Pages

বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

৭ সাক্ষীর ৩ জনকে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট প্রদান মামলা শুরুর পর

মেহেদী হাসান, ২৯/১২/২০১১
সপ্তম সাক্ষী  মফিজ উদ্দিন পসারী    আদালতে স্বীকার করেছেন তিনি কোন মুক্তিযোদ্ধা নন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার জন্য  দরখাস্ত করেছিলেন । পিরোজপুর সদরের এমপি  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ. কে. এম. এ. আউয়াল তাকে একটি ডিও লেটার দিয়েছেন এবং তার নাম ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তবে  মুক্তিযোদ্ধা  হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার বিষয়টি মফিজ উদ্দিন  জানেননা বলে জেরার সময় বলেছেন।  কিন্তু মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে তালিকা উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন তালিকায়  মফিজ উদ্দিন পসারীর নাম রয়েছে। পিরোজপুর  জেলা মক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়  (অন্তর্ভুক্ত) ২০২ নম্বরে মফিজ উদ্দিনের নাম আছে।  ১৩/৯/২০১০ মফিজ উদ্দিনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ   করেন স্থানীয় এমপি। 

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে জানান, মুক্তিযোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাতুক্ত হওয়াসহ আরো নানান  সরকারি সুবিধা প্রাপ্তির  বিনিময়ে তিনি আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন। সাক্ষী মফিজউদ্দিন পসারী জেরার সময় স্বীকার করেছেন গত ২/৩ মাস থেকে তিনি বয়স্ক ভাতা পেতে শুরু করেছেন।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  এ পর্যন্ত  আদালতে মোট সাত জন সাক্ষী  সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন সাক্ষী  আদালতে স্বীকার করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা নন কিন্তু   পিরোজপুর সদরের এমপি তাদের মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়েছেন।  এরা হলেন চতুর্থ সাক্ষী  সুলতান আহমেদ হাওলাদার, ষষ্ঠ সাক্ষী মানিক পসারী  এবং গতকাল আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা  সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারী।  জেরার সময় এরা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন তারা কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। অথচ এমপি এ. কে. এম. এ. আউয়াল তাদের  মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে যে সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাতে  এ তিনজনের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে  লেখা রয়েছে “সে একজন  প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়া আমার সাথে থাকিয়া সুন্দরবন এলাকায় বীরত্বের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে  সম্মুখ যুদ্ধ করিয়াছে। ” প্রত্যেককেই ১৩/৯/২০১০ তারিখে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেছেন  মামলা শুরু হবার পরে  এদের ডিও লেটার  দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা  হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়াসহ নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহনের বিনিময়ে তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন বলে আদালতকে জানান  । যেসব সাক্ষী  নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও নানা সরকারি সুবিধা গ্রহনের অভিযোগ আনা হয়েছে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে।  

মফিজ উদ্দিন পসারী এই মামলায় একজন আলোচিত সাক্ষী  এবং ব্যক্তি। মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে ইব্রাহীম কুট্টিকে ১৯৭১ সালের ৮ মে হত্যা করা হয় মর্মে এর আগে  দুজন সাক্ষী   আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৮ মে ইব্রাহিম কুট্টিকে যখন পারেরহাট বাজারে হত্যার অভিযোগ করা হয় তখন একই সাথে মফিজ উদ্দিনকেও ধরে নেয়া হয়  বলে আগের দুজন সাক্ষী দিয়েছেন। ইব্রাহীমকে হত্যার অভিযোগ করা হলেও মফিজ পালিয়ে আসে বলে সাক্ষীরা জানান।  ইব্রাহীম কুট্টি এবং  মফিজ উদ্দিন পসারী একই বাড়িতে (মানিক পাসরী) কাজ করত। আজ সেই আলোচিত মফিজ উদ্দিন আদালতে সাক্ষ্য দিলেন নিজের ঘটনার বর্ননা করে।

মফিজ উদ্দিন পসারীকে  মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা জিজ্ঞেস করেন তার নানার নাম কি। মফিজ উদ্দিন বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে জানান, মনে নেই। মফিজ  উদ্দিন পসারী  মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করত।    মানিক পসারী তার মামাত ভাই। মানিক পসারীর পিতা সইজুদ্দীন পসারী তার মামা। সইজুদ্দীন পসারীর পিতার নাম  কি তা জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে তিনি নাম বলে দিলেন ‘মেহের চান আলী’ । বস্তুত তিনিই তার নানা। কিন্তু প্রথমে যখন তাকে নানার নাম জিজ্ঞেস করা হয় তখন মনে  নেই বলে উত্তর দেন। পরে  সইজুদ্দীন পসারীর  পিতার নাম বলতে বলায় সাথে সাথে যখন তিনি পরোক্ষভাবে নানার নাম বলে দিলেন তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বিষয়টিকে রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেন।

তাছাড়া ৮ মে তিনি পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আগে দানেশ মোল্লাসহ অন্য রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে বলেন ধরা পড়েননি। কিন্তু পরে যখন কৌশলে অন্য প্রশ্ন করা হয় তখন বলেন একদিন মাছ ধরার সময় তারা তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।

মানিক পসারী গত বুধবার আদালতে জেরার সময় বলেছেন তার পিতা সইজুদ্দীন পসারীর  কোন সিগারেট কারখানা ছিলনা। কিন্তু গতকাল  মফিজ উদ্দিন পসারী জেরার সময় বলেছেন পারের হাট বন্দরে সইজুদ্দীনের একটি সিগারেটের কারখানা ছিল।

জেরার সময়  মফিজ উদ্দিন পসারী জানান, তার কখনো কোন জায়গা জমি ছিলনা। তার শ্বশুর তাকে ২ কাঠা  জমি দেয়। তিনি  শ্বশুর বাড়িতেই থাকেন। শ্বশুরের কাছ থেকে প্রাপ্ত ২ কাঠা জমির এক কাঠা  ১৯৯৬ সালে বিক্রি করেন। তিনি আরো একটি বিয়ে করেছেন বলে জানান।

মফিজ উদ্দিন পসারী আদালতে তার জবানবন্দীতে জানান, তার বয়স আনমানিক ৭২ বা ৭৩ বছর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি  পিরোজপুর বাদুরা গ্রামে তার মামা সইজুদ্দীন পসারীর বাড়িতে কাজ করতেন।  তার সাথে ঐ বাড়িতে কাজ করত ইব্রাহমী কুট্টি নামে আরেক লোক।

মফিজ উদ্দিন বলেন,  ১৯৭১ সালের ৮ মে সকালে   গরু মহিষ  নিয়ে চরে যাই। সাথে ইব্রাহিম কুট্টিও ছিল। কিন্তু  আনুমানিক ১০/১১টার দিকে  চরে বসে বসে মামার বাড়িতে  বাড়িতে আগুন  এবং  ধোয়া দেখতে পাই। তারপর মামার বাড়ির দিকে ফিরে আসি। ১২/১৪ জন পাক আর্মি, ২০/২২ জন রাজাকার মামার বাড়ি যাচ্ছে দেখতে পাই। তার মধ্যে দিলু  শিকদার ছিল। আমরা পালাতে চাইলে পাক আর্মি ধরে ফেলে। দিলু শিকদার ইব্রাহীমের চুল ধরে বলে “শুয়ারের বাচ্চা যাচ্ছো কোথায়”। রাজাকার মবিন, রাজ্জাক আরো কয়েকজন আমাদের দুজনকে এক দড়িতে  বাঁধে।  এরপর রাজাকাররা ঘরে ঢুকে  লুটপাট করে এবং কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেকেন্দা শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মবিন, রাজ্জাক দিলু শিকদারসহ আরো অনেক রাজাকার   তেল ছিটিয়ে ঘরে আগুন দিতে বলে। তারপর আমাদের দুজনকে পারেরহট বাজারে নিয়ে যায়। বাজারের  মধ্যে ব্রিজের মাঝখানে নিয়ে ইব্রাহিমকে জিজ্ঞেস করে সইজুদ্দীন পসারী, মানিক পসারী কোথায় থাকে। তুই তো সইজুদ্দীনের বডি গার্ড । তুই জানিস তারা কোথায়। না বললে তোকে গুলি করব। এরপর  পুল থেকে নামিয়ে দিলু শিকদার (তাদের ভাষায় দিলু শিকদার মানে মাওলানা সাঈদী) সেকেন্দার শিকাদর উর্দুতে কি যেন বলল। আমি উর্দু বুঝিনা এবং কি বলেছিল তা  শুনতে পাইনি। এরপর ইব্রাহিমকে  দড়ি থেকে খুলে ছেড়ে দিল এবং আমাকে নিয়ে সামনের দিকে গেল।
তারপর গুলির  শব্দ শুনতে পাই। ইব্রাহিম মা বলে চিৎকার করে।
পেছনে তাকিয়ে দেখি ইব্রাহিমকে গুলি করছে। সেনাবানিহনী লাথি মেরে লাশ নদীতে ফেলে দিল। তারপর আমাকে নিয়ে পারেরহাট রাজাকার ক্যাম্পে গেল।   সইজুদ্দীন পসারী এবং মানিক পসারীর নাম জানার জন্য অনেক অত্যাচার করল দানেশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, দেলু শিকদার মবিন রাজাকার।  এর এক পর্যায়ে রাতে বাথরুমে যাবার সময় পালিয়ে আসি।

মফিজ উদ্দিনের জবানবন্দী শেষ হলে তাকে জেরা শুরু করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম । বিকালে জেরা করেন কফিল উদ্দিন চৌধুরী। তাদের সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, মনজুর আহমদ আনছারী, ব্যারিস্টার তানভির আল আমিন, ফরিদ উদ্দিন, মুন্সী আহছান কবির প্রমুখ।

আইনজীবী: আপনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার জন্য এমপি আপনাকে একটি ডিও লেটার দিয়েছেন?
সাক্ষী: সুন্দরবন গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খায় খেদমত করছি। তরকারি কুটছি। সে কারনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হবার জন্য দরখাস্ত করেছিলাম এমপির কাছে।
আইনজীবী: দেশ স্বাধীন হবার  কতদিন পর এলাকায় আসেন? পিরোজপুর মুক্ত হবার ৭/৮ দিন পর।
আইনজীবী: পারের হাট এলাকায় তখন কাদের নেতৃত্ব দেখতে পেলেন?
সাক্ষী: জিয়া মেয়া দেখছি (সাব সেক্টার কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিন)।
আইনজীবী: পারেরহহাটে নেতৃত্বে থাকা আরো দুয়েকজনের নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: সেলিম খা, আমজাদ হোসেনকে দেখছি।
আইনজীবী:  এলাকায় আসার পর প্রথমে  কোথায় উঠলেন?
সাক্ষী: পয়লা নিজের বাড়ি আসি।
সাক্ষী: আপনার বাড়িতে কারা থাকত?
সাক্ষী: এক ঘরে আমার পরিবার , এক ঘরে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ী এবং আরেক ঘরে আমার ভায়রা শালিকাকে নিয়ে থাকত।
আইনজীবী: বাড়িটি ছিল আপনার শ্বশুরের?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: আপনি যখন সুন্দরবনে যান তখন আপনার সাথে মানিক পসারী ছিল?
সাক্ষী: যায়নি, দেখিওনি।
আইনজীবী: যারা আপনাকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রেখে মারপিট করল তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন দেশ স্বাধীন হবার পর?
সাক্ষী: সুযোগ পাইনি। ইচ্ছাতো ছিল।
আইনজীবী: কেন সুযোগ পাননি। কেউ বাঁধা দিয়েছিল?
সাক্ষী: বাঁধা দেয়নি কেউ। টাকা পয়সা ছিলনা। লোকজন ছিলনা। কিভাবে কি করমু বুঝতে পারিনাই।
আইনজীবী: মানিক পসারীদের একটা সিগারেট ফ্যাক্টরি ছিল?
সাক্ষী: সিগারেট নয় বিড়ি ফ্যাক্টরি। পারের  হাট বন্দরে।
আইনজীবী:  ঐ বিড়ির কারখানায়  সেকেন্দার শিকদারের অংশীদার ছিল?
সাক্ষী: এদের সাথে  অংশীদার ছিলনা। আলাদ থাতকে পারে।
আইনজীবী: আপনার মামা সইজুদ্দীন পসারীর বাড়িতে কাজ করার আগে কি করতেন?
সাক্ষী: মাছ টাছ ধরতাম। বড়শি বাইতাম।
আইনজীবী: কচা নদীতে মাছ ধরার সময় একদিন সেকেন্দার শিকদার  দানেশ আলী মোল্লারা আপনাকে আটক করেছিল?
সাক্ষী: না তো?
আইনজীবী: ৮ মে ধরা পড়ার আগে পাক আর্মিরা আপনাকে কখনো আটক করে?
সাক্ষী: করেছিল। ৮ মে  ঘটনার ২/৩ দিন আগে আমি একদিন ধরতে ছিলাম। তখন সেকেন্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, রাজ্জাক রেজাকার ডাক দেয়। আমি বলি মাছ বেচবান। তখন বলে মাছ বেচিস বা  না বেচিস  কাছে আয়। আমি কাছে গেলে দানেশ মোল্লা থাপ্পড় দিয়ে বলে ডাকলে আশিস না কেন বেটা।   রাজ্জাক মাছের ঝুরিটা নিয়ে দানেশ মোল্লাকে দেয়। তারা কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয় আমাকে।

আইনজীবী: মাছ ধরার সময় যে রাজাকাররা আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল তাদের পরনে কি ছিল।
সাক্ষী: খাকী পোশাক।
আইনজীবী: আপনাকে ধরার কতদিন আগে সইজুদ্দীনরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেল?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: অনুমান করে বলতে পারবেন, কতদিন বা কত মাস আগে?
সাক্ষী: অনুমান করেও বলতে পারবনা।
আইনজীবী: সইজুদ্দীন, রইজুদ্দীনরা কোথায় গেল?
সাক্ষী:  জঙ্গলে। সুন্দরবনে শাপলা এলাকায়।
আইনজীবী: আপনার নানার নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: (বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে) মনে নেই।
আইনজীবী: সইজুদ্দীনের পিতার নাম বলতে পারবেন?
সাক্ষী: (সাথে সাথে)  মেহের চান আলী।
(বস্তুত মেহের চান আলীই তার নানা। সরাসরি নানার নাম জিজ্ঞেস করায় মনে নিয়ে বলেন। কিন্তুমামা সইজুদ্দীনের পিতার নাম  কি ছিল জিজ্ঞেস করায় সাথে সাথে  বলে দিলেন  নানার নাম। )
আইনজীবী:  ১৯৭১ সালের ৮ মে ঘটনার কতদিন আগে থেকে সইজুদ্দীনের বাড়িতে কাজ করতেন?
সাক্ষী: ২/৩ বছর  ।
আইনজীবী: ইব্রাহীম কুট্টি আপনার আগে থেকে না পরে কাজ করত ঐ বাড়িতে?
সাক্ষী: আগে থেকেই ছিল।
আইনজীবী: ইব্রাহীম কুট্টি আপনার গ্রামেরই লোক?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: ইব্রাহীমের পিতার নাম?
সাক্ষী: গফুর শেখ।
আইনজীবী: ইব্রাহীমের শ্বশুর বাড়ি কোথায় জানেন?
সাক্ষী: একবার বলেছিল নলবুনিয়া।
আইনজীবী: ইব্রাহীমের একজন শ্যালক ছিল সাহেব আলী ওরফে সিরাজ নামে। তাকে দেখেছেন বা নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: দেখিনাই , শুনিওনাই।
আইনজীবী: ইব্রাহীমের স্ত্রী  মমতাজ বেগমের সাথে দেখা হয়েছে বা তার নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক আর্মিদের সহায়াতায় স্থানীয় রাজাকাররা নলবুনিয়ায় সাহেব আলী সিরাজকে হত্যা করে জানেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: নল বুনিয়া কতদূর আপনার গ্রাম থেকে?
সাক্ষী: মেলা দূর।  ৩/৪ মাইল।
আইনজীবী:  আপনার গ্রামের রাজাকার আতাহার আলী এবং তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা আজহার আলীর নাম শুনেছেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনার গ্রামে কোন রাজাকার ছিল?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী: স্বাধীনতার পর রাজাকারদের ধরা হয় এবং বিচার হয় শুনেছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
 আইনজী: স্বাধীনতার পর রাজাকারদের ধরে সুন্দরবনে নিয়ে যাওয়া হত হত্যার জন্য  জানেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: স্বাধীনতার পর সইজুদ্দীন পসারীর প্রভাব  কি আগের মতই ছিল?
সাক্ষী: আর্থিক ভাল ছিল। তবে প্রভাব একটু কমে যায়।
আইনজীবী: বারই খালির আব্দুর রাজ্জাক, দেলোয়ার হোসেন, তাহের আলী হাওলাদার, সেতারা বেগম, রানী, মকবুল শিকদার এদের  চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: টেংরাখালির আশ্রাব আলীকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আপনার গ্রামের আব্দুল মান্নান হাওলাদারকে চেনেন?
সাক্ষী : ঠিক পাইতেছিনা।
 আইনজীবী: পারেরহাটের রাজাকার আইউব আলীকে  চেনেন?
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজীবী: রাজাকার কালাম  চকিদারকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
 আইনজীবী: বারইখালির রাজাকার আব্দুল হাশিম মুন্সিকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: মবিন রাজাকারকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: আপনি ইব্রাহীমের শ্যালক সাহেব আলী সিরাজকে চিনতেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: ইব্রাহীম ও সাহেব আলী সিরাজকে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবার সাহেব আলীর বাড়ি থেকে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক আর্মি ধরে  হত্যা করে।  আপনি তা জেনেও গোপন করছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: তাকে ধরে নিয়ে যাবার সময় সাহেব আলীর গর্ভবতী মা সেতারা বেগমকেও ধরে নিয়ে যায় এবং অত্যাচার করে। তাও আপনি জানতেন এবং জেনে  শুনে সত্য গোপন করছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: ইব্রাহীম কুট্টি এবং সাহেব আলীকে হত্যা এবং সেতারা বেগমকে নির্যাতনের অভিযোগে ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগম  দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ১৬ জুলায় পিরোজপুর কোর্টে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সে মামলায় রাজাকার  আতাহার আলী হাওলাদার, আশ্রাব আলী, আব্দুল মান্নান হাওলাদার, আইউব আলী, কালাম চকিদার, আব্দুল হাকিম মুন্সী, মমিন উদ্দিন, দানেশ আলী মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার তৎকালীন পিরোজপুর সদর থানার এএসআই শামসুর রহমান, মোসলেম মাওলানা  এবং পাক আমীকে  আসামী করা হয়।   এ বিষয়টি আপনি জেনেও সত্য গোপন করছেন এবং তাদের চেনেননা বলে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।

আইনজীবী: ঐ মামলায়  পাক আর্মিদের নাম  বাদ  দিয়ে চার্জশিট জমা দেয়া হয় এবং চার্জশিটে মাওলানা সাঈদীর নাম ছিলনা। এটিও আপনি জানতেন এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আপনার এখন কোন পেশা নেই।
সাক্ষী: হ্যা। বয়স হয়েছে।
আইনজীবী: আপনি গরিব অসহায় বিধায় লোভ দেখিয়ে  এবং চাপ  দিয়ে স্থানীয় এমপি এ. কে. এম. এ. আউয়াল আপনাকে দিয়ে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ মিথ্যা সাক্ষ্য  দেয়াচ্ছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে আপনি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়। আমি বয়স্ক লোক হিসেবেই পাচ্ছি।
আইনজীবী: এ মামলা চালু হবার পর থেকে আপনি বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: কবে থেকে পাচ্ছেন?
সাক্ষী: ২/৩ মাস আগে থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন