মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জামায়াতের নাম পরিবর্তন করে বা ভিন্ন নামেও যাতে কেউ এদেশে জামায়াতের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে না পারে সে দাবিও জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। একই সাথে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা নিষিদ্ধের আবেদন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা এবং নানাবিধ অপরাধমূলক কার্যক্রম, পরিচালনার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির তৎকালীন সংশ্লিষ্ট অঙ্গসঙ্গঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তাই ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারা মোতাবেক জামায়াতে ইসলামী ও দলটির অঙ্গসংগঠনের বিচারের আবেদন করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া উপলক্ষে আজ তদন্ত সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ‘যদি তদন্তে প্রমানিত হয় যে, বর্তমান ইসলামী ছাত্রশিবির তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘেরই উত্তরসুরী হিসেবে কাজ করছে তাহলে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমও বন্ধের দাবি জানানো হবে।’ সাংবাদ সম্মেলনে আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক জানান, ‘জামায়াতের সহায় সম্পত্তিও জব্দ করা যেতে পারে।’
সূত্র জানিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে জামায়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত শতাধিক আর্থিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা যুক্তি করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে।
ধানমন্ডিতে অবস্থিত তদন্ত সংস্থার সেফহোমে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় আজ (মঙ্গলবার) আমরা চিফ প্রসিকিউটরের (ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। তবে বিকালে তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায় আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত আজ দাখিল করা যায়নি। আগামীকাল বৃহষ্পতিবার অথবা রোববার প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করা হবে।
নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ আকারে বিচারের জন্য পেশ করা হবে ট্রাইব্যুনালের কাছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকার কারনে জামায়াতে ইসলামী ও এর সকল স্তরের নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে জামায়াতে ইসলামী এবং সেসময় তাদের অঙ্গসঙ্গঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক। ২০১৩ সালের আগস্ট মাস হতে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘তদন্তকালে প্রাপ্ত ও উদঘাটিত সাক্ষ্য প্রমান পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয় যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী’ ও তার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, ও আল শামস বাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম মানবতাবিরোধী, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইনে বর্নিত অন্যান্য অপরাধ, অপরাধ সংগঠনে সহায়তা, ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা প্রভৃতি অপরাধ করেছে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৪ (১) ও ৪ (২) ধারা অনুযায়ী। অভিযুক্ত সংগঠনসমূহের নীতি, নীতি নির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী সকলেই উপরোক্ত অপরাধসংগঘটনের জন্য দায়ী। তাই অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদরম আলশামস বাহিনী এবং দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ট্রাইব্যুনাল আইনের বর্ণিত ধারায় অপরাধ সংঘটন করায় অপরাধী সংগঠন হিসেবে ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য অত্র প্রতিবেদন দাখিল করলাম।’
এসময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, জামায়াতের সেসময়কার অঙ্গসংগঠন তো এখন নেই। এখন আছে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির বিষয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত কি। জবাবে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, যদি প্রমানিত হয় যে, ছাত্রশিবির ছাত্রসংঘেরই উত্তরসুরী তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাব।
সাংবাদিকরা এসময় প্রশ্ন করেন, মুসলিম লীগ, পিডিব, নেজামে ইসলাম, কনভেনশন মুসলিম লীগ প্রভৃতি দলও তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের বিষয়ে আপনারা কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন। জবাবে সানাউল হক বলেন, আপাতত তাদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এসব সংগঠনও স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নিলেও পরে তাদের কার্যক্রম কম গুরুত্বপূর্ণ ওয়ে ওঠে জামায়াতই মুখ্য বিরোধীতাকারী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়।
জামায়াতকে কিভাবে এবং কি কারনে অপরাধী সংগঠন হিসেবে সাব্যস্ত করে বিচার চেয়েছেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, জামায়াত ১৯৭১ সালে একটি দল হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান নেয় এবং পাকিস্তান আর্মির সাথে যোগ দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা এবং অংশগ্রহণ করে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েই শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস এবং রাজাকার বাহিনী গঠন করে এবং এসব সংগঠন নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করেছে। তাই এসব অপরাধের দায়ভার দলের ওপরও বর্তায়। তিনি বলেন, আমরা আদর্শ হিসেবে জামায়াতের নিষিদ্ধ চাইব। আমরা চাই এখানেই এর সমাপ্তি চাই (ঞযব ঊহফ) ।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, গত বছর জামায়াত দল হিসেবে সারা দেশে যেসব হত্যা এবং সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে তাও আমরা কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করেছি।
সংগঠনের বিরুদ্ধে বিচারের সময় আসামীর কাঠগড়ায় কে দাড়াবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের দায়িত্বে যারা আছে তাদের দায়িত্ব এটা ডিফেন্ড করা । তারা যদি কেউ না আসে তাহলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার হবে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে দলের কাছে নোটিশ যাবে।
জামায়াতের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারায় বর্নিত সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এগুলো হল মানবতাবিরোধী অপরাধ, গনহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনে বর্নিত সশস্ত্রযুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোন নিয়ম ভঙ্গ, আন্তর্জাতিক আইনে বর্নিত অন্য কোন ধরনের অপরাধ, এ ধরনের কোন অপরাধ সংঘঠনের জন্য ষড়যন্ত্র, সহযোগিতা এবং উদ্যোগ গ্রহণ, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা এ ধরনের কোন অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা ।
জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে দলটির অঙ্গংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনাকালে মূলত ১৯৭১ সালে জামায়াতের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে তদন্তের অংশ হিসেবে। পাশাপাশি
দলটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বের ও পরবর্তী কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। ১৯৪১ সালে দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহে এ দলের ভূমিকা এবং অবস্থান, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সায়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী রচিত বিভিন্ন বই, তার চিন্তা, দর্শন, অধ্যাক গোলাম আযমসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের লেখা বই পুস্তক, জামায়াত বিরোধী বিভিন্ন লোকজনের লেখা বেশকিছু বই পুস্তক পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং এর ওপর নির্ভর করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের দৈনিক সংগ্রামসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবর, সরাসরি জামায়া পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও তদন্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মূল প্রতিবেদনটি ৩৭৩ পৃষ্ঠার। জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমানপত্র সাতটি খন্ডে মোট দুই হাজার ৩০৩ পৃষ্ঠা। অন্যান্য ডকুমেন্ট ১০ খন্ডে তিন হাজার ৭৬১ পৃষ্ঠা। বই পুস্তক রয়েছে দুই শতাধিক। জামায়াতের অনেক নিজস্ব প্রকশানা সংগ্রহ করে ডকুমেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাক্ষীর সংখ্যা ৭০ জন।
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। জামায়াতের নাম পরিবর্তন করে বা ভিন্ন নামেও যাতে কেউ এদেশে জামায়াতের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে না পারে সে দাবিও জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। একই সাথে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা নিষিদ্ধের আবেদন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা এবং নানাবিধ অপরাধমূলক কার্যক্রম, পরিচালনার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির তৎকালীন সংশ্লিষ্ট অঙ্গসঙ্গঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তাই ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারা মোতাবেক জামায়াতে ইসলামী ও দলটির অঙ্গসংগঠনের বিচারের আবেদন করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া উপলক্ষে আজ তদন্ত সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ‘যদি তদন্তে প্রমানিত হয় যে, বর্তমান ইসলামী ছাত্রশিবির তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘেরই উত্তরসুরী হিসেবে কাজ করছে তাহলে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমও বন্ধের দাবি জানানো হবে।’ সাংবাদ সম্মেলনে আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক জানান, ‘জামায়াতের সহায় সম্পত্তিও জব্দ করা যেতে পারে।’
সূত্র জানিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে জামায়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত শতাধিক আর্থিক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা যুক্তি করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে।
ধানমন্ডিতে অবস্থিত তদন্ত সংস্থার সেফহোমে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় আজ (মঙ্গলবার) আমরা চিফ প্রসিকিউটরের (ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। তবে বিকালে তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায় আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত আজ দাখিল করা যায়নি। আগামীকাল বৃহষ্পতিবার অথবা রোববার প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করা হবে।
নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ আকারে বিচারের জন্য পেশ করা হবে ট্রাইব্যুনালের কাছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকার কারনে জামায়াতে ইসলামী ও এর সকল স্তরের নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে জামায়াতে ইসলামী এবং সেসময় তাদের অঙ্গসঙ্গঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক। ২০১৩ সালের আগস্ট মাস হতে জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘তদন্তকালে প্রাপ্ত ও উদঘাটিত সাক্ষ্য প্রমান পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয় যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী’ ও তার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, ও আল শামস বাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম মানবতাবিরোধী, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইনে বর্নিত অন্যান্য অপরাধ, অপরাধ সংগঠনে সহায়তা, ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা প্রভৃতি অপরাধ করেছে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৪ (১) ও ৪ (২) ধারা অনুযায়ী। অভিযুক্ত সংগঠনসমূহের নীতি, নীতি নির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী সকলেই উপরোক্ত অপরাধসংগঘটনের জন্য দায়ী। তাই অভিযুক্ত সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদরম আলশামস বাহিনী এবং দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ট্রাইব্যুনাল আইনের বর্ণিত ধারায় অপরাধ সংঘটন করায় অপরাধী সংগঠন হিসেবে ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য অত্র প্রতিবেদন দাখিল করলাম।’
এসময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, জামায়াতের সেসময়কার অঙ্গসংগঠন তো এখন নেই। এখন আছে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির বিষয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত কি। জবাবে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক বলেন, যদি প্রমানিত হয় যে, ছাত্রশিবির ছাত্রসংঘেরই উত্তরসুরী তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাব।
সাংবাদিকরা এসময় প্রশ্ন করেন, মুসলিম লীগ, পিডিব, নেজামে ইসলাম, কনভেনশন মুসলিম লীগ প্রভৃতি দলও তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের বিষয়ে আপনারা কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন। জবাবে সানাউল হক বলেন, আপাতত তাদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এসব সংগঠনও স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নিলেও পরে তাদের কার্যক্রম কম গুরুত্বপূর্ণ ওয়ে ওঠে জামায়াতই মুখ্য বিরোধীতাকারী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়।
জামায়াতকে কিভাবে এবং কি কারনে অপরাধী সংগঠন হিসেবে সাব্যস্ত করে বিচার চেয়েছেন সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, জামায়াত ১৯৭১ সালে একটি দল হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অবস্থান নেয় এবং পাকিস্তান আর্মির সাথে যোগ দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা এবং অংশগ্রহণ করে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েই শান্তি কমিটি, আলবদর, আল শামস এবং রাজাকার বাহিনী গঠন করে এবং এসব সংগঠন নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করেছে। তাই এসব অপরাধের দায়ভার দলের ওপরও বর্তায়। তিনি বলেন, আমরা আদর্শ হিসেবে জামায়াতের নিষিদ্ধ চাইব। আমরা চাই এখানেই এর সমাপ্তি চাই (ঞযব ঊহফ) ।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, গত বছর জামায়াত দল হিসেবে সারা দেশে যেসব হত্যা এবং সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে তাও আমরা কেস ডায়েরিতে উল্লেখ করেছি।
সংগঠনের বিরুদ্ধে বিচারের সময় আসামীর কাঠগড়ায় কে দাড়াবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের দায়িত্বে যারা আছে তাদের দায়িত্ব এটা ডিফেন্ড করা । তারা যদি কেউ না আসে তাহলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার হবে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে দলের কাছে নোটিশ যাবে।
জামায়াতের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের আইনের ধারায় বর্নিত সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এগুলো হল মানবতাবিরোধী অপরাধ, গনহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনে বর্নিত সশস্ত্রযুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোন নিয়ম ভঙ্গ, আন্তর্জাতিক আইনে বর্নিত অন্য কোন ধরনের অপরাধ, এ ধরনের কোন অপরাধ সংঘঠনের জন্য ষড়যন্ত্র, সহযোগিতা এবং উদ্যোগ গ্রহণ, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা এ ধরনের কোন অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতা ।
জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে দলটির অঙ্গংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনাকালে মূলত ১৯৭১ সালে জামায়াতের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে তদন্তের অংশ হিসেবে। পাশাপাশি
দলটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বের ও পরবর্তী কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। ১৯৪১ সালে দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহে এ দলের ভূমিকা এবং অবস্থান, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সায়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী রচিত বিভিন্ন বই, তার চিন্তা, দর্শন, অধ্যাক গোলাম আযমসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের লেখা বই পুস্তক, জামায়াত বিরোধী বিভিন্ন লোকজনের লেখা বেশকিছু বই পুস্তক পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং এর ওপর নির্ভর করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের দৈনিক সংগ্রামসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবর, সরাসরি জামায়া পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও তদন্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মূল প্রতিবেদনটি ৩৭৩ পৃষ্ঠার। জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমানপত্র সাতটি খন্ডে মোট দুই হাজার ৩০৩ পৃষ্ঠা। অন্যান্য ডকুমেন্ট ১০ খন্ডে তিন হাজার ৭৬১ পৃষ্ঠা। বই পুস্তক রয়েছে দুই শতাধিক। জামায়াতের অনেক নিজস্ব প্রকশানা সংগ্রহ করে ডকুমেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাক্ষীর সংখ্যা ৭০ জন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন