মেহেদী হাসান, ৬/৩/২০১৪
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অষ্টম অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা ও মানিক পসারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ লুটপাট বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন গতকাল। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহন করেন।
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা থেকে সংশ্লিষ্ট অংশ পড়ে শোনান আদালতে। এরপর তিনি এ অভিযোগের বিরুদ্ধে আসামী পক্ষের উপস্থাপিত যুক্তির জবাব দেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের ছয় নং সাক্ষী মানিক পসারীর জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান তিনি। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মানিক পসারী ‘ইব্রাহিম আমাদের বাড়িতে কাজ করত। ১৯৭১ সালে ৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রেজাকার মবিন, হাকিম কারী, সোবহান মাওলানাসহ আরো অনেকে রেজাকার আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে আমি বাড়ির পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি এবং সব ঘটনা দেখতে থাকি। তারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন ( বাড়িতে কাজ করত) এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে আর্মিরা ধরে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ঘরে কেরোসিন ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে বেঁধে পাড়েরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পাড়েরহাট বাজারের মধ্যে ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সপ্তম সাক্ষী মফিজউদ্দিন পসারীর জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান। ১৯৭১ সালের ৮ মে সকালে গরু মহিষ নিয়ে চরে যাই। সাথে ইব্রাহিম কুট্টিও ছিল। কিন্তু আনুমানিক ১০/১১টার দিকে চরে বসে বসে মামার বাড়িতে বাড়িতে আগুন এবং ধোয়া দেখতে পাই। তারপর মামার বাড়ির দিকে ফিরে আসি। ১২/১৪ জন পাক আর্মি, ২০/২২ জন রাজাকার মামার বাড়ি যাচ্ছে দেখতে পাই। তার মধ্যে দিলু শিকদার ছিল। আমরা পালাতে চাইলে পাক আর্মি ধরে ফেলে। দিলু শিকদার ইব্রাহীমের চুল ধরে বলে “শুয়ারের বাচ্চা যাচ্ছো কোথায়”। রাজাকার মবিন, রাজ্জাক আরো কয়েকজন আমাদের দুজনকে এক দড়িতে বাঁধে। এরপর রাজাকাররা ঘরে ঢুকে লুটপাট করে এবং কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেকেন্দা শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মবিন, রাজ্জাক দিলু শিকদারসহ আরো অনেক রাজাকার তেল ছিটিয়ে ঘরে আগুন দিতে বলে। তারপর আমাদের দুজনকে পারেরহট বাজারে নিয়ে যায়। বাজারের মধ্যে ব্রিজের মাঝখানে নিয়ে ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করে সইজুদ্দীন পসারী, মানিক পসারী কোথায় থাকে। তুই তো সইজুদ্দীনের বডি গার্ড । তুই জানিস তারা কোথায়। না বললে তোকে গুলি করব। এরপর পুল থেকে নামিয়ে দিলু শিকদার (তাদের ভাষায় দিলু শিকদার মানে মাওলানা সাঈদী) সেকেন্দার শিকাদর উর্দুতে কি যেন বলল। আমি উর্দু বুঝিনা এবং কি বলেছিল তা শুনতে পাইনি। এরপর ইব্রাহিমকে দড়ি থেকে খুলে ছেড়ে দিল এবং আমাকে নিয়ে সামনের দিকে গেল।
তারপর গুলির শব্দ শুনতে পাই। ইব্রাহিম মা বলে চিৎকার করে।
পেছনে তাকিয়ে দেখি ইব্রাহিমকে গুলি করছে।
এ পর্যায়ে একজন বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আপনি যা পড়ে শোনাচ্ছেন এগুলো আসামীপক্ষ ইতোমেধ্য দুইবার আমাদের পড়ে শুনিয়েছে। আপনার এগুলো পড়ার দরকার নেই। আপনি টেকনিক্যাল পয়েন্ট আউট করেন।
তখন অ্যটর্নি জেনারেল ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে সংক্ষেপে অন্যান্য সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান।
রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার বলেছেন, ‘ রইজুদ্দীন সইজুদ্দীন পসারীর বাড়িতে দুজন লোক থাকত মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহীম কুট্টি নামে। তারা চরে গিয়েছিল গরু চড়াতে।
তারা আগুন দেখে দৌড়ে আসে। এসময় দেলোয়ার শিকদার তাদের চাইপপা ধরে এবং মফিজ উবরাইয়া পরে যায়। পাক আর্মি ধরে ইব্রাহিম কুট্টিকে। তাদের এক দাড়িতে বেঁধে পারেরহাট বাজারে নিয়ে যায়। তারপর মফিজকে পারেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে আর ইব্রাহিমকে নেয়া হয় থানার ঘাটের দিকে। তারপর গুলির শব্দ শুনি। থানার ঘাটের কাছে ব্রিজের গোড়ায় ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়।’
দশম সাক্ষী বাসুদেব বলেছেন, ‘মে মাসের ৮ তারিখে পাঞ্জাবী আর্মি, রাজাকার, শান্তি বাহিনীর লোকজন মানিক পসারীর বাড়িতে আসে। তাদের আসতে দেখে বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। তারা বাড়িতে ঢুকল। ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ উদ্দিন মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করত। ওদের ধরে বেঁধে ফেলল। দিলু শিকদার, সেকেন্দার আলী শিকদার, মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লা, রুহুল আমিন, হাকমি কারী মোমিন এদের দেখেছি তখন। এদের চিনি। ওরা ধান চাউল সব লুটপাট করে নিয়ে গেল ভাগ করে। আর দামি মালামাল নিল দিলু শিকদার। এরপর দিলু আর অন্য রাজাকাররা মিলে ঘরে আগুন দিল। ইব্রাহীম আর মফিজকে নিয়ে রওয়ান দিল। বাজারের ব্রিজের ওপর উঠল। তারপর দেলোয়ার সাঈদী হেগো লগে (পাক আর্মি) কি যেন বলল। আমরা আড়ালে বসে দেখছি। ইব্রাহীমকে বাঁধন খুলে ব্রিজ পার হয়ে ঘাটের দিকে নিয়ে গেল। মফিজকে নিয়ে গেল ক্যাম্পের দিকে। আর ইব্রাহীমকে গুলি দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর আমরা দৌড়ে বাড়ি যাই।’
১১ তম সাক্ষী আব্দুল জলিল শেখ বলেছেন, ১৯৭১ সালের ৮ মে দেলোয়ার হোসেন দিলু, দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, আরো কয়েকজন রাজাকার মিলে ১০/১৫ জনের একটি দল এবং পাক সেনা মিলে আমাদের চিথলিয়া গ্রামে আসে। তাদের আসতে দেখে বাড়ির লোকজন আশপাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। আমিও তাদের সাথে জঙ্গলে আশ্রয় নেই। দিলু রাজাকার, দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার কুট্টিকে ধরে ফেলে। তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে উঠানে ফেলে রাখে। এরপর তারা ঘরের ভেতর ঢকে। ভেতরে ঢুকে ধান চাউল যা ছিল সব কিছু লাটপাট করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। ঘরের মধ্যে থাকা টাকা পয়সা, সোনদানা মূল্যবান জিনিসপত্র রাজাকার ও পিস কমিটির লোকজন ভাগবাটোয়রা করে পকেটে করে নিয়ে যায়। এরপর দেলোয়ার, সেকেন্দার শিকদার এবং দানেশ মোল্লা তিনজন মিলে ঘরে রাখা কেরোসিন ভাগ ভাগ করে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন পরা ধইরা যাবার পর উঠানে নাইম্যা মফিজ ও কুট্টিকে লইয়া বাজারের দিকে রওয়ানা দেয়। আমরাও পেছনে পেছনে যাই। বাজারের ব্রিজ পারা হইয়া ওপারে যাইয়া কুট্টির বান ছেড়ে । এরপর তাকে থানার ঘাটের দিকে নিয়ে গুলি করে। দেলোয়ারের ইশারায় আর্মি গুলি করে। এরপর মফিজকে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে যায়। তারপর আমরা বাড়ি চইল্লা আসি’
১২ তম সাক্ষী একেএমএ আউয়াল বলেছেন, ‘পাড়েরহাট এলাকা হিন্দু অধ্যূসিত এলাকা হওয়ায় ও ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের সমর্থকের সংখ্যাধিক্য থাকায় ঐ এলাকায় লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। যুদ্ধকালীন সময় আমার নিজ ইউনিয়ন শংকরপাশার বাদুরা, চিথলিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম, রইজ্দ্দুীন পসারী, সইজুদ্দিন পসারী, মানিক পসারীসহ হিন্দু পাড়া একদিনে একটানা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল । ঐ পোড়া বাড়িঘর আমি স্বাধীনতার পরে এসে দেখেছি। দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, শুনেছি সাঈদী সাহেবও তাদের সাথে ছিলেন। ’
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার শ্যালক মো: মোস্তফা, শ্যালিকা রানী বেগম এবং শাশুড়ী সিতারা বেগম তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করে তা ১৯ (২) ধারায় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তারা কেউ সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসেনি। ১৯ (২) ধারায় গৃহীত তাদের জবানবন্দী আদালতে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তারা তিনজনই বলেছেন তারা জানতে পেরেছেন ইব্রাহীম কুট্টিকে মানিক পসারীর বাড়ি থেকে মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্যরা ধরে নিয়ে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করে । তারা তার লাশ আনার জন্য পাড়েরহাট বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে ভয় দেখানোর পর তারা ফিরে আসেন। তারা জানতে পেরেছেন ইব্রাহীম কুট্টির লাশ দুইদিন পর পানিতে ফেলে দেয়া হয়।
শুনানীর সময় একজন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এ তিন সাক্ষী বলেছেন, দুই দিন পর তার লাশ পানিতে ফেলে দেয়া হয়। অপরদিকে ট্রাইব্যুনালে কয়েক সাক্ষী বলেছেন গুলি করার পর লাশ লাথি মেরে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এ বিষয়ে আপনার জবাব কি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ তিনজন সাক্ষী শোনা সাক্ষী। তারা শুনেছেন দুইদিন পর লাশ নদীতে ফেলা হয়েছে। তারা গিয়েছিল লাশ আনতে। ভয়ে চলে এসেছে। তখনকার যে পরিস্থিতি তাতে তার শাশুড়ীর পক্ষে সেখানে যাওয়া কি সম্ভব? তাছাড়া লাশ লাথি মেরে ফেলার পর তা কি তোলা যায়না আবার?
এসময় আরেকজন বিচারপতি বলেন আসামী পক্ষের অভিযোগ মানিক পসারীর অভিযোগে ইব্রাহীমের পিতার নাম দুই জায়গায় দুই রকম এসেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা হতেই পারে। হয়ত ভুল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত একটা ডকুমেন্টে যদি তার পিতার নাম আলাদা থাকতে পারে। কিন্তু মূল বিষয় হল ইব্রাহীম নিহত হয়েছে। কিন্তু মানিক পসারীর বাড়িতে প্রবেশের সময় সাঈদীর নাম আছে। লুটপাট আগুন দেয়অম জঙ্গলে বসে ঘটনা দেখার বিষয়ে কোন ডিনায়াল দেয়নি আসামী পক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে আসামী পক্ষের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল তাকে নলবুনিয়ায় হত্যা করা হয়েছে।
এসময় একজন বিচারপতি বলেন, ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম যে মামলা করেছে তাতে মাওলানা সাঈদীকে আসামী করেনি। তাছাড়া ইব্রাহীমকে হত্যা বিষয়ে মমতাজ বেগমের বক্তব্যের সাথে তার বোন, মা এবং ভাইয়ের জবানবন্দীর মিল নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ছয় নং সাক্ষী বিষয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ হল বাড়ি পোড়ানোর পর সে মামার বাড়ি ওঠে। ১৫ দিন পর নিজ বাড়িতে আসে। সে বাড়িতে ছিলনা। কাজেই বাড়ি পোড়ানো দেখল কি করে? তাছাড়া পিরোজপুর মামলায় সে মফিজের নাম বলেনি।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষ তাকে জেরায় শুধু সাজেশন দিয়ে বলেছে সে সোনাদানা লুট এবং ইব্রাহীম ও মফিজকে একই দড়িতে বাঁধার কথা তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেনি। কিন্তু পুরো ঘটনার মধ্যে বাকী সবই রয়ে গেছে । সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি।
পুলের গোড়ায় নিয়ে ইব্রাহীমকে হত্যা, আগুন দেয়া, লুটপাট এবং তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে সাজেশন দেয়া হয়নি। পুলের গোড়ায় নিয়ে দেলোয়ার শিকদার, সেকেন্দার শিকদার পাকিস্তান আর্মির সাথে কি যেন পরামর্শ করল তারপর ইব্রাহীমকে গুলি করল সাক্ষীর এ দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাত নং সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারী বিষয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ পিরোজপুরের মামলায় সে বলেছেন, ইব্রাহীমকে কে মেরেছে তা সে দেখেনি। কে মেরেছে তা সে জানেনা। কাজেই ট্রাইব্যুনালে এসে সে দেখেছে মর্মে যে কথা বলেছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কিন্তু পিরোজপুর মেজিস্ট্রেট এর কাছে সে কি বলেছে বা না বলেছে সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি। আগে বলনি এখন কেন একথা বলছ এ মর্মে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি।
তাহলে আসলে বিষয়টি দাড়ায় কি? দাড়ায় যেম মানিক পসারীদের বাড়িতে আসার ঘটনা, ইব্রাহীম এবং মফিজকে ধরে নিয়ে যাওয়া, আগুন দেয়া, লুটপাট করাম উর্দুতে কি যেন বলা, গুলি করা মর্মে যেসব কথা সাক্ষীরা বলেছে তার সবই রয়ে গেল।
এছাড়া পিরোজপুরে সংঘটিত ১৯৭১ সালের ঘটনা নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ এবং ভোরেরকাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন যা রাষ্ট্রপক্ষ দাখিল করেছে তা থেকে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন বিচার শুরুর ১০ বছর আগে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনে ঘটনার যে বিবরন রয়েছে তার সাথে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনিত অভিযোগের মিল রয়েছে। বিচার শুরুর আগেই এসব খবর ছাপা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে আরো স্পষ্ট যে, এসব ঘটনা লোকজন জানত। এতে আরো প্রমানিত যে, ঘটনার সময় মাওলানা সাঈদী যশোরে ছিলনা। পিরোজপুরেই ছিল।
এসময় একজন বিচারপতি বলেন, জনকন্ঠের প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শর্ন মার্কের সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে হাজির করা উচিত ছিল। তাকে হাজির না করা প্রসিডিউরাল ভুল।
এছাড়া ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রানী বেগম, সিতারা বেগম এবং মো; মোস্তফার জবানবন্দী ছাড়াও ১৯ (২) ধারায় আরো যাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়েও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অষ্টম অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা ও মানিক পসারীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ লুটপাট বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন গতকাল। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানী গ্রহন করেন।
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং জেরা থেকে সংশ্লিষ্ট অংশ পড়ে শোনান আদালতে। এরপর তিনি এ অভিযোগের বিরুদ্ধে আসামী পক্ষের উপস্থাপিত যুক্তির জবাব দেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের ছয় নং সাক্ষী মানিক পসারীর জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান তিনি। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে মানিক পসারী ‘ইব্রাহিম আমাদের বাড়িতে কাজ করত। ১৯৭১ সালে ৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রেজাকার মবিন, হাকিম কারী, সোবহান মাওলানাসহ আরো অনেকে রেজাকার আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে আমি বাড়ির পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি এবং সব ঘটনা দেখতে থাকি। তারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন ( বাড়িতে কাজ করত) এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে আর্মিরা ধরে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ঘরে কেরোসিন ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে বেঁধে পাড়েরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পাড়েরহাট বাজারের মধ্যে ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সপ্তম সাক্ষী মফিজউদ্দিন পসারীর জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান। ১৯৭১ সালের ৮ মে সকালে গরু মহিষ নিয়ে চরে যাই। সাথে ইব্রাহিম কুট্টিও ছিল। কিন্তু আনুমানিক ১০/১১টার দিকে চরে বসে বসে মামার বাড়িতে বাড়িতে আগুন এবং ধোয়া দেখতে পাই। তারপর মামার বাড়ির দিকে ফিরে আসি। ১২/১৪ জন পাক আর্মি, ২০/২২ জন রাজাকার মামার বাড়ি যাচ্ছে দেখতে পাই। তার মধ্যে দিলু শিকদার ছিল। আমরা পালাতে চাইলে পাক আর্মি ধরে ফেলে। দিলু শিকদার ইব্রাহীমের চুল ধরে বলে “শুয়ারের বাচ্চা যাচ্ছো কোথায়”। রাজাকার মবিন, রাজ্জাক আরো কয়েকজন আমাদের দুজনকে এক দড়িতে বাঁধে। এরপর রাজাকাররা ঘরে ঢুকে লুটপাট করে এবং কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেকেন্দা শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মবিন, রাজ্জাক দিলু শিকদারসহ আরো অনেক রাজাকার তেল ছিটিয়ে ঘরে আগুন দিতে বলে। তারপর আমাদের দুজনকে পারেরহট বাজারে নিয়ে যায়। বাজারের মধ্যে ব্রিজের মাঝখানে নিয়ে ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করে সইজুদ্দীন পসারী, মানিক পসারী কোথায় থাকে। তুই তো সইজুদ্দীনের বডি গার্ড । তুই জানিস তারা কোথায়। না বললে তোকে গুলি করব। এরপর পুল থেকে নামিয়ে দিলু শিকদার (তাদের ভাষায় দিলু শিকদার মানে মাওলানা সাঈদী) সেকেন্দার শিকাদর উর্দুতে কি যেন বলল। আমি উর্দু বুঝিনা এবং কি বলেছিল তা শুনতে পাইনি। এরপর ইব্রাহিমকে দড়ি থেকে খুলে ছেড়ে দিল এবং আমাকে নিয়ে সামনের দিকে গেল।
তারপর গুলির শব্দ শুনতে পাই। ইব্রাহিম মা বলে চিৎকার করে।
পেছনে তাকিয়ে দেখি ইব্রাহিমকে গুলি করছে।
এ পর্যায়ে একজন বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, আপনি যা পড়ে শোনাচ্ছেন এগুলো আসামীপক্ষ ইতোমেধ্য দুইবার আমাদের পড়ে শুনিয়েছে। আপনার এগুলো পড়ার দরকার নেই। আপনি টেকনিক্যাল পয়েন্ট আউট করেন।
তখন অ্যটর্নি জেনারেল ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে সংক্ষেপে অন্যান্য সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে পড়ে শোনান।
রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার বলেছেন, ‘ রইজুদ্দীন সইজুদ্দীন পসারীর বাড়িতে দুজন লোক থাকত মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহীম কুট্টি নামে। তারা চরে গিয়েছিল গরু চড়াতে।
তারা আগুন দেখে দৌড়ে আসে। এসময় দেলোয়ার শিকদার তাদের চাইপপা ধরে এবং মফিজ উবরাইয়া পরে যায়। পাক আর্মি ধরে ইব্রাহিম কুট্টিকে। তাদের এক দাড়িতে বেঁধে পারেরহাট বাজারে নিয়ে যায়। তারপর মফিজকে পারেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে আর ইব্রাহিমকে নেয়া হয় থানার ঘাটের দিকে। তারপর গুলির শব্দ শুনি। থানার ঘাটের কাছে ব্রিজের গোড়ায় ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়।’
দশম সাক্ষী বাসুদেব বলেছেন, ‘মে মাসের ৮ তারিখে পাঞ্জাবী আর্মি, রাজাকার, শান্তি বাহিনীর লোকজন মানিক পসারীর বাড়িতে আসে। তাদের আসতে দেখে বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। তারা বাড়িতে ঢুকল। ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ উদ্দিন মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করত। ওদের ধরে বেঁধে ফেলল। দিলু শিকদার, সেকেন্দার আলী শিকদার, মোসলেম মাওলানা, দানেশ আলী মোল্লা, রুহুল আমিন, হাকমি কারী মোমিন এদের দেখেছি তখন। এদের চিনি। ওরা ধান চাউল সব লুটপাট করে নিয়ে গেল ভাগ করে। আর দামি মালামাল নিল দিলু শিকদার। এরপর দিলু আর অন্য রাজাকাররা মিলে ঘরে আগুন দিল। ইব্রাহীম আর মফিজকে নিয়ে রওয়ান দিল। বাজারের ব্রিজের ওপর উঠল। তারপর দেলোয়ার সাঈদী হেগো লগে (পাক আর্মি) কি যেন বলল। আমরা আড়ালে বসে দেখছি। ইব্রাহীমকে বাঁধন খুলে ব্রিজ পার হয়ে ঘাটের দিকে নিয়ে গেল। মফিজকে নিয়ে গেল ক্যাম্পের দিকে। আর ইব্রাহীমকে গুলি দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর আমরা দৌড়ে বাড়ি যাই।’
১১ তম সাক্ষী আব্দুল জলিল শেখ বলেছেন, ১৯৭১ সালের ৮ মে দেলোয়ার হোসেন দিলু, দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, আরো কয়েকজন রাজাকার মিলে ১০/১৫ জনের একটি দল এবং পাক সেনা মিলে আমাদের চিথলিয়া গ্রামে আসে। তাদের আসতে দেখে বাড়ির লোকজন আশপাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। আমিও তাদের সাথে জঙ্গলে আশ্রয় নেই। দিলু রাজাকার, দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার কুট্টিকে ধরে ফেলে। তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে উঠানে ফেলে রাখে। এরপর তারা ঘরের ভেতর ঢকে। ভেতরে ঢুকে ধান চাউল যা ছিল সব কিছু লাটপাট করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। ঘরের মধ্যে থাকা টাকা পয়সা, সোনদানা মূল্যবান জিনিসপত্র রাজাকার ও পিস কমিটির লোকজন ভাগবাটোয়রা করে পকেটে করে নিয়ে যায়। এরপর দেলোয়ার, সেকেন্দার শিকদার এবং দানেশ মোল্লা তিনজন মিলে ঘরে রাখা কেরোসিন ভাগ ভাগ করে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন পরা ধইরা যাবার পর উঠানে নাইম্যা মফিজ ও কুট্টিকে লইয়া বাজারের দিকে রওয়ানা দেয়। আমরাও পেছনে পেছনে যাই। বাজারের ব্রিজ পারা হইয়া ওপারে যাইয়া কুট্টির বান ছেড়ে । এরপর তাকে থানার ঘাটের দিকে নিয়ে গুলি করে। দেলোয়ারের ইশারায় আর্মি গুলি করে। এরপর মফিজকে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে যায়। তারপর আমরা বাড়ি চইল্লা আসি’
১২ তম সাক্ষী একেএমএ আউয়াল বলেছেন, ‘পাড়েরহাট এলাকা হিন্দু অধ্যূসিত এলাকা হওয়ায় ও ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের সমর্থকের সংখ্যাধিক্য থাকায় ঐ এলাকায় লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। যুদ্ধকালীন সময় আমার নিজ ইউনিয়ন শংকরপাশার বাদুরা, চিথলিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম, রইজ্দ্দুীন পসারী, সইজুদ্দিন পসারী, মানিক পসারীসহ হিন্দু পাড়া একদিনে একটানা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল । ঐ পোড়া বাড়িঘর আমি স্বাধীনতার পরে এসে দেখেছি। দানেশ মোল্লা, সেকান্দার শিকদার, শুনেছি সাঈদী সাহেবও তাদের সাথে ছিলেন। ’
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার শ্যালক মো: মোস্তফা, শ্যালিকা রানী বেগম এবং শাশুড়ী সিতারা বেগম তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী প্রদান করে তা ১৯ (২) ধারায় ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে। তারা কেউ সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসেনি। ১৯ (২) ধারায় গৃহীত তাদের জবানবন্দী আদালতে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তারা তিনজনই বলেছেন তারা জানতে পেরেছেন ইব্রাহীম কুট্টিকে মানিক পসারীর বাড়ি থেকে মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্যরা ধরে নিয়ে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করে । তারা তার লাশ আনার জন্য পাড়েরহাট বাজারে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদেরকে ভয় দেখানোর পর তারা ফিরে আসেন। তারা জানতে পেরেছেন ইব্রাহীম কুট্টির লাশ দুইদিন পর পানিতে ফেলে দেয়া হয়।
শুনানীর সময় একজন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এ তিন সাক্ষী বলেছেন, দুই দিন পর তার লাশ পানিতে ফেলে দেয়া হয়। অপরদিকে ট্রাইব্যুনালে কয়েক সাক্ষী বলেছেন গুলি করার পর লাশ লাথি মেরে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এ বিষয়ে আপনার জবাব কি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ তিনজন সাক্ষী শোনা সাক্ষী। তারা শুনেছেন দুইদিন পর লাশ নদীতে ফেলা হয়েছে। তারা গিয়েছিল লাশ আনতে। ভয়ে চলে এসেছে। তখনকার যে পরিস্থিতি তাতে তার শাশুড়ীর পক্ষে সেখানে যাওয়া কি সম্ভব? তাছাড়া লাশ লাথি মেরে ফেলার পর তা কি তোলা যায়না আবার?
এসময় আরেকজন বিচারপতি বলেন আসামী পক্ষের অভিযোগ মানিক পসারীর অভিযোগে ইব্রাহীমের পিতার নাম দুই জায়গায় দুই রকম এসেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা হতেই পারে। হয়ত ভুল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত একটা ডকুমেন্টে যদি তার পিতার নাম আলাদা থাকতে পারে। কিন্তু মূল বিষয় হল ইব্রাহীম নিহত হয়েছে। কিন্তু মানিক পসারীর বাড়িতে প্রবেশের সময় সাঈদীর নাম আছে। লুটপাট আগুন দেয়অম জঙ্গলে বসে ঘটনা দেখার বিষয়ে কোন ডিনায়াল দেয়নি আসামী পক্ষ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে আসামী পক্ষের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল তাকে নলবুনিয়ায় হত্যা করা হয়েছে।
এসময় একজন বিচারপতি বলেন, ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম যে মামলা করেছে তাতে মাওলানা সাঈদীকে আসামী করেনি। তাছাড়া ইব্রাহীমকে হত্যা বিষয়ে মমতাজ বেগমের বক্তব্যের সাথে তার বোন, মা এবং ভাইয়ের জবানবন্দীর মিল নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ছয় নং সাক্ষী বিষয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ হল বাড়ি পোড়ানোর পর সে মামার বাড়ি ওঠে। ১৫ দিন পর নিজ বাড়িতে আসে। সে বাড়িতে ছিলনা। কাজেই বাড়ি পোড়ানো দেখল কি করে? তাছাড়া পিরোজপুর মামলায় সে মফিজের নাম বলেনি।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষ তাকে জেরায় শুধু সাজেশন দিয়ে বলেছে সে সোনাদানা লুট এবং ইব্রাহীম ও মফিজকে একই দড়িতে বাঁধার কথা তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেনি। কিন্তু পুরো ঘটনার মধ্যে বাকী সবই রয়ে গেছে । সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি।
পুলের গোড়ায় নিয়ে ইব্রাহীমকে হত্যা, আগুন দেয়া, লুটপাট এবং তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে সাজেশন দেয়া হয়নি। পুলের গোড়ায় নিয়ে দেলোয়ার শিকদার, সেকেন্দার শিকদার পাকিস্তান আর্মির সাথে কি যেন পরামর্শ করল তারপর ইব্রাহীমকে গুলি করল সাক্ষীর এ দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাত নং সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারী বিষয়ে আসামী পক্ষের অভিযোগ পিরোজপুরের মামলায় সে বলেছেন, ইব্রাহীমকে কে মেরেছে তা সে দেখেনি। কে মেরেছে তা সে জানেনা। কাজেই ট্রাইব্যুনালে এসে সে দেখেছে মর্মে যে কথা বলেছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কিন্তু পিরোজপুর মেজিস্ট্রেট এর কাছে সে কি বলেছে বা না বলেছে সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি। আগে বলনি এখন কেন একথা বলছ এ মর্মে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি।
তাহলে আসলে বিষয়টি দাড়ায় কি? দাড়ায় যেম মানিক পসারীদের বাড়িতে আসার ঘটনা, ইব্রাহীম এবং মফিজকে ধরে নিয়ে যাওয়া, আগুন দেয়া, লুটপাট করাম উর্দুতে কি যেন বলা, গুলি করা মর্মে যেসব কথা সাক্ষীরা বলেছে তার সবই রয়ে গেল।
এছাড়া পিরোজপুরে সংঘটিত ১৯৭১ সালের ঘটনা নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ এবং ভোরেরকাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন যা রাষ্ট্রপক্ষ দাখিল করেছে তা থেকে পড়ে শোনান অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন বিচার শুরুর ১০ বছর আগে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনে ঘটনার যে বিবরন রয়েছে তার সাথে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনিত অভিযোগের মিল রয়েছে। বিচার শুরুর আগেই এসব খবর ছাপা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে আরো স্পষ্ট যে, এসব ঘটনা লোকজন জানত। এতে আরো প্রমানিত যে, ঘটনার সময় মাওলানা সাঈদী যশোরে ছিলনা। পিরোজপুরেই ছিল।
এসময় একজন বিচারপতি বলেন, জনকন্ঠের প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শর্ন মার্কের সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে হাজির করা উচিত ছিল। তাকে হাজির না করা প্রসিডিউরাল ভুল।
এছাড়া ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে রানী বেগম, সিতারা বেগম এবং মো; মোস্তফার জবানবন্দী ছাড়াও ১৯ (২) ধারায় আরো যাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়েও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন