্থা থেকে অত্র মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয়। জুডিসিয়াল নথি প্রাপ্তির পর নথিতে থাকা পল্লবী থানার মামলা নং- ০৬(১)২০০৮ এর এজাহার নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করিয়া আসামী ১। মতিউর রহমান নিজামী, ২। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ৩। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ৪। আব্দুল কাদের মোল্লাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস্) আইন, ১৯৭৩ এর ৩(২) ধারার উপাদান বিদ্যমান থাকায় আমি উক্ত আইন ও বিধি মোতাবেক অত্র মামলার তদন্ত কাজ শুরু করি।
২৫-০৭-২০১০ইং তারিখে মাননীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিষ্ট্রার অফিসের স্মারক নং- আন্তঃ অপঃ ট্রাইঃ/৯৮/১০ তারিখ ২২-০৭-২০১০ইং মোতাবেক কেরানীগঞ্জ থানা (ঢাকা) মামলা নং- ৩৪ তারিখ ৩১-১২-২০০৭ ধারা ৪৪৭/৪৪৮/৪৩৬/৩০২/১০৯/১১৪ দঃ বিঃ এর জুডিসিয়াল নথি পৃষ্ঠা ০১-৩০ পর্যন্ত প্রাপ্ত হইয়া তদন্ত সংস্থার ডাইরী নং- ১০৮ তারিখ ২৫-০৭-২০১০ইং মোতাবেক পত্র প্রাপ্তি রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। উক্ত মামলার এজাহার পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এজাহারের ক্রমিক নং-১ এ আসামী মতিউর রহমান নিজামীর নাম উল্লেখ আছে। তদন্তকালে পল্লবী ও কেরানীগঞ্জ থানার এজাহার দুটি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা কালে এবং তদন্তের পূর্ব প্রস্তুতিকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পটভূমি এবং দৈনিক সংগ্রামসহ অন্যান্য পত্রিকা পর্যালোচনা কালে প্রতিভাত হয় যে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ-এর পর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় অত্র মামলার আসামী মতিউর রহমান নিজামী পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি পদে থাকিয়া বিভিন্ন জেলায় গমন করিয়া উষ্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করিয়া শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের মনে ঘৃণা ও প্রতিহিংসার উদ্রেক করাইয়া আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসাবে পাবনা জেলাসহ সমগ্র বাংলাদেশে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতা বিরোধী সকল অপরাধের সহিত সরাসরি জড়িত ছিলেন।
ইতিপূর্বে আসামী মতিউর রহমান নিজামী কেরানীগঞ্জ থানার মামলা নং- ৩৪(১২)২০০৭ এবং পল্লবী থানার মামলা নং- ৬-(১)২০০৮ সংক্রান্তে গ্রেফতার হইয়া জেলখানায় আটক থাকায় তাহার কর্তৃক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) ধারার অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় মামলার সুষ্ঠু ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে ২২-০৭-২০১০ইং তারিখে আসামী ১। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ২। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, ৩। আব্দুল কাদের মোল্লার সহিত ৪। আসামী মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার দেখানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিজ্ঞ চীফ প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা বাংলাদেশ বরাবরে আবেদন করি। তৎপ্রেক্ষিতে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল ০২-০৮-২০১০ইং সংশ্লিষ্ট আসামীগণকে মামলায় গ্রেফতার দেখাইয়া জেল হাজতে আটক রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস্) আইন, ১৯৭৩-এ ৩(২) ধারা মোতাবেক আসামী মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে তাহার অপরাধ সম্পর্কে ০৪-১১-২০১০ইং তারিখে পাবনা ওয়াপদা পাওয়ার হাউজ ও পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া ১। মোঃ হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব, ২। মোঃ শহিদুল্লাহ এবং ৩। জি এস এম এ চিশতীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ০৫-১১-২০১০ইং তারিখে ঈশ্বরদী থানার ভূতের গাড়ি ও আড় পাড়া গ্রাম পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া সাক্ষী ১। মোঃ আব্দুল হক, ২। লালন শেখ, ৩। মোস্তাক মল্লি, ৪। বজলুর রহমান এবং ৫। মোঃ আফজাল মালদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ০৬-১১-২০১০ইং তারিখে সাথিয়া থানার বাউশগাড়ি, ধুলাউড়ি, করমজা গ্রামের বধ্যভূমি এবং সাথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে বাউশগাড়ি, ধুলাউড়ি ও করমজা গ্রামে ১৯৭১ সালে সংগঠিত ঘটনা সম্পর্কে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া সাক্ষী আইনুল হকসহ মোট ১৭ জন সাক্ষীদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি।
২৯-০৩-২০১১ইং তারিখ সাক্ষী মিজবাহুর রহমান চৌধুরীকে তদন্ত সংস্থার অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি এবং ঐ তারিখেই ০১-০৮-১৯৭১ইং তারিখ সিরাজুল ইসলাম মতলিব সভাপতি ইসলামী ছাত্র সংঘ কর্তৃক তাহাকে লিখা চিঠি উপস্থাপন করিলে সাক্ষীদের মোকাবেলায় তাহা জব্দ করিয়া হেফাজতে নেই। অত্র জব্দ তালিকা ১০ম খন্ডে আছে। এই সেই জব্দ তালিকা যাহা প্রদর্শনী- ১৪ এবং উহাতে আমার দস্তখত ১৪/১ হিসাবে চিহ্নিত হইর। ০২-০৬-২০১১ইং তারিখে সাক্ষী ডাঃ রথীন্দ্র নাথ কুন্ডুকে তদন্ত সংস্থার অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ২৭-০৭-২০১১ইং তারিখে মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজ যাহা ১৯৭১ সালে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছিল তাহা পরিদর্শন করি এবং তদন্তকালে সাক্ষী মোঃ রুস্তম আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ১৮-০৮-২০১১ইং তারিখে সাক্ষী জহির উদ্দিন জালালকে সাথে নিয়া নাখালপাড়াস্থ পুরাতন এমপি হোস্টেল পরিদর্শন করি এবং তদন্ত সংস্থার অফিসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ২৬-০৮-২০১১ইং তারিখে পাবনা জেলার বেড়া থানাধীন বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী প্রামানিক, পিতা- মৃত নয়ন উদ্দিন প্রামানিককে হত্যার স্থান পরিদর্শন করি এবং ০২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ২৭-০৮-২০১১ইং তারিখে সাক্ষী সমর চন্দ্র কুন্ডুকে তাহার বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করি। ০৩-০৪-২০১১ইং তারিখে আসামী মতিউর রহমান নিজামীকে মামলার সুষ্ঠু ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে ০৩ দিনের হেফাজতে নিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করি।
আমার তদন্তকাজে সহায়তা করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ার বেগমকে দেওয়ার অধীযাচন পত্র মোতাবেক তিনি ০৩-০৩-২০১১ইং তারিখে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর হইতে একাত্তর সিভিল ও সামরিক প্রশাসন নেত্রকোনা সাব ডিভিশন ফাইল-০২ এর ফটোকপি জব্দ করেন। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগমের হাতের লেখা এবং তাহার দস্তখত চিনি। এই সেই জব্দনামা প্রদর্শনী-১৫ এবং উহাতে মনোয়ার বেগমের দস্তখত যাহা প্রদর্শনী-১৫/১ হিসাবে চিহ্নিত হইল। সেই জব্দকৃত ফাইলের ফটোকপিটি প্রসিকিউশন পক্ষের দাখিলী জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমান পত্রের ১ম খন্ডে ২৯ পৃষ্ঠা থেকে ২৭৪ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত আছে। এই গেন জব্দকৃত ফটোকপি গুলি যাহা প্রদর্শনী-১৬ হিসাবে চিহ্নিত হইল। উক্ত জব্দকৃত ফাইলে আলবদরদের অস্ত্র ও গুলি সরবরাহের কথা উল্লেখ আছে। (চলবে)

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীকে প্রত্যাহারের আবেদন মাওলানা সাঈদীর

মেহেদী হাসান, ২৫/৯/২০১৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন শুনানীর জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চ থেকে দু’জন বিচারপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষ থেকে। এরা হলেন বিচারপত সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী। আজ সকালে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে আইনজীবী টিম আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ  আবেদন জমা দিয়েছে।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপনের কারণ হিসেবে স্কাইপ সংলাপে তার নাম উঠে আসার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে আবেদনে। ট্রাইব্যুনাল ১ এর সাবেক পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে ট্রাইব্যুনালে রায় প্রদানের বিনিময়ে প্রমোশন দিয়ে   আপিল বিভাগে নিয়ে আসার প্রলোভন দেখিয়েছেন মর্মে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে আসামী পক্ষ থেকে। অপর দিকে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী’র  বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদর্শনের কারণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিতে যোগ দিয়ে বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

আবেদনে আসামী পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় এ দুজন বিচারপতি আগে থেকেই এ বিচারে একটি পক্ষ নিয়েছেন।  এর মাধ্যমে তারা দু’জনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের আপিল শুনানীতে অংশগ্রহণ বিষয়ে যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা  হারিয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে নিরপেক্ষ শুনানী এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তি সম্ভব নয়। আবেদনে তাদের বিরুদ্ধে আচরনবিধি ও  শপথ লক্স ঘনেরও  অভিযোগ করা হয়েছে। 
একই প্রেক্ষাপটে এর আগে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষ থেকেও প্রধান বিচারপতি বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। সে আবেদন শুনানী শেষে খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র বিরুদ্ধে অভিযোগ : ট্রাইব্যুনালের পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন এর সাথে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন ট্রাইব্যুনালের চলমান  বিচার নিয়ে। স্কাইপ এর মাধ্যমে তারা এ আলোচনা করেছেন। গত বছর ৬ ডিসেম্বর তাদের  দুজনের এ সংলাপের ঘটনা  ফাঁস হয়। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ৯ ডিসেম্বর ধারাবাহিকভাবে এ সংলাপ প্রকাশ শুরু করে। ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি নিজামুল হক স্কাইপ কেলেঙ্কারির দায়  নিয়ে পদত্যাগ করেন। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং বেলজিয়ামের ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপ সংলাপে উঠে এসেছে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নাম যিনি এখন ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের সদস্য। :


বিচারপতি নিজামুল হক ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার সংলাপের এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক জানান ট্রাইব্যুনালে তিনি তিনটা মামলার রায় দিতে পারলে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাকে আপিল বিভাগে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।



আসামী পক্ষ থেকে বলা হয় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে এ ধরনের কথাবার্তা বলেননি এ ধরনের কোন দাবি আজ পর্যন্ত তিনি করেননি। স্কাইপ সংলাপে সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে যাদের নামই উঠে এসেছে তাদের কেউ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অস্বীকার করেননি।

আবেদনে বলা হয় স্কাইপ সংলাপ থেকে এটি স্পষ্ট যে, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারপতি নিজামুল হককে আপিল বিভাগে নিয়ে আসার প্রলোভন দেখিয়েছেন  ট্রাইব্যুনালে তিনটি রায় প্রদানের বিনিময়ে। এটি বিচারে হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট প্রমান এবং  একজন সিটিং বিচারপতি হিসেবে তিনি  এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের যেকোন আপিল শুনানীর  যোগ্যতা হারিয়েছেন।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ (৪) (এ) ধারা মোতাবেক বিচারপতিদের জন্য প্রণীত আচরন বিধি তিনি লঙ্ঘন করেছেন এবং আপিল বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতাকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এছাড়া সংবিধানের ১৪৮ ধারা অনুযায়ী তিনি তার নিজের শপথও ভঙ্গ করেছেন বলে আসামী পক্ষ অভিযোগ করা হয়।   স্কাইপ সংলাপে তার বিষয়ে যে আলোচনা উঠে এসেছে তাতে এটি স্পষ্ট যে তিনি নিরপেক্ষতার যে নূন্যতম যোগ্যতা দরকার তা হারিয়ে ফেলেছেন। এজন্য ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর  আপিল শুনানীর জন্য গঠিত বেঞ্চ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন জানায় আসামী পক্ষ।


বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানীর জন্য  চলতি বছর ৩১ মার্চ  প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ গঠন করা হয়।  
বিচারপতি এএইচএম  শামসুদ্দীন চৌধুরী চলতি বছর ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিন ট্রাইব্যুনালের মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য গঠিত আপিল বেঞ্চের সদস্য করা হয় তাকে। 
আসামী পক্ষের অভিযোগ : বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরীকে  প্রত্যাহারের আবেদনে আসামী পক্ষ তার নিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের পক্ষে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী ২০১০ সালের ১ এপ্রিল লন্ডনে আওয়ামী লীগ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি বৈঠকে যোগদান করেন। এ বিষয়ে ৯ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি ২০১১ সালের ২১ জুন লন্ডনে আরেকটি বৈঠকে যোগ দিয়ে  ট্রাইব্যুনাল আইনের পক্ষে  বক্তব্য রাখেন।
আসামী পক্ষ থেকে বলা হয় ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচার  এবং দাবি করে আসছে। তারা ট্রাইব্যুনালের অধীনে বন্দী নেতাদের শাস্তি দাবি করে আসছে।   আওয়ামী লীগও এ বিচারের পক্ষে আন্দোলন করছে এবং তারা বর্তমানে এ বিচারের  আয়োজন করেছে। তাদের মতে বন্দীরা যুদ্ধাপরাধী। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী যে বৈঠকে যোগ দেন সেখানে  ঘাতক দালাল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরও উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের বৈঠকে যোগ দিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং তিনি একটি পক্ষ নিয়েছেন। আর এখন সেই বিচারপতিকেই সদস্য করা হয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লার  আপিল নিষ্পত্তি করে গঠিত আপিল বেঞ্চের। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কখনো ন্যায় বিচার আশা করতে পারেনা আসামী।

২০১১ সালের ২১ জুন লন্ডনের বৈঠকে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী আসামী পক্ষের আইনজীবীদের আক্রমন করে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি বিচার প্রকৃয়া, আইন, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক বিষয়ে যেসব মন্তব্য করেন তার মাধ্যমে তিনি সুস্পষ্টভাবে সরকার এবং একটি দলের পক্ষ অবলম্বন করেছেন এবং নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে দেশী এবং বিদেশী আইনজ্ঞ মহলের সমালোচনার জবাবে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী  বিচার প্রকৃয়া আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। একজন সিটিং বিচারপতি হিসেবে বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।

আসামী পক্ষের আবেদনে আরেকটি ঘটনা তুলে ধরে বলা হয় ২০১২ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট এ বিচারপতি থাকা অবস্থায় একটি মামলার শুনানীর সময় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের এদেশে থাকার অধিকার নেই। এদেশকে রাজাকার আলবদর মুক্ত করতে হবে । শুনানীর সময় গফরগাও থানার অসিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে জাহাজে করে পাকিস্তান পাঠানোর জন্য ।  ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ  জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত। এই মামলায় আবেদনকারী মাওলানা সাঈদীও  জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে মাওলানা সাঈদীসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকেও রাজাকার এবং আলবদর নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।  স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের এদেশে থাকার অধিকার নেই এবং তাদের  পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে মন্তব্য করার মাধ্যমে বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী’র  প্রচন্ড জামায়াত বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

আসামী পক্ষের আবেদনে বলা হয়েছে এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে এ ধরনের পক্ষগ্রহণকারী  একজন বিচারপতির অধীনে আপিল শুনানী হলে সেখানে আসামী ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে গভীরভাবে শঙ্কিত । তাই তাকে আপিল শুনানী থেকে প্রত্যাহার করা উচিত।

আবেদনে বাংলাদেশের সংবিধান, বিচারপতিদের জন্য প্রণীত আচরনবিধি এবং দেশি বিদেশি প্রচলিত আইনের উদাহরন তুলে ধরা হয়েছে আবেদনের যৌক্তিকতার পক্ষে।



An application to seek the recusal of Mr. Justice Surendra Kumar Sinha.




IN THE SUPREME COURT OF BANGLADESH
APPELLATE DIVISION
(CRIMINAL APPELLATE JURISDICTION)
CRIMINAL APPEAL NO.  39 OF  2013.
(Arising Out of ICT-BD Case No. 1 of 2011 of ICT-1)
IN THE MATTER OF:
An application to seek the recusal of Mr. Justice Surendra Kumar Sinha.
A   N   D
IN THE MATTER OF:
Allama Delawar Hossain Sayedee,
                                                …Convict/Appellant
                     -Versus-
The Chief Prosecutor, International Crimes Tribunal, Dhaka, Bangladesh.
………….  Respondent.
AND
IN THE MATTER OF:
Allama Delawar Hossain Sayedee, Son of Late Moulana Yusuf Sayedee, 914, Shahidbagh, P.S. Motijheel, Dhaka – 1000.
---- Accused/Appellant/Applicant
(In Jail)
To
Mr. Justice Md. Mozammel Hossain, the Hon’ble Chief Justice of Bangladesh and his companion Justices of the said Hon’ble Court.
The humble petition on behalf of the Applicant/Appellant above named most respectfully.
SHEWETH:
1.                  That this application has been filed pursuant to the Code of Conduct for the Judges of the Supreme Court of Bangladesh and the oath of office provided for under Article 148 of the Constitution of the People’s Republic of Bangladesh and prescribed in the Third Schedule, seeking the recusal of Mr. Justice Surendra Kumar Sinha.

2.                  That Article 96 (4) (a) of the Constitution of Bangladesh provides for a Code of Conduct to be prescribed by the Supreme Judicial Council and which is to be observed by judges. This was most recently published on 7 May 2000 (hereinafter referred to as the Code of Conduct).

3.                  That pursuant to clause 1 of the Code of Conduct:
“A judge should uphold the integrity and independence of the judiciary. An independent judiciary is indispensable to the justice system in Bangladesh. A judge should participate in establishing, maintaining, and enforcing high standards of conduct, and should personally observe those standards, so that the integrity and independence of the judiciary may be preserved. The provisions of this Code should be construed and applied to further that objective.”

4.                  That furthermore, clause 2 of the Code of Conduct provides that:
“(2) A judge should avoid impropriety and the appearance of impropriety in all activities.
(2A) A judge should respect and comply with the law and should act at all times in a manner that promotes public confidence in the integrity and impartiality of the judiciary.”

5.                  That the Code of Conduct also provides for instances when a judge should disqualify himself from the proceedings. Clause 3(6)(a) of the Code of Conduct provides that:
“The judge shall disqualify himself or herself in a proceeding in which the judge's impartiality might reasonably be questioned.”

6.                  The Code of Conduct stipulates that any act:
“which erodes the credibility and independence has to be avoided. The Code of Conduct is only restatement of values of judicial life and is not meant to be exhaustive but illustrative of what is expected of a judge.”

7.                  That Article 148 of the Constitution provides for an oath to be taken by members of the superior Judiciary. According to the Third Schedule of the Constitution a judge will solemnly swear or affirm that he will:
“faithfully discharge the duties of [his] office according to law: That [he] will bear true faith and allegiance to Bangladesh: That [he] will preserve, protect and defend the Constitution and the laws of Bangladesh: And that [he] will do right to all manner of people according to law, without fear or favour, affection or ill-will.”

8.                  Pursuant to the preamble of the Code of Conduct, in taking this oath a judge is subject to the provisions of the Code of Conduct including those explicitly referred to in this application.
9.                  That the right to an independent and impartial judiciary prescribed in the Code of Conduct is also a standard obligation to adhere to under international law. Article 10 of the Universal Declaration of Human Rights provides:
“Everyone is entitled in full equality to a fair and public hearing by an independent and impartial tribunal, in the determination of his rights and obligations and of any criminal charge against him.”

10.             That this is further reiterated under Article 14 (1) of the International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) which provides that all persons are: “entitled to a fair and public hearing by a competent, independent and impartial tribunal established by law”. The Human Rights Committee which is tasked with upholding the provisions of the ICCPR has held that:
“The impartiality of the court and the publicity of proceedings are important aspects of the right to a fair trial within the meaning of Article 14 (1). ‘Impartiality’ of the court implies that judges must not harbor preconceptions about the matter put before them, and that they must not act in ways that promote the interests of one of the parties. Where the grounds for disqualification of a judge are laid down by law, it is incumbent upon the court to consider ex officio these grounds and to replace members of the court falling under the disqualification criteria. A trial flawed by the participation of a judge who, under domestic statute, should have been disqualified cannot normally be considered to be fair or impartial within the meaning of Article 14.” (Karttunen v. Finland [387/89])

11.             This fundamental right to an independent and impartial Judge is also recognised in Article 40 (1) of the Rome Statute for the International Criminal Court (ICC) which provides that “[t]he judges shall be independent in the performance of their functions”. The disqualification of a judge is outlined in Article 41 (2) (a) ICC:
 “A judge shall not participate in any case in which his or her impartiality might reasonably be doubted on any ground.”

12.             That Bangladesh is a state party to the UDHR, ICCPR and ICC and must therefore adhere to its international obligations.
13.             That Mr. Justice Surendra Kumar Sinha has been serving as an Hon’ble Justice of the Appellate Division of the Supreme Court of Bangladesh. On 17th September 2013 this case appeared in the daily cause list for the first time for hearing in Court No. 1 of the Appellate Division and Mr. Justice Surendra Kumar Sinha is one of the five judges of the bench. Thereafter the matter was adjourned for one week so that the hearing of the case can commence on 24th September 2013 in the same bench.

14.             That the Appellant/Applicant prays to the Appellate Division of the Supreme Court to avail itself of the opportunity in the abovementioned provisions to order the recusal of the Hon’ble Justice as the only possible means to ensure proper dispensation of justice.

15.             On 8th December 2012 the British Weekly ‘The Economist’ published a report titled ‘Discrepancy in Dhaka’, in its online edition raising questions about the integrity of the former Chairman of the International Crimes Tribunal-1. Following the publication in The Economist, the Bangla Daily Amardesh published a series of reports on the Skype communication between Justice Nizamul Haque and Ahmed Ziauddin for a period of five days from 9th December to 13th December 2012. 

16.             On 15th December 2012, the Economist published a long article on International Crimes Tribunal Bangladesh quoting excerpts from the 17-hour Skype conversation and 230 email communications between Mr. Justice Nizamul Haque, the former Chairman of ICT-1 and Dr. Ahmed Ziauddin, an expatriate Bangladeshi lawyer living in Brussels.

17.             That in Skype conversation on 6th September 2012 published in the Daily Amar Desh dated 9th December 2012 the former Chairman of the Tribunal Mr. Justice Nizamul Haque is reported to have had a conversation with Mr. Justice Surendra Kumar Sinha. The translation of the relevant portion of the Skype conversation is reproduced below: “ ‘Sinha Babu’ (Mr. Justice Surendra Kumar Sinha) said, pass three verdicts within December. This one [Delawar Hossain Sayedee], Ghulam Azam and Saqa [Salauddin Qader Chowdhury]. It would suffice to pass verdicts in these three [cases]. Then we will bring you here [to the Appellate Division of the Supreme Court]. Thereafter you will not be required to stay there [International Crimes Tribunal]. This is all we talked about. I said you may do whatever you want to do, promotion should be given first. My concern is promotion.”

Relevant portion of the transcript of the conversation of 6th September 2012 is quoted below:
নিজামুল হক নাসিম : উনি কয় একটা দেন সিনহা বাবু কইছে, ডিসেম্বর এর মধ্যে তিনটা দেন এইটা, গোলাম আযম সাহেবের, আর সাকা এই তিনডা দিয়া ফালাইতে পারলেই হইছে তারপরে নিয়ে আসি আপনারে আমরা এইখানে এরপরে ওহানে আপনারে আর লাগবে না এই হইছে কথা আর কি আমি কইছি, যা করেন করেন, প্রমোশনডা দিয়া লন আগে আমার কতা প্রমোশন, হা... হা... হা...।“

18.             Following the publication of the Skype conversation in the Economist and the Daily Amardesh Mr. Justice Nizamul Haque resigned.
19.             The Accused/Applicant would like to state here specifically that at no point of time from December 2012 till today, any denial has been made by the Registrar of the International crimes Tribunal or by Mr. Justice Nizamul Haque denying the contents of the Skype conversation or the email communications between him and Dr. Ahmed Ziauddin. The Applicant would further state that no denial has been made by the Registrar of the Supreme Court on behalf of Mr. Justice Surendra Kumar Sinha that he [Mr. Justice Sinha] had had no such conversation with Mr. Justice Nizamul Haque. It is common knowledge that no one- the Ministers, the Judges, the Prosecutors or the expatriate Bangladeshis who have been implicated in the Skype conversation and email communication have ever denied their involvement. On the other hand in his Order dated 6th December 2012 issuing contempt proceedings against the Editor and one other of the Economist, Mr. Justice Nizamul Haque admitted his conversation with Dr. Ahmed Ziauddin. 

20.             That it is apparent from the above conversation that Mr. Justice Surendra Kumar Sinha assured him of elevation to the Appellate Division of the Supreme Court if he [Mr. Justice Nizamul Haque] passes three verdicts including the verdict of the Appellant. This amounts to an unlawful interference in the proceedings against the Appellant pending before the Tribunal. In doing so, he has disqualified himself from sitting as a judge in any Appeal from the Judgment of the Tribunal in the case against the Appellant.

21.             That in the alternative, Mr. Justice Surendra Kumar Sinha’s proposal of elevating  Mr. Justice Nizamul Haque to the Appellate Division raises serious concerns of appearance of bias against all the Accused before the Tribunal including the Appellant. By such conduct, Mr. Justice Surendra Kumar Sinha has eroded his credibility within the meaning of the provisions of the Code of Conduct and threatened the integrity and independence of the Appellate Court i.e., the Appellate Division of the Supreme Court which is hearing the instant Appeal.

22.             That further, Mr. Justice Surendra Kumar Sinha being a sitting judge of the Supreme Court of Bangladesh is bound by the Code of Conduct for the Judges of the Supreme Court of Bangladesh and the oath of office provided for under Article 148 of the Constitution of the People’s Republic of Bangladesh and prescribed in the Third Schedule. Article 96 (4) (a) of the Constitution provides for a Code of Conduct to be prescribed by the Supreme Judicial Council and which is to be observed by judges. This was most recently published on 7 May 2000 (hereinafter referred to as the Code of Conduct).

23.             It is respectfully submitted that this is not a matter that the Appellate Division of the Supreme Court need conduct an extensive examination as to actual bias of the Hon’ble Justice. The question is whether an objective observer would apprehend that there is a legitimate fear that he will lack the required level of impartiality due to his assurance to the former Chairman of the Tribunal of elevation to the Appellate Division. 

24.             In Prosecutor v. Issa Hassan Sesay, Case No. SCSL-2004-15-AR 15, the Special Court for Sierra Leone Appeals Chamber referred to the two authorities cited above in determining whether Justice Geoffrey Roberston QC should be properly disqualified for commenting on the nature of the conflict in a book.  The Appeals Chamber concluded, as per Justice King, at para. 15:
“It is irrelevant for the purposes of this Ruling whether or not the passages hereinbefore referred to are true or not.  The learned Justice is entitled to his opinion.  That is one of his fundamental human rights.  The crucial and decisive question is whether an independent bystander so to speak, or the reasonable man, reading those passages will have a legitimate reason to fear that Justice Robertson lacks impartiality.  In other words, whether one can apprehend bias.  I have no doubt that a reasonable man will apprehend bias, let alone an accused person and I so hold.”

25.             Justice King, in giving judgment, concluded by referring to R v. Sussex Justices, Ex party McCarthy (1923) 1 KB 256 at p. 259 that “Justice must not only be done, but should manifestly be seen to be done.”

26.             It is respectfully submitted that the overriding question in the instant case is not that of the Hon’ble Justice’s integrity, but whether an objective observer would apprehend that there is a legitimate fear that he will lack the required level of impartiality due to his offering promotion to the former Chairman of the Tribunal. 

27.             This situation renders the inclusion of Mr. Justice Surendra Kumar Sinha on the bench in the instant appeal at odds with the integrity and independence of Appellate Division of the Supreme Court, contrary to the provisions of the Code of Conduct and ultimately precluding justice being done for the Appellant, and indeed any person seeking to appeal against a conviction by the International Crimes Tribunal.

28.             Article 27 of the Constitution provides that:
“All citizens are equal before the law and are entitled to the equal protection of law.”

29.             The principle of equality of arms is a basic obligation under international law. It is implicit in Article 7 UDHR which provides that:
All are equal before the law and are entitled without any discrimination to equal protection of the law. All are entitled to equal protection against any discrimination in violation of this Declaration and against any incitement to such discrimination.”

30.             This principle is reiterated in Article 14(1) of the International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) which provides that:
“All persons shall be equal before the courts and tribunals. In the determination of any criminal charge against him, or of his rights and obligations in a suit at law, everyone shall be entitled to a fair and public hearing by a competent, independent and impartial tribunal established by law.”

31.             The UN Human Rights Committee tasked with upholding the provisions of the ICCPR held in De Jorge Asensi v. Spain (Communication No. 1413/2005) that:
 “Although Article 14 does not explain what is meant by a “fair hearing” in a suit at law, the concept of a fair hearing in the context of article 14, paragraph 1, of the Covenant should be interpreted as requiring certain conditions, such as equality of arms [the Accused-Petitioner’s emphasis] and absence of arbitrariness, manifest error or denial of justice.” (Also the Committee’s general comment No. 32, para. 26, (2007) on article 14 of the Covenant, “Right to equality before courts and tribunals and to a fair trial”)

32.             This fundamental principle of equality of arms is also set out in Article 67(1) of ICC which provides that:
“In the determination of any charge, the accused shall be entitled to a public hearing, having regard to the provisions of this Statute, to a fair hearing conducted impartially, and to the following minimum guarantees, in full equality”.

33.             That as before mentioned Bangladesh is a state party to the UDHR, ICCPR and ICC and must adhere to its international obligations thereunder. 

34.             Under international law, the procedure for determining impartiality is highly important. If an accused raises the issue during the proceedings it must be investigated unless it is “devoid of merit”.  This requires the court to determine whether, apart from the judge’s personal conduct, there are ascertainable facts which may raise doubts as to his impartiality.  In this respect the position is very clear.  If there are legitimate reasons to doubt the impartiality then that judge must withdraw from the case.  In Piersack v. Belgium (Application No. 8692/79, Judgment of 1 October 1982, paras 30-32) it was held to be a violation where the trial judge had previously been a member of the department who investigated the applicant and who had initiated the prosecution against him.  In Piersack the European Court of Human Rights held:
“30. Whilst impartiality normally denotes absence of prejudice or bias, its existence or otherwise can, notably under Article 6 § 1 (art. 6-1) of the Convention, be tested in various ways. A distinction can be drawn in this context between a subjective approach, that is endeavouring to ascertain the personal conviction of a given judge in a given case, and an objective approach, that is determining whether he offered guarantees sufficient to exclude any legitimate doubt in this respect.
However, it is not possible to confine oneself to a purely subjective test. In this area, even appearances may be of a certain importance (see the Delcourt judgment of 17 January 1970, Series A no. 11, p. 17, § 31). As the Belgian Court of Cassation observed in its judgment of 21 February 1979 (see paragraph 17 above), any judge in respect of whom there is a legitimate reason to fear a lack of impartiality must withdraw. What is at stake is the confidence which the courts must inspire in the public in a democratic society.”

35.             It is respectfully submitted that the integrity of the proceedings and the process must be paramount. 

36.             It is respectfully submitted that this Hon’ble Court may kindly take into account the established international jurisprudence on the question of objective impartiality in properly addressing the question of whether the Hon’ble Justice should recuse himself.  In Regina v. Bow Street Metropolitan Stipendary Magistrates and others, Ex parte Pinochet Ugarte (No. 2) (House of Lords) 1 AC 119 which held that:
“…the fundamental principle that a man may not be a judge in his own cause was not limited to the automatic disqualification of a judge who had a pecuniary interest in the outcome of a case but was equally applicable if the judge’s decision would lead to the promotion of a cause in which he was involved together with one of the parties…that in order to maintain the absolute impartiality of the judiciary there had to be a rule which automatically disqualified a judge who was involved…in promoting the same causes…as was a party to the suit”.

“The court cannot rely on its knowledge of the integrity of the judge concerned to outweigh the appearance of bias to the eye of the bystander.  The reference point must remain the reasonable observer.  This is consistent with the test laid down under article 6(1) of the European Convention for the Protection of Human Rights and Fundamental Freedoms”.

“…I am of the opinion that there could be cases where the interests of the judge in the subject matters of the proceedings arising from his strong commitment to some cause or belief or his association with a person or body involved in the proceedings could shake public confidence in the administration of justice as much as a shareholding (which might be small) in a public company involved in the litigation”.

37.             In Prosecutor v. Anto Furundzija, ICTY Appeals Chamber: 21 July 2000: Case No. IT – 95 – 17/1, the ICTY Appeals Chamber held:
“The fundamental right of an accused to be tried before an independent and impartial tribunal is generally recognised as being an integral component of the requirement that an accused should have a fair trial.” [para. 177]

“On this basis the Appeals Chamber considers that the following principles should direct it in interpreting and applying the impartiality requirement of the statute:

A.    A Judge is not impartial if it is shown that actual bias exists.

B.    There is an unacceptable appearance of bias if: (i) a judge is a party to the case, or has a financial or propriety interest in the outcome of a case, or if the Judge’s decision will lead to the promotion of a cause in which he or she is involved, together with one of the parties. Under these circumstances, a Judge’s disqualification from the case is automatic; or (ii) the circumstances would lead a reasonable observer, properly informed, to reasonably apprehend bias.” [para. 189].

38.             That as a State Party to the Rome Statute of the International Criminal Court there is an obligation to apply the general principles to which it adheres.  The Rome Statute sets up a framework of complementarity.  The purpose of this complementarity principle is in order to establish a uniform system to try serious crimes. Admittedly this complimentary principle is only triggered in a situation where the ICC can itself take jurisdiction over the case if the national courts are unwilling or unable to proceed. However, it is the spirit of the complementarity principle that creates a number of legal obligations.  The ICC was established to try and punish the most serious violations of human rights in cases where national justice systems fail at the task. It is deemed a model in international criminal justice. It must be highlighted that over 120 states participated in the negotiations at the Rome Conference which formulated the Rome Statute in 1998. Under international customary law and applying the principle of the Vienna Convention on the Law of Treaties when a State consents to be bound by a treaty it constitutes a promise to adhere to the principles in the document and to honour its spirit.  It is obliged not to defeat the object and purpose of the treaty. The object and purpose of the Rome Statute is enshrined in both Article 17(2) above and the preamble of the Rome Statute which provides that State Parties to the Rome Statute are: “resolved to guarantee lasting respect for and the enforcement of international justice”. It affirms that “the most serious crimes of concern to the international community as a whole must not go unpunished at their effective prosecution must be ensured by taking measures at national level and by enhancing international cooperation”.

39.             Reference must also be made to the public statements made by the Government of Bangladesh at the ceremony when it officially became a State Party and to the numerous public statements since that time to upholding the highest international standards.  At the 65th Session of the United Nations General Assembly, the Hon’ble Prime Minister of Bangladesh stated:
“Bangladesh has established an International Crimes Tribunal to try persons responsible for war crimes and crime against humanity, including genocide, arson and rape committed during our war of liberation in 1971, and immediately thereafter. This action is in accord with the rule of law as reflected in the Rome Statute of the International Criminal Court (ICC), which we have ratified and which aims at bringing perpetrators of war crimes, genocide, and crimes against humanity, to justice. I believe that only justice can heal the unforgivable, deadly wrongs of the past.”

40.             The Hon’ble Prime Minister clearly expressed the need to maintain the highest standards according to the legal framework of the Rome Statute of the International Criminal Court.

41.             It is respectfully recalled that the UN Human Rights Committee has held that in relation to the right under Article 14(1) of the ICCPR that “all persons shall be equal before the courts and tribunals” and that “in the determination of any criminal charge against him, or of his rights and obligations in a suit of law, everyone shall be entitled to a fair and public hearing by a competent, independent and impartial tribunal established by law” is an absolute right that may suffer no exception (Communication No. 263/1987, M. Gonzalez del Río v. Peru (Views adopted on 28 October 1992), in UN doc. GAOR, A/48/40 (vol. II), p. 20, para. 5.2). 

42.             Firstly, independence must be institutional and functional and to determine whether the court or tribunal meets the requirements of independence, regard must be had to the manner of appointment of its members and their term in office, the existence of guarantees from external pressures and the question of whether the body has the appearance of independence.

43.             Secondly, the concept of impartiality may in many cases overlap with independence. However, in order to ascertain whether the requirement is met, a test that is both subjective and objective must be applied (Eur. Court HR, Saraiva de Carvalho v. Portugal, judgment of 22 April 1994, Series A286-B, p. 38, para. 33).  Whilst impartiality normally denotes the absence of prejudice or bias, its existence or otherwise can, notably under Article 6(1) of the ECHR, be tested in a variety of ways. A distinction can be drawn in this context between a subjective approach, that is endeavouring to ascertain the personal conviction of a given judge in a given case, and the objective approach, that is determining whether he offered guarantees sufficient to exclude any legitimate doubt in this respect.  For subjective impartiality to be made out actual proof of bias needs to be established and the personal impartiality of the judge is presumed unless there is proof to the contrary. The personal friendship between the trial judge and the Executive may not be sufficient in itself to prove actual bias. For objective impartiality to be made out the test is less strict and is fashioned on the maxim justice must not only be done: it must be seen to be done. This requires the court to determine whether, apart from the judge’s personal conduct, there are ascertainable facts which may raise doubts as to his impartiality. In this regard the position is very clear. If there are legitimate reasons to doubt the impartiality then the judge must withdraw from the case.

44.             The procedure for determining impartiality is highly important. If an accused raises the issue during the proceedings it must be investigated unless it is “devoid of merit”.

45.             It is further recalled that on 7th February 2013 the United Nations Special Rapporteur on extrajudicial, summary or arbitrary executions, Mr. Christof Heyns, issued a public statement expressing alarm and declaring that “Capital punishment may be imposed only following proceedings that give all possible safeguards to ensure a fair trial and due process, at least equal to those stipulated in the International Covenant on Civil and Political Rights, to which Bangladesh is a State party.” The United Nations Special Rapporteur on the Independence of Judges, Prosecutors and Lawyers, Ms. Gabriela Knaul, further stated raised concerns about “the impartiality of judges and prosecution services of the Tribunal, as well as their independence from the executive.” The Special Rapporteurs stated jointly that any shortcomings in the trial proceedings should be carefully examined during any appeal and noted that “A credible appeal process also constitutes an imperative component of fair trial guarantees, particularly in instances, where the death penalty has been imposed.”

46.             That for the abovementioned reasons in this application, the Appellant/ Applicant humbly prays that this Hon’ble Court may kindly avail itself of the opportunity to issue an order directing for the immediate recusal of Mr. Justice Surendra Kumar Sinha.

Wherefore, it is most humbly prayed that your lordships may be graciously pleased to issue an order directing for the immediate recusal of Mr. Justice Surendra Kumar Sinha in Criminal Appeal No. 39 of 2013 pending before this Hon’ble Court and pass any further order(s) as it may deem fit and proper. 
And for this act of kindness, that the Appellant/Applicant, as in duty bound shall ever pray.
Drawn and filed by:

(Zainal Abedin)
Advocate-on-Record
For the Appellant.