রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৫

কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানী শেষ কাল রায়

মেহেদী হাসান ,৫/৪/২০১৫
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনের (পুনরায় বিবেবচনা)  রায় কাল।  রিভিউ আবেদনের ওপর আজ  উভয় পক্ষের শুনানী শেষ হয়েছে। শুনানী শেষে কাল  রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ রায় ঘোষনার এ তারিখ নির্ধারণ করেন। রিভিউ আবেদনই হল এ  মামলার সর্বশেষ ধাপ এবং তাই কালকের  এ রায় হল  চুড়ান্ত রায়।

মুহম্মদ কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন শুনানী করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানী করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। 
গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে আদেশ দেন।
নিয়ম অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন দায়ের করে আসামী পক্ষ।

কামারুজ্জামানের আপিল শুনানীর জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের  বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী।

রিভিউ  শুনানী :
ট্রাইব্যুনাল মুহম্মদ কামারুজ্জামানকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ অভিযোগ দুটি হল ৩ নং অভিযোগ যথা সোহাগপুর গণহত্যা এবং ৪ নং অভিযোগ যথা শেরপুরে গোলাম মোস্তফা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা।
আপিল বিভাগের রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে একটি মুত্যুদুন্ডের অভিযোগ (সোহাগপুর গণহত্যা) বহাল রাখা হয়েছে।  মুত্যুদন্ডের  আরেকটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা হয়েছে।

আজ রিভিউ আবেদন শুনানীতে অংশ নিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন  বলেন,

তিন নং অভিযোগ যথা সোহাগপুর গণহত্যার ক্ষেত্রে মূলত তিনজন সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে মুতৃ্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ তিনজন সাক্ষী হল রাষ্ট্রপক্ষের ১১, ১২ এবং ১৩ নং সাক্ষী। এর মধ্যে ১১ নং সাক্ষী হাসনা বেগম শোনা কথার ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন স্বাধীনতার পর তিনি মুরব্বীদের কাছে শুনেছেন সোহাগপুর গণহত্যার সাথে কামারুজ্জামান জড়িত ছিল।
১২ নং সাক্ষী হাফিজা বেওয়া নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন। তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি জেরায় বলেছেন স্বাধীনতার আগে তিনি কামারুজ্জামানকে চিনতেননা। স্বাধীনতার তিন/চার মাস পরে তিনি কামারুজ্জামানকে টিভিতে দেখেছেন।

১৩ নং সাক্ষী করফুলি বেওয়া। তিনিও বলেছেন তার স্বামী হত্যার সাথে কামারুজ্জামান জড়িত। কিন্তু জেরায় তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর তিনি কামারুজ্জামানকে তাদের বাড়ির উঠানে দেখেছেন। আগে চিনতেননা।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাক্ষীরা যদি আসামীকে আগে না চিনে থাকে তাহলে তারা ঘটনাস্থলে আসামীকে সনাক্ত করল কিভাবে।

সোহাগপুর গণহত্যা বিষয়ে আসামী পক্ষ থেকে দুটি বই জমা দেয়া হয়েছিল । মুহম্মদ কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, এ বই দুটিতে কামারুজ্জামানের নাম নেই। রাষ্ট্রপক্ষের ১১ এবং ১৩ নং সাক্ষীর সাক্ষাতকার রয়েছে। মামুনুর রশিদ নামে এক সাংবাদিক তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তারা কামারুজ্জামন সম্পর্কে কিছু বলেননি। কিন্তু বই দুটি ২০১১ এবং ২০১২ সালে প্রকাশিত বিধায় আপিল বিভাগের  রায়ে একে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রকাশিত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

শিশিুর মনির বলেন, তবে রিভিউ আবেদনের ক্ষেত্রে আসামী পক্ষ থেকে নতুন আরেকটি বই জমা দেয়া হয়েছে যা ১৯৭১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং ২০০৮ সালে সর্বশেষ সংস্করন বের হয়। মহিলা মুক্তিযোদ্ধা নামে এ বইটির লেখক ফরিদা আখতার।

আজ  এ বই থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরে যুক্তি উপস্থাপন করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তিনি আদালতে বলেন,এ বইটিতে ১৩ নং সাক্ষী করফুলি বেওয়ার  একটি সাক্ষাতকার রয়েছে যা ১৯৯৬ সালে গ্রহণ করা হয়েছে। এ সাক্ষাতকারে  করফুলি বেওয়া বলেছেন, তার স্বামী হত্যার সাথে সেনাবাহিনী জড়িত।
তাই খন্দকার মাহবুব হোসেন এ বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য আদালতের প্রতি নিবেদন করেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যে যুক্তিতে ৪ নং অভিযোগে  ট্রাইব্যুনালের দেয়া মুত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন করা হয়েছে সে যুক্তিতে তিন নং অভিযোগ তথা সোহাগপুর গণহত্যার অভিযোগের সাজাও  পরিবর্তন করা যায়।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রিভিউ আবেদনের বিষয়ে শুনানীতে অংশ নিয়ে আদালতকে বলেন, আলবদর নেতা হিসেবে তখন মুহম্মদ কামারুজ্জামানের যে স্টাটাস ছিল সে কারনে সেখানকার আর্মি অফিসাররা তার কথা শুনে কাজ করত। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে শেরপুরে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হিসেবে মুহাম্মদ কামারজ্জামানের নাম বিভিন্ন বই এবং পত্রিকায় এসেছে।

শুনানীতে খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো : মনির।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন