Pages

বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

জেরা শুরু// “শর্ষিণা মাদ্রাসা সম্পর্কে কিছইু জানিনা”-বললেন সাক্ষ

মেহেদী হাসান, ১১/১২/২০১১
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের জেরা শুরু হয়  আজ ।   শর্ষিণা মাদ্রাসা থেকে মাওলানা সাঈদীকে বহিষ্কার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম হাওলাদার  জেরার সময় জানান তিনি ঐ মাদ্রাসা সম্পর্কে কিছুই জানেননা। অথচ ৭ ডিসেম্বর সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন,  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শর্ষিণা মাদ্রাসায় আলেম কাসে পড়াশুনাকালে জামায়াতের ছাত্র  রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ  তদন্তে প্রমানান্তে তাকে বহিষ্কার করে দেয়।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে জমা  দেয়া জব্দকৃত চারটি আলামতের ছবির ফটোকপি কিভাবে করা হয়েছিল সে বিষয়ে  আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারী  তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের সময় ব্রিফকেসে ভরে ফটোকপি মেশিন নিয়ে যান তাদের এলাকায় ।   ব্রিফকেসে করে ফটোকপি মেশিন আনার কথা শুনে আদালতে উপস্থিত অনেকে পরষ্পরের প্রতি মুখ চাওয়া চাওয়ি করেন এবং মুখটিপে হাসেন।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম মূলত জেরা করেন সাক্ষীদের। এছাড়া অপর আইনজীবী মনজুর  আহমেদ আনছারী, কফিল উদ্দিন চৌধুরীও জেরায় অংশ নেন। তাদের সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট  তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমীন,   ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির, শাহজাহান কবির,  শিশির মো : মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, আবু বকর সিদ্দিক,  গাজী এম এইচ  তামিম, সাজ্জাদুল আলী, তারিকুল ইসলাম প্রমুখ। ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী হলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

মাহবুবুল আলমকে জেরা:
জেরা শুরু হবার সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন কোর্ট রুমে বসে ছিলেন। অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে ট্রাইব্যুনালকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এখানে উপস্থিত থাকলে তিনি জেরা বিষয়ে অবহিত হবেন এবং অন্য সাক্ষীদের জেরার ধরন, কি কি প্রশ্ন করা হয় সে বিষয়ে সচেতন করার সুযোগ পাবেন তিনি। তিনি সাক্ষীদের সেভাবে প্রস্তুত করতে পারবেন। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। কাজেই তাকে জেরার সময় কোর্টের বাইরে যেতে বলা হোক।  বাংলাদেশের কোন ফৌজদারি কেসে এমন কোন নজির নেই যেখানে সাক্ষীর জেরার সময় তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নিজামুল হক বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এখানে থাকবেন। আইনে আছে। আমার করার কিছু নেই। আমাদের হাতপা বাঁধা। তাজুল ইসলাম বলেন, যে কারনে আপনারা সাঈদী সাহেবের আত্ময়দের রুম থেকে বের করে দিলেন সেই কারনে তদন্ত কর্মকর্তাও এখানে থাককে পারেননা।
যাহোক ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত জানাল তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন জেরার সময়।
এরপর জেরা শুরু হল। মামলার প্রয়োজনে তদন্ত কর্মকর্তা কিছু আলামত এবং ছবি জমা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে। প্রথমে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।

আইনজীবী : এই কোর্টরুমে  তদন্ত কর্মকর্তা বসে আছেন, যার কাছে  আপনি মামলার  সাক্ষ্য  জমা দিয়েছেন?
সাক্ষী : হ্যা।
আইনজীবী : জব্দতৃত আলামত কোথায় আছে বলতে পারবেন?
উত্তর : মানিক পসারীর বাড়িতেই ছিল।
আইনজীবী : আলামতগুলো আপনার কাছেই ছিল জিম্মানামায় আপনি এমন ওয়াদা করেছিলেন? আপনি  আলামত মানিক পসারীর কাছে রেখে জিম্মা নামার শর্ত ভঙ্গ করেছেন ।

এ প্রশ্নের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয় এবং ট্রাইব্যুনালে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নিজামুল হক বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করতে পারবেন কি-না তা আমাদের দেখতে হবে যাচাই করে।
আইনজীবী : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আপনি এবং মানিক পসারী  পিরোজপুরে দুটি মামলা করেছিলেন?
সাক্ষী : আমি একটি মামলা করেছি। সেও করেছে বলে জানতে পেরেছি।
আইনজীবী : মামলার পর আপনারা দুজনে মিলে একুশে টিভি ও এটিএন বাংলায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
সাক্ষী : সঠিক মনে নেই।
আইনজীবী: জব্দকৃত মালামালের তালিকা করতে হবে এ খবর কে কখন দিল আপনাকে?
সাক্ষী: আমার উপস্থিতিতে বলা হয়।
আইনজীবী : কে বলল?
সাক্ষী: তদন্ত কর্মকর্তা।
আইনজীবী: কখন দিল?
সাক্ষী: ১১টা কি ১২টা হবে।
আইনজীবী: তারিখ?
সাক্ষী: ৮ মে।
আইনজীবী: প্রথম কার আলামত জব্দ করা হয়?
সাক্ষী: সম্ভবত মানিক পসারী।
আইনজীবী: কত সময় লাগে?
সাক্ষী: ১৫/২০ মিনিট।
আইনজীবী: আলমগীর পসারীর জন্যও অনুরুপ সময় লাগে?
সাক্ষী: ১০/১৫ মিনিট
আইনজীবী: আপনি  জব্দকৃত আলামতের যে তালিকা দেখালেন তাতে দুটোরাই সময় ১১টা লেখা আছে?
সাক্ষী: এখনোতো তাই বললাম। ১১টায় বলেছি।
আইনজীবী: জব্দকৃত তালিকা কি প্যাকেট করা লেভেল জড়ানো ছিল?
সাক্ষী: না।
আইনজীবী: আলমগীর পসারী ও মানিক পসারীর মধ্যে কে বড়?
সাক্ষী : মানিক পসারী:
আইনজীবী: আলামত হিসেবে যে টিন জমা দেয়া হয় সে  টিনে পোড়া দাগ ছিল কথাটা সত্য নয়।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী : আমি বলছি এই আলামত মামলার কারনে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: তদন্ত কর্মকর্তা সেলিম খানের বাড়িতে  কখন যায়?
সাক্ষী: ১২টার দিকে।
আইনজীবী: সেলিম খানের সাক্ষরযুক্ত  আলামতের যে ছবি জমা দিলেন তা আসল ছবি নয় ফটোকপি।
সাক্ষী: সত্য।
আইনজীবী: অন্য ছবিগুলোও ফটোকপি
সাক্ষী: সত্য।
আইনজীবী: ছবি যখন তোলা হয় তখন ফটোকপি মেশিন ছিল?
সাক্ষী: হ্যা । তারা নিয়ে গিয়েছিল।
আইনজীবী: ফটোকপি মেশিনটা কার বাড়িতে রাখা ছিল?
সাক্ষী: তাদের কাছে ছিল। তদন্ত কর্মকর্তার ব্রিফকেসে ছিল।
(ব্রিফকেসের মধ্যে ফটোকপি মেশিন ছিল এ উত্তরের পর ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত অনেকে পরষ্পরের দিকে  বিস্ময়ে মুখ চাওয়াচওয়ি করেন।)
জেরার এক পর্যায়ে জব্দকৃত মালামালের একটি ছবির ফটোকপি সাক্ষীর হাতে দেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। ছবিটি দেখিয়ে তাকে অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়।
আইনজীবী: জব্দকৃত আলামত কোন সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তা লেখা নেই ছবিতে।
সাক্ষী: না,  সূত্র লেখা নেই।
আইনজীবী: কোন জায়গা থেকে জব্দ করা হয়েছে তাও লেখা নেই
সাক্ষী: লেখা নেই।
আইনজীবী: কার কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে তাও লেখা নেই।
সাক্ষী : না লেখা নেই।
আইনজীবী: সাক্ষীদের কোন নাম ঠিকানাও লেখা নেই ছবিতে।
সাক্ষী: না লেখা নেই।
আইনজীবী : জব্দকৃত জিনিসের বর্ণনাও লেখা নেই।
সাক্ষী: না লেখা নেই।
আইনজীবী: জব্দকৃত তালিকা কে তৈরি করল তাও লেখা নেই।
সাক্ষী: না নেই।
আইনজীবী: পোড টিন, পোড়া কাঠ  এবং আলমগীর পসারীর পোড়া ঘরের আরো যে ছবি জমা দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রেও উপরের কথাগুলো প্রযোজ্য?
সাক্ষী: হ্যা ।
আইনজীবী :  মাওলানা সাঈদীর প্রাইমারী পড়াশুনা বিষয়ে আপনি কিছু জানেন?
সাক্ষী:  শুনেছি  শর্ষিণা মাদ্রাসায় তিনি পড়াশুনা করেছেন।
আইনজীবী:কোন সালে তিনি ভর্তি হন?
সাক্ষী: জানিনা।
আইনজীবী : কত সাল পর্যন্ত তিনি শর্ষিণায় পড়েছেন?
সাক্ষী: স্বাধীনতার আনুমানিক সাত আট বছর আগে শেষ করেছেন।
আইনজীবী:কোন কাসে সেখানে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন?
সাক্ষী:  জানিনা।
আইনজীবী:কোন কাস পর্যন্ত তিনি সেখানে পড়েছেন জানেন?
সাক্ষী: আলেম।
আইনজীবী : মাদ্রাসাটি আপনার বাড়ি থেকে কতদূর ?
সাক্ষী : ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পূর্ব- উত্তর দিকে।
আইনজীবী: শর্ষিণা মাদ্রাসায় কখনো গিয়েছেন?
সাক্ষী: না
আইনজীবী:তখন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কে ছিলেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী: মাওলানা সাঈদীর  কোন সহপাঠীকে চেনেন?
সাক্ষী : না
আইনজীবী: উপর বা নিচের কাসের কাউকে চেনেন?
সাক্ষী: না।
শর্ষিণা মাদ্রাসা সম্পর্কে আরো  কিছু  প্রশ্ন করা হলে এক পর্যায়ে সাক্ষী মাহবুবুল আলম বলেন, তিনি শর্ষিণা মাদ্রাসা সম্পর্কে কিছুই জানেননা।
এরপর আইনজীবী আবার তাকে জেরা শুরু করেণ।

আইনজীবী: আপনি ঐ দিন সাক্ষীর সময় বলেছিলেন  জামায়াতের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারনে তদন্তে প্রমানান্তে   মাওলানা সাঈদীকে  বহিষ্কার করা হয়। তদন্তে কারা ছিল?
সাক্ষী: জানিনা। আমি বিষয়টি এলাকার লোকজনের কাছে যা শুনেছি তা বলেছি।
আইনজীবী: সাঈদীর বিরুদ্ধে আপনি পিরোজপুরে প্রথম যে মামলা করেছেন তাতে বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করেণনি।
সাক্ষী: সত্য
আইনজীবী: আপনি আল্লামা সাঈদীকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী : যে বাড়িতে আপনি বসবাস করেণ সেটা দালান?
সাক্ষী: সেমিপাকা ।
আইনজীবী: কতদিন আগে বাড়িটি বানিয়েছেন?
সাক্ষী : ছয়/সাত বছর ধরে বাস করছি।
আইনজীবী: বাড়িটি কিনেছেন না উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন?
সাক্ষী: বাড়ির জমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। আর বাড়িটি আমি নির্মান করেছি।
আইনজীবী: ৭/৪/২০০৪ সালে আপনি পিরোজপুর  জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি দরখাস্ত দিয়েছিলেন   একজন বেকার অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্যের আবেদন চেয়ে  । বিষয়টি কি সত্য?
সাক্ষী: সত্য।
আইনজীবী : দরখাস্তে আপনি বলেছিলেন আপনি একজন অসহায় বেকার মুক্তিযোদ্ধা।

এ পর্যায়ে আদালত হস্তপেক্ষপ করে বলেন দরখস্তের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করা যাবেনা। তখন আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুব  গুরুত্বপূর্ণ বিধায়   প্রশ্ন করা জরুরি। তখন আদালত আসামী পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এ বিষয়গুলো আদালতে আগে জমা দেননি কেন। তখন অ্যডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মাত্র বিষয়গুলো হাতে পেয়েছি। তখন অ্যডভোকেট মিজানুল ইসলাম এগুলো জমা দেয়ার  জন্য একদিন সময় চান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হলে আদালত বলেন আজই জমা দেন এবং আগামীকাল আবার জেরা শুরু করা হবে বলে আদালতের কার্যক্রম মুলতবী করেণ। এ পর্যন্ত আসার পর প্রথম দিনের জেরা সমাপ্ত হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন