বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

অধ্যাপক গোলাম আযমের ইন্তেকাল


মেহেদী হাসান
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১    বছর ১১ মাস। আজ  রাত ১১টা ৫২ মিনিটে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল মজিদ ভূইয়া তার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাকের কারণে রাত ১০টা ১০ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন। রাতেই কারা বিধি অনুযায়ী তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যেহেতু তিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি তাই পোস্ট মর্টেম হবে কিনা কারা কর্তৃপক্ষই তা নির্ধারণ করবেন বলে জানান তিনি।

বিএসএমএমইউ’র পরিচালকের বক্তব্যের কিছুক্ষণ পূর্বে অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সাংবাদিকদের জানান, তার পিতা আর বেঁচে নেই। একজন মুসলমান হিসেবে যেভাবে দাফন-কাফন করা প্রয়োজন তারা সেটাই চান। তার এ বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন।

গত কয়েকািদন ধরে মারাত্মক অসুস্থতার পর গতকাল সকাল থেকেই তার অবস্থার অবনতি ঘটে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাকের পর মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, অধ্যাপক গোলাম আযম ‘কিনিক্যালি ডেড’। তবে তাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। রাত ১০টার দিকে আইনজীবী তাজুল ইসলাম গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনালের আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, ‘আমার পিতা আর বেঁচে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন তার মৃত্যুর ঘোষনা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছেননা তা আমরা জানিনা’।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আব্দুল মজিদ ভূইয়া রাত ৯টা ৫৮ মিনিটে অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর খবরটি গুজব বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি তখন জানান, তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি মারা যাননি’।

গত ৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক অধ্যাপক গোলাম আযমকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেদিন বিকাল ৪টার কিছু আগে তাকে প্রিজন সেল থেকে সিসিইউ-এ নেয়া হয়। তিনি দীর্ঘদিন থেকে নানা ধরনের অসুখে ভুগছেন। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাকে সিসিউি-এ চিকিৎসা দেয়া হয়। তার ছিল অতি উচ্চ রক্তচাপ (১৬০/১০৫), হৃদ স্পন্দন ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (১৪০-১৪৩)। ফুসফুসে দেখা দেয় সংক্রমণ। তার নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক সুপরিচিত নাম। দেশের বাইরেও ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত কোটি কোটি মানুষের কাছেও তিনি ছিলেন সমাদৃত। ইসলামী আদর্শের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী ও নেতা হিসেবে বিশ্বের আনাচে-কানাচেও তার সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা হিসেবেও সর্বত্র তাকে মান্য করা হয়।

 ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনে তার রয়েছে স্মরণীয় ভূমিকা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে ভূমিকা রাখায় তিনি নাগরিকত্ব হারান। ১৯৯৪ সালে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে নাগরিকত্ব ফিরে পান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি দুইবার ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭১ সালের ভূমিকার কারণে তার বিচার শুরু হয় এবং তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০১২ সালের ১১ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে অধ্যাপক গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই তাকে বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেলে রাখা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।

জানাযা ও দাফন :
অধ্যাপক আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী জানান, জানাযার বিষয়ে আমার পিতা আমার কাছে অসিয়ত করেছেন যে, জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী যেন তারা জানাযায় ইমামতি করেন। তখন আমি তাকে জানাই মাওলানা নিজামীও কারাবন্দী। এটা শুনে আমার পিতা বলেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যেন তার জানাযা পড়ান। মাওলানা সাঈদীও কারাবন্দী জানানো হলে আমার পিতা জানাযার বিষয়ে আর কিছু বলেননি।

দাফনের বিষয়ে তিনি অসিয়ত করেছেন। মগবাজার কাজী অফিস লেনে আমার দাদার কবরের পাশে দাফন করার কথা বলেছেন।আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমরা ছয় ভাই। আমি ছাড়া অন্যরা প্রবাসে। তারা সবাই দেশে আসলে পিতার দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
ময়না তদন্ত বিষয়ে তিনি জানান, আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি, আমার পিতার যেন ময়না তদন্ত না করা হয়। তিনি হাসপাতালের সি ব্লকের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

হাসপাতাল ও বাসভবনে ভীড় : অধ্যাপক গোলাম আযমের স্বাস্থ্যের অবনতির খবর সকাল থেকেই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে অধ্যাপক গোলাম আযমের পরিবার ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। তারা বিভিন্নভাবে তার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সন্ধ্যার পর অনেকেই হাসপাতাল ও মগবাজার কাজী অফিস লেনের বাসভবনে ভীড় করতে থাকেন। উদ্বেগজনক খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার পর রাতে ভীড় আরো বেড়ে যায়। 
রাত ৯টা পর হাসপাতাল ও তার বাসভবনে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এমনকি রাতে বিএসএমএমইউ’র সি ব্লক স¤পূর্ণটা পুলিশ ঘেরাও করে রাখে। তার স্বাস্থ্যের প্রকৃত অবস্থা জানতে দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম কর্মী হাসপাতালে ভড়ি জমান।

শোক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের ইন্তেকালে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন। বিৃবতিতে তারা বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের এ মৃত্যু ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এক অপুরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন এদেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের অভিভাবক তুল্য। মহাল আল্লাহ পাক এ মর্দে মুৃমিনকে জান্নাতে উত্তম প্রতিদান দিন। দলের পক্ষ থেকে আজ দেশ-বিদেশে সর্বত্রই গায়েবানা জানাযার আহবান জানানো হয়েছে।


অধ্যাপক গোলাম আযমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি 

অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার লক্ষ্মিবাজারে তার মাতুলালয় শাহ সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ব্রাèনবাড়িয়ার নবীনগরের বীরগাঁও গ্রামে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে  ১৯৪৬ সালে বিএ ও  ১৯৪৮ সালে এমএ পাশ করেন। এর আগে ১৯৪৪ সালে ঢাকার তৎকালীন ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে মেধা তালিকায় দশম স্থানসহ ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৫০ থেকে ৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৭-৪৮ মেয়াদে ডাকসু’র জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৪৮-১৯৪৯ মেয়াদে তিনি পুনরায় এ পদে নির্বাচিত হন। তিনি অন্যতম একজন ভাষাসৈনিক। ডাকসু জিএস থাকাকালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সকল ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে ঐতিহাসিক স্মারকলিপি উপস্থাপন করেন।  ভাষা আন্দোলনের কারণে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ তাকে গ্রেফতার করা হয়। রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনার সময়ও তিনি কারাবরন করেন। জীবনের শুরুতে তিনি তাবলীগ জামায়াতের সাথে যুক্ত হন। পরে ১৯৫৪ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত  তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত একই দলের  সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জীবনে বহুবার তিনি রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেছেন। 
জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ এ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের পাশপাশি তিনি পাকিস্তান সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং জাতীয় বিভিন্ন সঙ্কট উত্তোরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পক্ষে প্রচারণা, আইউব খান বিরোধী জোট ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি’র (ডাক) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, পাকিস্তান শাসক বিরোধী জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (ডিপিএম) এর সেক্রেটারি জেনারেল এর দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর তিনি পাকিস্তানের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং ১৯৭৩ সালে লন্ডন যান। ১৯৭৮ সালের ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং  আবার জামায়াতের আমির নিযুক্ত হন । ২০০১  সালে তিনি আমিরের দায়িত্ব থেকে অবসরে যান। ১৯৭৩ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বাংলাদেশী নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয় এবং পরবর্তীতে নাগরিকত্ব বিষয়ে আলোচিত মামলায়  ১৯৯৪ সালে হাইকোর্ট  তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেন ।  

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপকার  অধ্যাপক গোলাম আযমের পরিচিতি রয়েছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুবাদে বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক  নেতৃবৃন্দের কাছে অধ্যাপক গোলাম আযম একজন ইসলামী রাজনীতিবিদ  হিসেবে খুবই পরিচিত একটি নাম।

জেনারেল এরশাদের শাসনামলে আশির দশকের মাঝামাঝি তিনি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ধারণা প্রচার করেন। এরপর ১৯৯১ সালে এ ব্যবস্থার অধীনে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যা স্বাধীন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাইলফলক এবং যুগান্তকারী ঘটনা  হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এরপর তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আরো তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক গোলাম আযম  বেশ কিছু  আলোচিত  গ্রন্থের প্রণেতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পলাশী থেকে বাংলাদেশ, ইকামতে দ্বীন, মনটাকে কাজ দিন, তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবনে যা দেখলাম’। এছাড়া তার বেশ কিছু অনুবাদ গ্রন্থও রয়েছে।

অধ্যাপক গোলাম আযমের ছয় ছেলে। এর মধ্যে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী দেশে আছেন। তার স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম জীবিত আছেন।

গ্রেফতার ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরন

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে অধ্যাপক গোলাম আযমকে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মোতাবেক তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে সেদিনই  ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে  ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে।

অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পাঁচ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। পাঁচ ধরনের অভিযোগ হল ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, সহযোগিতা এবং সিরু মিয়া দারোগা ও তার কিশোর পুত্র আনোয়ার কামালসহ মোট ৩৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া কারাগারে হত্যার নির্দেশ।

উর্দ্ধতন নেতৃত্বের দায় হিসেবে ১৯৭১ সালের যাবতীয় অপরাধের দায় আনা হয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৩০ লাখ নরনারী হত্যা, ৪ লাখ নারী ধর্ষণসহ সমস্ত অপরাধ এবং  ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার চাপানো হয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযমের ওপর ।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির রায় ঘোষনার সময় বলেছেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়নি বা  অপরাধ স্থলে উপস্থিত থাকা বা তার কথায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে কেউ কোন অপরাধ সংঘটন করেছে সরাসরি এমন কোন অভিযোগও আনা হয়নি তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা হল- উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’র অভিযোগ। তিনি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির। এ দলের আমির হিসেবে রাজাকার, শান্তি কিমিটি, আল বদর, আল শামস প্রভৃতি বাহিনী গঠন এবং এসব বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল। এসব বাহিনী ১৯৭১ সালে  পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে হত্যা, গনহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে। তাছাড়া সরাসরি জামায়াতে ইসলামও পাকিস্তানের সহযোগী বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। তাই এসব বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দায় তিনি এড়াতে পারেননা।











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন