Pages

বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

নিহত হবার ঘটনার পরও ৫ মাস বেঁচে ছিলেন ইব্রাহিম!

মেহেদী হাসান, ২৮/১২/২০১১
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে  বর্তমানে বিচার চলছে তার মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা হল ইব্রাহীম কুট্টিকে  হত্যা। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পাক আর্মি ১৯৭১ সালের ৮ মে পারেরহাট বাজারে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে বলে দুজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন।   এ দুজন সাক্ষী  নিজেদেরকে  ঘটনার চাুস সাক্ষী  হিসেবে  উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু  গতকাল মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে তথ্য প্রমান উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন ইব্রাহীম কুট্টি পারের হাট বাজারে ৮ মে নিহত হননি। তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে  থাকা অবস্থায় ১ অক্টোবর  ১৯৭১ সালে  নিহত হন। ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই পিরোজপুর  আদালতে ১৩  জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।  ১৩ জন আসামীর মধ্যে মাওলানা  দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম নেই।

অথচ দুজন  সাক্ষী ঘটনার চাুস বর্ণনা দিয়ে আদালতে বলেছেন, তারা দেখেছেন মাওলানা সাঈদী পারের হাট বাজারে উর্দুতে পাক আর্মিদের সাথে  কিছু কথা বলার পরই পাক আর্মি ইব্রাহিমকে গুলি করে লাশ নদিতে ফেলে দেয়। তারা গুলির শব্দ  এবং চিৎকার শুনেছে বলেও আদালতকে জানান। তারা জানান মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্য রাজাকার এবং পিস কমিটির নেতাদের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের মাধ্যমে ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরা হয় এবং তাদেরই নির্দেশে পাক আর্মি  তাকে হত্যা করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়।

কিন্তু  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আজ   আদালতে  যে তথ্য  প্রমান উপস্থাপন করলেন তাতে দেখা যায় সাক্ষীদের বর্ণিত  ইব্রাহীম কুট্টির হত্যা ঘটনার পরও ৫ মাস বেঁেচ ছিলেন তিনি। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের আদালতে উপস্থাপিত তথ্য প্রমানের সাথে সাক্ষীদের বর্ণনার কোন মিল নেই।  পিরোজপুর আদালতে ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী  মমতাজ বেগম  স্বামীর হত্যার বিচার চেয়ে যে মামলা করেছিলেন ১৯৭২ সালে তার এজহার আদালতে দাখিল করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এজহারে  ১৩ জন আসামীর নাম উল্লেখ রয়েছে। শ্বশুর বাড়িতে  হত্যা ঘটনার বিবরন  এবং ঘটনার তারিখ ১ অক্টোবর ১৯৭১ সাল লেখা রয়েছে। মামলার নম্বর ৯।

আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় মানিক পসারী  ইব্রাহিম কুট্টির হত্যার বিবরন দিয়ে বলেন, ইব্রাহিম তাদের বাড়িতে কাজ করত। ১৯৭১ সালে ১৮ মে পাক সেনাবাহিনী নিয়ে দেলোয়ার শিকদার বর্তমানে সাঈদী, সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, রেজাকার  মবিন, হাকিম কারী, সোবহান মাওলানাসহ আরো অনেকে রেজাকার আমার বাড়িতে   প্রবেশ করে। তাদের আসতে দেখে আমি বাড়ির  পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকি এবং সব ঘটনা  দেখতে  থাকি। তারা আমার বাড়িতে প্রবেশ করে আমার ফুফাত ভাই মফিজ উদ্দিন (  বাড়িতে কাজ করত)  এবং অপর কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে আর্মিরা ধরে একই দড়িতে বাঁধে। তারপর ঘরে লুটপাট করে সোনাদানা দেলু শিকদার, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা নিয়ে যায়। লুটের পর দেলোয়ার শিকদারের (একেই বর্তমান সাঈদী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি)  নেতৃত্বে  রাজাকার বাহিনী ঘরে  কেরোসিন   ছিটায়। তারপর দেলোয়ার শিকদার ঘরে আগন ধরিয়ে দেয়।  মফিজ ও ইব্রাহিম কুট্টিকে  বেঁধে পারেরহাট নিয়ে যাবার সময় আমি তাদের পেছনে পেছনে যেতে থাকি। তাকে পারের  হাট বাজারের মধ্যে  ব্রিজের ওপারে নিয়ে গেলে আমি  এপারে বসে তাদের লক্ষ্য করি। দেলোয়ার  হোসেন শিকদারকে আর্মির সাথে পরামর্শ করতে দেখি। তারপর দেলোয়ার হোসেন শিকদার, সেকেন্দার শিকদারের সাথে পরামর্শক্রমে পাক আর্মিরা  ইব্রাহিম কুট্টিকে গুলি করে। ইব্রাহিম চিৎকার মারে। তারপর লাশ নদীতে ফেলে দেয়।

ইব্রাহিক কুট্টিকে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে   ধরে এবং তারই নির্দেশে হত্যার বিষয়ে এর আগে গত ২১  ডিসেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ হাওলাদার। তিনিও  ইব্রাহিম কুট্টির হত্যার বিষয়ে  মানিক পসারীর মত ঘটনার বিবরন দিয়ে বলেন, মানিক পসারীর  বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে দেখি দানেশ আলী মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন  শিকদার বর্তমান সাঈদী, মোসলেম মাওলানাসহ অনেক রাজাকার বাহিনী  মানিক পসারীর  কর্মচারী ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাজারের দিকে। আমি তাদের পিছু পিছু  যেতে থাকি। বাজারের ব্রিজ পার হয়ে পশ্চিম দিকে যাবার পর আমি এপার বসে  থাকি। উত্তর দিকে থানার ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যাবার পর  দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমানে সাঈদী সাহেব পাক আর্মির সাথে কি যেন বলাবলি করছে দেখতে পাই। তখনই বিকট  গুলির শব্দ এবং চিৎকার শুনতে পাই।     এরপর   ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসার পর পরের দিন শুনতে পাই মানিক পসারীর বাড়ির কাজের লোক ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে।

ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা বিষয়ে এ দুজন সাক্ষীর  বিবনের সাথে কোন মিল নিয়ে গতকাল মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের উপস্থাপিত তথ্য প্রমানের সাথে।

ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে যে হত্যা মামলা করেন তার এজহারে উল্লেখ  করা হয়েছে ইব্রাহিম কুট্টির বাড়ি বাদুরা। তিনি কিছু হিন্দুদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়ার কারনে পাক আর্মি এবং রাজাকারদের রোষানলে পড়েন। সে কারনে জীবন বাঁচাতে  তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি তাকে নিয়ে  তার বাপের বাড়ি নল বুনিয়ায় চলে আসেন।  অর্থাৎ ইব্রাহিম কুট্টি  তার শ্বশুর বাড়ি যান স্ত্রীকে নিয়ে।

মমতাজ বেগম  মামলার এজহারে বলেন,   তিনি তার স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকা অবস্থায় ১ অক্টোবর ১৯৭১ সালে আসামীরা  তার স্বামী  ইব্রাহীম কুট্টি  এবং ভাই সিরাজকে  গুলি করে হত্যা করে।

মমতাজ বেগম তার স্বামীর হত্যা মামলায় যাদের আসামী করেছেন তারা হলেন, দানেশ মোল্লা,  আতাহার আল, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী কালাম চৌধুরী, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা।  আসামীদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। যারা আসামী তাদের প্রায় সকলেই কুখ্যাত রাজাকার এবং পিস কমিটির নেতা ছিল বলে স্বাীকার করেছেন  মাওলানা সাঈদীর  বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসা সাক্ষীরা।

ইব্রাহিম কুট্টি মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করলেও তার স্ত্রী  এবং ছেলে মেয়ে কোথায় কি অবস্থায়  আছে তার কিছুই জানেননা বলে জেরার সময়  । মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জানান,   ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম  মামলার সময় আসামীদের বিষয়ে মানিক পসারীকে জানিয়েছেন  এবং এবং তার স্বামী কিভাবে নিহত হন তাও জানিয়েছেন। কিন্তু তা জানা সত্ত্বেও মানিক পসারী  সত্য গোপন করে ইব্রাহীম কুট্টির  স্ত্রীসহ তাদের সন্তান  এবং মামলার আসামীদের  না চেনার কথা বলেছেন। এ অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান মানিক পসার।

এদিকে মানকি পসারী আদালতের জেরার সময় স্বীকার করেন তিনি কোন মুক্তিযোদ্ধা নন। কিন্তু ২০১০ সালে পিরোজপুরের বর্তমান এমপি এ কে এম এ আউয়াল তাকে  মুক্তিযোদ্ধ আখ্যায়িত করে ডিও লেটার দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছন মানিক পসারী। ডিও লেটারে  এমপি উল্লেখ করেন, মানিক পসারী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়া আমার সাথে থাকিয়া সুন্দরবন এলাকায় বীরত্বের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে  সম্মুখ যুদ্ধ করিয়াছে। ”

মুক্তিযুদ্ধ না করা সত্তেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে  চাওয়া এবং ডিও লেটার গ্রহণ বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীর জেরায় মানিক পসারী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ইছি পরাইছি, আশ্রয় দিয়েছি  তাই দিয়েছে।

সাক্ষী মানিক পসারী ২০০৯ সালে পিরোজপুর আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করেন ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগ উল্লেখ করে। গত মঙ্গলবার তিনি ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীতে ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা, তাদের নিজ বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সোনাদানা ভাগ করে নেয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়া পাক আর্মির হাতে নারীদের ধর্ষনের উদ্দেশ্যে তুলে দেয়াসহ  আরো অনেক অভিযোগ করেন।

আজ মানিক পসারীকে দিনব্যাপী জেরা করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এবং মনজুর আহমদ আনসারী।

আইনজীবী:  আপনার ১২ জন মা?
সাক্ষী: ৫/৬ জন ছিল।
আইনজীবী: আপনি বলেছেন আপনাদের বাড়িতে ৫টি ঘর ছিল। এর মধ্যে একটি গোলাঘর এবং একটি কাছারি ঘর। আপনাদের গোলায় কত মন ধান আটত?
সাক্ষী: চার/পাঁচ শ মন।
আইনজীবী: আপনাদের ঘরে উল্লেখযোগ্য আসবাবপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল খাট।
সাক্ষী: চার/পাঁচটি খাট ছিল।
আইনজীবী: আপনি সংসারের মালিক হলেন কবে?
সাক্ষী: আমি ১৯৬৮ সালে বিয়ে করি। তখনই সংসারের মালিক হই এবং আলাদা হই। তবে খানা পিনা এক ঘরেই চলত। বাড়ি ঘরের মালিকও ছিল বাবা।
আইনজীবী: আপনার বাবা খুলনায় বাস করতেন।
সাক্ষী: খুলনায়  বাবার সংসার ছিল। জমিজমা ভাই ব্রাদার ছিল। মৃত্যুর আগে খুলনায় থাকতেন বাবায়। তবে বাড়িরও খোঁজ খবর নিতেন।
আইনজীবী: খুলনায় আপনার পিতার  কত জমি আছে?
সাক্ষী: আনুমানিক ৪০/৪৫ বিঘা।
আইনজীবী:  আপনার বাবা খুলনার বাড়িতে ১৯৯০  দশকে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছিলেন তা জানেন?
সাক্ষী:   জানা  নেই।  (এরপর মানিক পসারী বলেন, কখনো হতে পারেনা এটি। মিথ্যা বানোয়াট কথা  এটি। )
আইনজীবী:  পিরোজপুর এবং পারেরহাটের বিভিন্ন জায়গায় আপনাদের জমি ছিল?
সাক্ষী: ছিল। বাবায় বেচা বিক্রি করে শেষ করে গেছে। আমরা পোলাপান মানুষ। বাবা কবে কোথায় জমি রাখছে না কি তা আমাদের সব  বলে?। মানষে খাইতেছে।
আইনজীবী: পিরোজপুরের গাজিপুরেও আপনাদের জমি  ছিল?
সাক্ষী: ১৪/১৫ বিঘা ছিল। কাগজপত্র নাই। মানষে লুটপাট করে খায়। আমরা কি  খামু।
আইনজীবী: কারা  ভোগ  দখল করে খায়?
সাক্ষী: মালেক খলিফা , খালেক খলিফা তিন ভাইরা খায়।
আইনজীবী: খালেক খলিফা কি বর্তমান  এমপির ভাই?
সাক্ষী: সে খায়না। ভাই না।
আইনজীবী: আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন?
সাক্ষী: করিনাই। বাড়িতে বসে করেছি।
আইনজীবী: আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এ মর্মে এমপি আপনাকে ডিও লেটার দিয়েছেন আপনার তদ্বিরের কারনে।
সাক্ষী: আমি মক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। তাদের খাওয়াছি দাওয়াছি। সেজন্য  দেছে।
আইনজীবী: পিরোজপুর আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করার পর ডিও লেটার পান?
সাক্ষী: স্মরন নেই।
আইনজীবী: বর্তমান সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আপনি একজন সুবিধাভোগী?
সাক্ষী: আমার কিছু নাই বলে সরকার আমাকে দেছে।
আইনজীবী: ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত আপনি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে কোন মামলা করেননি এবং কোন বক্তব্যও দেননি।
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: এতদিন পরে কেন মামলা করলেন সে বিষয়ে মামলায় কিছু আপনি উল্লেখ করেননি।
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: ঐ মামলায় আপনার ফুফতা ভাই মফিজ উদ্দিন  যিনি আপনার বাড়িতে কাজ করত তার কোন নামই উল্লেখ করেননি।
সাক্ষী: স্মরন নেই। ঐ মামলার তো কোন হদিস পাইনি।
আইনজীবী: ঐ মামলায় জবানবন্দী নেয়ার  জন্য তদন্ত কর্মকর্তা  ছয় জন সাক্ষীকে মেজিস্ট্রেট এর কাছে পাঠায়।
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ঐ মামলার তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আপনার বাড়ি যান?
সাক্ষী: কেস ঢাকায়  নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে কথা বলার জন্য আসে একবার।
আইনজীবী: সাক্ষীদের জবানবন্দী রেকর্ডের জন্য যখন নিয়ে যাওয়া  হয় তখন তদন্ত কর্মকর্তা আপনার সাথে পরামর্শ করে?
সাক্ষী: আমি জানিওনা শুনিওনাই।
আইনজীবী: তদন্ত কর্মকর্তা আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনার কাছে আলামত চান। কিন্তু আপনি তা দিতে না পারায় এখন তার আপনার বাড়ি যাবার বিষয়টি   গোপন করছেন।
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: পিরোজপুর মামলার পর আপনি ইটিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন?
সাক্ষী: স্মরন নেই। কত লোক যায়।
আইনজীবী: ঐ সাক্ষাৎকারে আপনি আপনার ঘর পোড়ার কোন চিহ্ন নেই বলেছিলেন। এজন্য এখন বিষয়টি গোপন করছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: বর্তমান মামলায় আলামত জব্দ  করার জন্য  তদন্ত কর্মকর্তা কবে আপনার বাড়িতে যান?
সাক্ষী: ১৮/৮/২০০৯
আইনজীবী: আপনি জব্দ  তালিকায় সই করেন?
সাক্ষী: বলেও নাই করিও নাই।
আইনজীবী: সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, হাকিম কারী, এদের ১৯৭১ সালের আগ থেকেই চিনতেন?
সাক্ষী: চিনতাম।
আইনজীবী: মোসলেম মাওলানাকে ১৯৭১ সালের আগে থেকেই চিনতেন?
সাক্ষী: আমাদের বাদুরা গ্রামের লোক। সেই হিসেবে চিনি।
আইনজীবী: রাজাকার মবিনকে  ১৯৭১ সালের আগে থেকেই চিনতেন?
সাক্ষী: চিনতাম। গ্রামে চাষবাষ করত। মাদ্রাসায় পড়াত।
আইনজীবী: সোবহান মাওলানাকে চিনতেন?
সাক্ষী: সে  তখন  ছাত্র ছিল।
আইনজীবী: আপনার বাড়ি শঙ্করপাশা ইউনিয়নে।
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ঐ ইউনিয়নের পিস কমিটির সভাপতি একরাম  খলিফাকে চিনতেন?
সাক্ষী: শঙ্করপাশায় কোন পিস কমিটি ছিলনা।
আইনজীবী: একরাম খলিফাকে  চেনেন?
সাক্ষী: সে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছিল একসময়।
আইনজীবী: ইব্রাহিম কুট্টি আপনার বাড়িতে কতদিন ধরে কাজ করত?
সাক্ষী:   পাক আর্মি ধরে নেয়ার তিন চার বছর আগে থেকে কাজ করত।
আইনজীবী: তাকে যখন   ধরে নিয়ে যায় তখন ইব্রাহীম কুট্টির কোন আত্মীয় স্বজন আসে নাই ওখানে?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: হত্যার পরেও কেউ আসেনাই?
সাক্ষী: আমি দেখিনাই।
আইনজীবী: তার লাশ কি হয় জানেন?
সাক্ষী: খালে ভাসায় দেয়।
আইনজীবী:  তাতো বুঝলাম। দাফন টাফন হয় কিনা।
সাক্ষী: তা আমি জানিনা।
আইনজীবী: যেখানে  হত্যা করা হয় সেখানেই  ফেলে দেয়া হয়?
সাক্ষী: হ্যা, খালে ফেলে দেয়া হয়।
আইনজীবী: ওটা খাল ছিল নদী নয়?
সাক্ষী:  খাল ছিল।
আইনজীবী: ইব্রাহিম বিবাহি ছিল?
সাক্ষী: হ্যা।
 আইনজীবী: তার স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম?
সাক্ষী: তা আমি জানিনা।
আইনজীবী: তার শ্ব:শুর বাড়ি?
সাক্ষী:  শুনেছি নলবুনিয়া।
আইনজীবী: তার ছেলে মেয়ে ছিল?
সাক্ষী: ২/১ জন ছিল শুনেছি।
আইনজীবী: স্বাধীন হবার পর তার স্ত্রী সন্তানের সাথে আপনার দেখা সাক্ষাৎ হয়?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: তারা বেচে আছে না মারা গেছে সে সম্পর্কে কোন ধারণা নেই?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: ইব্রাহীম কুট্টির শ্যালকের নাম  সাহেব আলী  রফে সিরাজ জানেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: বারই খালি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুস সাত্তার, সেতারা বেগম, রানী, মকবুল শিকদার, তাহের আলী, মো: আলী এদের চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আতাহার আলী   রাজাকার ছিল তাকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: রাজাকার আশ্রাব আলীকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: রাজাকার মমিন হাওলাদারকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: রাজাকার আইউব আলীকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: রাজাকার কালাম  চৌকিদারকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: রাজাকার রুহুল আমিন কে চেনেন?
সাক্ষী : চিনি।
আইনজীবী: এসআই শামসুর রহমানকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
(এদের প্রত্যেককে পিতার নাম এবং গ্রামের নাম উল্লেখ করে   জিজ্ঞসা করা হয়।)
আইনজীবী: এরা সহ দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার এবং মোসলেম মাওলানাকে আসামী করে ইব্রাহিম  কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম পিরোজপুর আদালতে ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় মমতাজ বেগমের ভাই সাহেব আলী ওরফে সিরাজকেও হত্যার কথা উল্লেখ করেন। সেই হত্যা মামলায় মমতাজ বেগম তার স্বামী ইব্রাহিম কুট্টি   শ্বশুর বাড়িতে থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর নিহত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার নম্বর ৯। এ বিষয়টা জানা সত্ত্বেও আপনি  সরকারি সুবিধা আদায়ের জন্য ইব্রাহিম কুট্টির হত্যার দায় মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন চাপিয়ে দিয়ে করা মিথ্যা মামলায় মিথ্যা  সাক্ষ্য দিলেন।
সাক্ষী: মিথ্যা। আমি কিছুই জানিনা।
আইনজীবী: ঐ মামলায়  মমতাজ বেগমের মা সেতারা বেগমকে ধরে নিয় যাওয়া হয় তাও জানা সত্ত্বে আপনি গোপন করেছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: মমতাজ বেগমের  দায়ের করা  ইব্রাহীম হত্যা মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তাদেরও আপনি চেনেন এবং জেনে   শুনে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে  বলেছেন আপনি তাদের চেনেননা।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: একই কারনে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমততাজ বেগম এবং তার  সন্তানদের চেনা সত্ত্বেও বলেছেন  চিনিনা।
সাক্ষী: সত্য নয়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন