রবিবার, ৪ মে, ২০১৪

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার রায় যেকোনদিন


জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার রায় যেকোনদিন ঘোষনা করা হবে।  আজ এ মামলার সমস্ত বিচার কার্যক্রম শেষে রায়ের তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বিচার কার্যক্রম শেষে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রায় ঘোষনার তারিখ অপেক্ষমান ঘোষনা করেন।

এর আগে আসামী পক্ষে ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন আইনী দিক তুলে ধরে যুক্তি পেশ করেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সংক্ষেপে আসামী পক্ষের যুক্তির জবাব দেন।
ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন বলেন, সাধারণত সামরিক অফিসারদের বেলায় উর্দ্ধতন নেতৃত্বে দায় বা কমান্ড রেসপনসিবিলিটি আনা হয়। মীর কাসেম আলী একজন বেসামরিক ব্যক্তি। কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বিষয়টি মিলিটারির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আলী আহসান মো : মুজাহিদ এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায়ে তাদের বিরুদ্ধে  কমান্ড রেসপনসিবিলিটির দায় আনার জন্য যে দুটি মামলার উদাহরন দেয়া হয়েছে তারা দুজনই ছিল সামরিক ব্যক্তি। এই উদাহরন এ মামলায় পড়েনা। আর আকা ইউসু এবং মাহিমানা নামে যে দুজন বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এর আগে কমান্ড রেসপনসিবিলিটির দায় আনা হয়েছে তা করা হয়েছে তাদের স্টাটাসের কারনে। ওইসব অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রশাসনিক উচ্চ পদে আসিন ছিল। প্রশাসনিক উচ্চপদে আসীন না হলে এবং তার কোন কর্তৃত্ব না থাকলে তার বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ আনা যায়না।
ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন বলেন, ডালিম হোটেলের মালিক ডালিম হোটেল দখলদার মইত্যা গুন্ডার বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং সেখানে তিনি মীর কাসেম আলীর নাম উল্লেখ করেননি। এখানে যারা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে তারা গত ৪২ বছরে তার বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেনি কোথাও। রাষ্ট্রপক্ষ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যে বই জমা দিয়েছে সেসব বইয়ের লেখকও স্বাধীনতার পর মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে একটি কথাও কোথাও লেখননি। তাছাড়া মীর কাসেম আলী অপরাধ সংঘটনকালে যে চট্টগ্রামে ছিলেননা তা রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া অনেক পেপারকাটিং থেকে দেখা যায়।
ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ বলেন, মীর কাসেম আলী চট্টগ্রাম আলবদর কমান্ডার ছিলেন এ মর্মে কোন প্রমান দিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আসামী পক্ষের যুক্তির সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করেন।

বিচার কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের ডকুমেন্ট থেকেই এটা অকাট্যভাবে প্রমানিত যে মীর কাসেম আলী ১৯৭১ সালের নভেম্বরের শুরু থেকে চট্টগ্রামে ছিলেননা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানের প্রশ্নই আসেনা। ডালিম হোটেলের দখলদার মইত্যা গুন্ডার বিরুদ্ধে মামলা করেছে হোটেলের মালিক। সেই মামলার বিবরনে অনেক কিছু উল্লেখ আছে কিন্তু মীর কাসেম আলীর নাম নেই কোথাও। ৪২ বছর পর রাজনৈতিক প্রতিহিংশা চরিতার্থ করার জন্য ব্যক্তি  টার্গেট করে ছক একে নীলনকশার মাধ্যমে এ মামলা সাজানো হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ যে ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে তাতে চট্টগ্রাম আল বদর কমান্ডারসহ অন্য শীর্ষ আলবদর নেতৃবৃন্দের নাম এসেছে। তাতে মীর কাসেম আলীর নাম নেই। কিন্তু তারপরও তাকে আল বদর কমান্ডার বানানো হয়েছে। ১৯৭৭ সালে জন্ম নেয়া ব্যক্তিকে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়েছে। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আশা করছি আদালত এসব বিবেচনা করবেন।

মামলার সংপিক্ষপ্ত বিবরন :
মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, অপহরন লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। ১৪টি অভিযোগেই তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হল।
১৪টি অভিযোগের মধ্যে দুটি নির্যাতন ও হত্যা বিষয়ক। বাকী  ১২টি অভিযোগ অপহরন, নির্যাতন এবং  বন্দী করে রাখা বিষয়ক। হত্যা বিষয়ক যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে মোট সাতজনকে হত্যার ঘটনা রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ মীর কাসেম আলীর  নেতৃত্বে চট্টগ্রামে মহামায়া বা ডালিম হোটেলে স্বাধীনতাপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের অপহরন করে  নির্যাতন, হত্যা, গুম করা হত। এছাড়া  লুন্ঠন এবং অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড পারিচালিত হয়েছে তার নেতৃত্বে। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে যে ১৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে তার  সবগুলোর সাথেই হয়  তার নেতৃত্ব  অথবা  সরাসরি  সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০১২ সালের   ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে  ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১  এর নির্দেশে। সেই থেকে তিনি বন্দী রয়েছেন।

গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন  করে। এরপর এ মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।


মীর কাসেম আলীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
মীর কাসেম আলী ১৯৫২ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার চাকরির সুবাদে তিনি ১৯৬৫ সাল থেকে  চট্টগ্রামে বসবাস করেন এবং ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন।

একজন সংগঠক, উদ্যোক্তা, পৃষ্ঠপোষক, সমাজকর্মী এবং রাজনীতির অঙ্গন ছাড়াও আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচয় রয়েছে মীর কাসেম আলীর। ব্যাংকিং, চিকিৎসা, শিক্ষা, পুনর্বাসন, আবাসন, গণমাধ্যম, পর্যটন পরিবহন খাতসহ অর্থনৈতিক সামাজিক বিভিন্ন খাতে উদ্যোগ গ্রহণ এবং নেতৃত্বে মীর কাসেম আলীর প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে।

মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় আসামী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন, আসাদ উদ্দিন, আবু বকর সিদ্দিক, হাসানুল বান্না প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সিমন ও তুরিন আফরোজ।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন