মেহেদী হাসান, ২৮/১/২০১৪
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তি পেশ শুরু করেছেন। এর আগে এ মামলায় এভিডেন্স ( জবানবন্দী, জেরা এবং রায়) পাঠ শেষ হয়।
প্রথম দিন একটি অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করা হয়েছে।
যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান মামলার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে এবং দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে। প্রমানিত আটটি অভিযোগ হল ৬,৭,৮,১০,১১,১৪,১৬ এবং ১৯। ৮ এবং ১০ নং অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, যে আটটি অভিযোগে তাকে সাজা প্রদান করা হয়েছে সে বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ শুরু করে বলেন, এ অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ মে পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আসে এবং মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শান্তি কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর মাওলানা সাঈদীর দেখানো মতে পাড়েরহাট বাজারে আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের দোকানপাট ও বসতবাড়িতে আগুন দেয়।
এ ঘটনা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ১,২,৩,৪,৮,৯,১২ এবং ১৩ নং সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, ‘মে মাসের প্রথম সপ্তায় পাক হানাদার বাহিনী পিরোজপুরে আসে। ৭ মে সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতেই ছিলাম। এবং লোকমুখে শুনতে পাই পাক হানাদার বাহিনী পাড়েরহাট আসিতেছে এবং পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির লোকেরা পাড়েরহাট রিক্সা স্ট্যান্ডে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে। আমি পাড়েরহাটে যাইয়া রিক্সা স্ট্যান্ডের আড়ালে থেকে গোপনে লক্ষ্য করিতেছি পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির লোকের দাড়িয়ে আছে। কিছু পরে একেকটি রিক্সা করে ২৬টি রিক্সায় ৫২ জন পাক হানাদার বাহিনী রিক্সা স্ট্যান্ডে নামে। শান্তি কমিটির লোকেরা তাদের অভ্যর্থনা জানায়। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী উর্দুভাষা ভাল জানতেন বিধায় ক্যাপ্টেন ইজাজের সাথে কথা বলেন। পরে বাজারের দিকে পাক হানাদার বাহিনী যেতে থাকে। শান্তি কমিটির লোকেরা বাজারের ভেতরের দিকে যায়। মুক্তিযোদ্ধার পক্ষের আওয়ামী লীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের দোকানঘর, বসতঘর ক্যাপ্টেন ইজাজকে দেখিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন ইজাজ লুটের নির্দেশ দেয়। লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমি অকুস্থল থেকে কিছু দূরে সরে যাই। পরে জানতে পারি ৩০ থেকে ৩১টি দোকান ঘরের মামামাল, বসতবাড়ি লুটপাট করে সাঈদী সাহেবের নেতৃত্বে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়।’
অ্যাডভোকেট শাহাজাহন বলেন, সাধারনত পাকিস্তান আর্মি আসলে সে এলাকায় একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হত। মানুষ জীবন নিযে পালাত। কিন্তু এ সাক্ষী বলেছেন তিনি আড়ালে থেকে গুনেছেন পাকিস্তান আর্মি একে একে ২৬টি রিক্সা যোগে এসেছে এবং প্রতি রিক্সায় দুজন করে মোট ৫২ জন সৈন্য ছিল। কোন একটি স্থানে লুকিয়ে থেকে ২৬ টি রিক্সা আসতে দেখা, তাতে ৫২ জন আর্মি গননা করা কি সম্ভব? তাছাড়া তিনি বলেলেন লুকিয়ে থেকে ঘটনা দেখেছেন। কাজেই মাওলানা সাঈর্দী কর্তৃক ক্যাপ্টেন ইজাজের সাথে উর্দতে কথা বলা তিনি শুনলেন কিভাবে?
এ পর্যায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা বলেন, ইমপ্রব্যাবল (অভাবনীয়)।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান এরপর বলেন, সাক্ষী মাহবুবুল আলমের এসএসসি রেজিস্ট্রেশন ফর্মে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ২০/৩/১৯৫৯। সে মোতাবেক ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ তার বয়স ছিল ১২ বছর । ৭ মে তার বয়স দাড়ায় ১২ বছর ২ মাসের মতন। রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ নং সাক্ষী বলেছেন মাহবুবুল আলম স্বাধীনতার আগে স্কুল ছাত্র ছিলেন।
এ বয়সের একজন শিশু সাক্ষী বলেছেন, পাকিস্তান আর্মি আসার খবর শুনে তিনি আড়ালে অবস্থান করে পর্যবেক্ষন করেছেন, রিক্সা এবং সৈন্য সংখ্যা গননা করেছেন।
এ পর্যায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা বলেন, আনবিলিভঅ্যাবল। এসময় অপর বিচারপতি এএইএম শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ১২ বছর বয়সে একজন অনেক ম্যাচিউরড হয়ে যায়।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম এ মামলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী। কারণ তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরে মামলা করেছেন এবং পরে ট্রাইব্যুনালে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা এবং মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
এরপর অ্যাডভোকেট শাহাজাহান মাহবুবুল আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য সাক্ষীদের জেরা থেকে মাহবুবুল আলমের সাক্ষ্যকে অসত্য প্রমানের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, সাক্ষী বলেছেন, ‘ লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমি অকুস্থল থেকে কিছু দূরে সরে যাই। পরে জানতে পারি ৩০ থেকে ৩১টি দোকান ঘরের মামামাল, বসতবাড়ি লুটপাট করে সাঈদী সাহেবের নেতৃত্বে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়।’ কাজেই কাদের বাড়িঘর লুটপাট হয়েছে তা তার পক্ষে দেখা এবং বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া জেরায় তিনি বলেছেন মাখন সাহার দোকান লুটের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেননা।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের দুই নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন এর সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান। এ সাক্ষী ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে বলেছেন, ‘৭ মে পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির সেকেন্দার আলী শিকদার, দানেস মোল্লা, মাওলানা মোসলেহউদ্দিন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব সহ আরো কয়েকন পারের হাটে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য রিক্সা স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকে। ২৬টি রিক্সাযোগে প্রায় ৫২ জন পাক হানাদার বাহিনী পারের হাটে প্রবশে করে। শান্তি কমিটির লোকজন পাক হানাদারদের নিয়ে পারেরহাট বাজারে প্রবেশ করে এবং আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের বাড়িঘর দোকানপাট দেখিয়ে দেয়। শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের দেখিয়ে দেওয়া ঘরগুলোতে শুরু হয় লুটপাট। পারের হাট বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাখন সাহার দোকানের মাটির নিচের লোহার সিন্দুক থেকে ২২ শের স্বর্ণ ও রূপা লুট করে। ৩০/৩৫টি দোকান ঘর লুটাপাট চালায়। ’
অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, জেরায় সাক্ষী বলেছেন, মাখন সাহার দোকানে গর্ত করার খবরটা তিনি শুনেছেন বিকালে। আর ৩০/৩৫টি দোকান লুটের খবর তিনি জানতে পেরেছেন সন্ধ্যায়। তার মানে ঘটনার সময় সে সেখানে ছিলনা এবং দেখেনওনি। তিনি শুনেছেন।
তাছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের ৯ নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন সম্পর্কে বলেছেন ৭ মে’র অনেক আগে তিনি পাড়েরহাট ছেড়ে চলে গেছেন। ৯ নং সাক্ষী আরো বলেছেন, পাড়েরহাটে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে রুহুল আমিন নবিনের নাম তার মনে আছে। কাজেই ৯ নং সাক্ষী যে দাবি করেছেন অর্থাৎ ৭ মে’র আগেই নবিন পাড়েরহাট ছেড়ে চলে গেছে এটা স্বাভাবিক। কারণ যারা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজ করেছে ২৫ মার্চের পর তাদের এলাকায় না থাকাই স্বাভাবিক। কাজেই রুহুল আমিন নবিন ৭ মে পাড়েরহাট ছিলেননা এবং ওই দিন তিনি মাওলানা সাঈদীকে পাড়েরহাট দেখেছেন মর্মে যে ঘটনার বিবরন দিয়েছেন তা অসত্য।
তাছাড়া নুরুল হক মৌলভির যে মামুস স্টোরের সামনে দাড়িয়ে তিনি ঘটনা দেখার কথা বলেছেন তা তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি বলে জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
যুক্তি উপস্থাপন আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, সাইফুর রহমান, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল আবেদন মামলায় যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তি পেশ শুরু করেছেন। এর আগে এ মামলায় এভিডেন্স ( জবানবন্দী, জেরা এবং রায়) পাঠ শেষ হয়।
প্রথম দিন একটি অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করা হয়েছে।
যুক্তি উপস্থাপনের শুরুতে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান মামলার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে এবং দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে। প্রমানিত আটটি অভিযোগ হল ৬,৭,৮,১০,১১,১৪,১৬ এবং ১৯। ৮ এবং ১০ নং অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, যে আটটি অভিযোগে তাকে সাজা প্রদান করা হয়েছে সে বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে যুক্তি পেশ শুরু করে বলেন, এ অভিযোগে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ মে পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাট বাজারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আসে এবং মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শান্তি কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর মাওলানা সাঈদীর দেখানো মতে পাড়েরহাট বাজারে আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের দোকানপাট ও বসতবাড়িতে আগুন দেয়।
এ ঘটনা বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ১,২,৩,৪,৮,৯,১২ এবং ১৩ নং সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, ‘মে মাসের প্রথম সপ্তায় পাক হানাদার বাহিনী পিরোজপুরে আসে। ৭ মে সকাল বেলা আমি নিজ বাড়িতেই ছিলাম। এবং লোকমুখে শুনতে পাই পাক হানাদার বাহিনী পাড়েরহাট আসিতেছে এবং পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির লোকেরা পাড়েরহাট রিক্সা স্ট্যান্ডে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে। আমি পাড়েরহাটে যাইয়া রিক্সা স্ট্যান্ডের আড়ালে থেকে গোপনে লক্ষ্য করিতেছি পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির লোকের দাড়িয়ে আছে। কিছু পরে একেকটি রিক্সা করে ২৬টি রিক্সায় ৫২ জন পাক হানাদার বাহিনী রিক্সা স্ট্যান্ডে নামে। শান্তি কমিটির লোকেরা তাদের অভ্যর্থনা জানায়। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী উর্দুভাষা ভাল জানতেন বিধায় ক্যাপ্টেন ইজাজের সাথে কথা বলেন। পরে বাজারের দিকে পাক হানাদার বাহিনী যেতে থাকে। শান্তি কমিটির লোকেরা বাজারের ভেতরের দিকে যায়। মুক্তিযোদ্ধার পক্ষের আওয়ামী লীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের দোকানঘর, বসতঘর ক্যাপ্টেন ইজাজকে দেখিয়ে দেয়। ক্যাপ্টেন ইজাজ লুটের নির্দেশ দেয়। লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমি অকুস্থল থেকে কিছু দূরে সরে যাই। পরে জানতে পারি ৩০ থেকে ৩১টি দোকান ঘরের মামামাল, বসতবাড়ি লুটপাট করে সাঈদী সাহেবের নেতৃত্বে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়।’
অ্যাডভোকেট শাহাজাহন বলেন, সাধারনত পাকিস্তান আর্মি আসলে সে এলাকায় একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হত। মানুষ জীবন নিযে পালাত। কিন্তু এ সাক্ষী বলেছেন তিনি আড়ালে থেকে গুনেছেন পাকিস্তান আর্মি একে একে ২৬টি রিক্সা যোগে এসেছে এবং প্রতি রিক্সায় দুজন করে মোট ৫২ জন সৈন্য ছিল। কোন একটি স্থানে লুকিয়ে থেকে ২৬ টি রিক্সা আসতে দেখা, তাতে ৫২ জন আর্মি গননা করা কি সম্ভব? তাছাড়া তিনি বলেলেন লুকিয়ে থেকে ঘটনা দেখেছেন। কাজেই মাওলানা সাঈর্দী কর্তৃক ক্যাপ্টেন ইজাজের সাথে উর্দতে কথা বলা তিনি শুনলেন কিভাবে?
এ পর্যায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা বলেন, ইমপ্রব্যাবল (অভাবনীয়)।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান এরপর বলেন, সাক্ষী মাহবুবুল আলমের এসএসসি রেজিস্ট্রেশন ফর্মে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ২০/৩/১৯৫৯। সে মোতাবেক ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ তার বয়স ছিল ১২ বছর । ৭ মে তার বয়স দাড়ায় ১২ বছর ২ মাসের মতন। রাষ্ট্রপক্ষের ১৩ নং সাক্ষী বলেছেন মাহবুবুল আলম স্বাধীনতার আগে স্কুল ছাত্র ছিলেন।
এ বয়সের একজন শিশু সাক্ষী বলেছেন, পাকিস্তান আর্মি আসার খবর শুনে তিনি আড়ালে অবস্থান করে পর্যবেক্ষন করেছেন, রিক্সা এবং সৈন্য সংখ্যা গননা করেছেন।
এ পর্যায়ে বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা বলেন, আনবিলিভঅ্যাবল। এসময় অপর বিচারপতি এএইএম শামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ১২ বছর বয়সে একজন অনেক ম্যাচিউরড হয়ে যায়।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এক নং সাক্ষী মাহবুবুল আলম এ মামলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী। কারণ তিনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরে মামলা করেছেন এবং পরে ট্রাইব্যুনালে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা এবং মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
এরপর অ্যাডভোকেট শাহাজাহান মাহবুবুল আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য সাক্ষীদের জেরা থেকে মাহবুবুল আলমের সাক্ষ্যকে অসত্য প্রমানের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, সাক্ষী বলেছেন, ‘ লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমি অকুস্থল থেকে কিছু দূরে সরে যাই। পরে জানতে পারি ৩০ থেকে ৩১টি দোকান ঘরের মামামাল, বসতবাড়ি লুটপাট করে সাঈদী সাহেবের নেতৃত্বে ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়।’ কাজেই কাদের বাড়িঘর লুটপাট হয়েছে তা তার পক্ষে দেখা এবং বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া জেরায় তিনি বলেছেন মাখন সাহার দোকান লুটের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেননা।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের দুই নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন এর সাক্ষ্য খন্ডন করে যুক্তি পেশ করেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান। এ সাক্ষী ৬ নং অভিযোগ বিষয়ে বলেছেন, ‘৭ মে পাড়েরহাটের শান্তি কমিটির সেকেন্দার আলী শিকদার, দানেস মোল্লা, মাওলানা মোসলেহউদ্দিন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব সহ আরো কয়েকন পারের হাটে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য রিক্সা স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকে। ২৬টি রিক্সাযোগে প্রায় ৫২ জন পাক হানাদার বাহিনী পারের হাটে প্রবশে করে। শান্তি কমিটির লোকজন পাক হানাদারদের নিয়ে পারেরহাট বাজারে প্রবেশ করে এবং আওয়ামী লীগ ও হিন্দুদের বাড়িঘর দোকানপাট দেখিয়ে দেয়। শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের দেখিয়ে দেওয়া ঘরগুলোতে শুরু হয় লুটপাট। পারের হাট বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মাখন সাহার দোকানের মাটির নিচের লোহার সিন্দুক থেকে ২২ শের স্বর্ণ ও রূপা লুট করে। ৩০/৩৫টি দোকান ঘর লুটাপাট চালায়। ’
অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, জেরায় সাক্ষী বলেছেন, মাখন সাহার দোকানে গর্ত করার খবরটা তিনি শুনেছেন বিকালে। আর ৩০/৩৫টি দোকান লুটের খবর তিনি জানতে পেরেছেন সন্ধ্যায়। তার মানে ঘটনার সময় সে সেখানে ছিলনা এবং দেখেনওনি। তিনি শুনেছেন।
তাছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের ৯ নং সাক্ষী রুহুল আমিন নবিন সম্পর্কে বলেছেন ৭ মে’র অনেক আগে তিনি পাড়েরহাট ছেড়ে চলে গেছেন। ৯ নং সাক্ষী আরো বলেছেন, পাড়েরহাটে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে রুহুল আমিন নবিনের নাম তার মনে আছে। কাজেই ৯ নং সাক্ষী যে দাবি করেছেন অর্থাৎ ৭ মে’র আগেই নবিন পাড়েরহাট ছেড়ে চলে গেছে এটা স্বাভাবিক। কারণ যারা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজ করেছে ২৫ মার্চের পর তাদের এলাকায় না থাকাই স্বাভাবিক। কাজেই রুহুল আমিন নবিন ৭ মে পাড়েরহাট ছিলেননা এবং ওই দিন তিনি মাওলানা সাঈদীকে পাড়েরহাট দেখেছেন মর্মে যে ঘটনার বিবরন দিয়েছেন তা অসত্য।
তাছাড়া নুরুল হক মৌলভির যে মামুস স্টোরের সামনে দাড়িয়ে তিনি ঘটনা দেখার কথা বলেছেন তা তিনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি বলে জেরায় তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
যুক্তি উপস্থাপন আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান, মাওলানা সাঈদীর পক্ষে গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, সাইফুর রহমান, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, তারিকুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন