Pages

বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৩

দ্বিতীয় দিনের জেরায় মাহবুবুল আলম // “আমার ভুল হতে পারে”

মেহেদী হাসান, ১২/১২/২০১১
সাক্ষী  মাহবুবুল আলম নিজেকে গোটা পিরোজপুর এলাকার দায়িত্বপ্রাাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা  গোয়েন্দা  হিসেবে দাবি করলেও পিরোজপুর জেলার কোন একটি  থানার রাজাকার, আলবদর , আল শাসম এবং পিস কমিটির সভাপতি সেক্রেটারির নাম বলতে পারেননি। এমনকি তিনি গোয়েন্দা হিসেবে পিরোজপুরের কোন একটি থানায়ও কোনদিন  যাননি বলে স্বীকার করেছেন।

অথচ গত সাত ডিসেম্বর  মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে  পিরোজপুরের মাহবুবুল আলম হাওলাদার প্রথম সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, তিনি পুরো পিরোজপুর জেলায়  একজন মুক্তিযোদ্ধা গোয়েন্দা হিসেবে  দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন  এবং গেপান সংবাদ সংগ্রহ করেন।  সারা জেলার  এলাকায় এলাকায়   পিস কমিটি কর্তক ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ,  মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু  সম্প্রদায়ের লোকজনকে গুলি করে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড তিনি অবলোকন করেন এবং    তা সুন্দরবন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সরবরাহ করেণ।  তারই প্রদান করা এসব বিষয় উল্লেখ করে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী  তাকে প্রশ্ন করেণ এসব বিষয়  কি তাহলে আপনি মিথ্যা বলেছিলেন? তখন মাহবুবুল আলম বলেন, আমার ভুল হতে পারে।
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী, কাউখালি, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া উপজেলার রাজাকার আল বদর, আল শামস এবং পিস কমিটির সভাপতি সেক্রেটারির নাম জিজ্ঞেস করা হলে তি্িন একটি উপজেলার একজনেরও নাম বলতে পারেননি। এমনকি তিনি স্বীকার করেণ গোয়েন্দা হিসেবে তিনি ঐসব কোন একটি উপজেলায়ও কোনদিন যাননি।

আজ  সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সাক্ষী মাহবুবুল আলম আগের দিনের  ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রশ্ন শুরু করেণ মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

আইনজীবী: একজন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি আপনি পিরোজপুর ডিসির কাছে আরেকটি আবেদন জমা দেন ঢেউটিন  চেয়ে। বিষয়টি কি সত্য?
সাক্ষী: করতে পারি।
আইনজীবী: প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়ে প্রথম যে আবেদন করেছিলেন তাতে সাহায্য পেয়েছিলেন?
সাক্ষী: হ্যা
আইনজীবী: কত টাকা?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: দ্বিতীয় দরখাস্তে কতটাকা সাহায্য পান।
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: কত বান টিন পেয়েছিলেন মনে আছে?
সাক্ষী: তাও মনে  নেই।
আইনজীবী: প্রথম দরখাস্তে আপনি বলেছিলেন আপনার বাড়িঘর পাক হানাদার বাহিনী  রাজাকারদের সহায়তায় লুটপাট করে।
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: দ্বিতীয় দরখাস্তে  বাড়িঘর লুটপাট এবং ক্ষতি সাধনের কথা বলেননি।
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: আপনার পেশা কি?
সাক্ষী: মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের সাথে জড়িত।
আইনজীবী: সংসারে আয়ের উৎস কি?
সাক্ষী:  মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাই এবং বসত ভিটা থেকে যে আয় হয় তা থেকে চলে যায়।
আইনজীবী: আপনি বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী রিনা বেগমের সাথে বসবাস করছেন?
সাক্ষী: হ্যা।
আপনার স্ত্রী দুস্থ মাতা  কার্ড সংগ্রহ করে ৩০ কেজি চাল সংগ্রহ করেছেন ২০১১ সালে?
সাক্ষী: হ্যা। শিশু কার্ড পেয়েছে। ভিজিএফ কার্ড নয়।
আইনজীবী: আপনার বাড়ি তৈরির সাল বলতে পারবেন?
সাক্ষী: ছয়/সাত বছর আগে।
আইনজীবী: দালান বাড়ি তৈরির কাজ এই সরকারের আমলে শুরু হয়?
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: আপনি সক্ষ্যে বলেছেন সমস্ত পিরোজপুরে আপনি একজন  মুক্তিযোদ্ধা গোয়েন্দা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পিরোজপুরে তখন পিরোজপুর সদর, কাউখালি, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, স্বরূপকাঠী এবং নাজিরপুর থানা ছিল?
সাক্ষী: সঠিক মনে নেই।
আইনজীবী: মঠবাড়িয়া থানা পিস কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি কারা ছিলেন?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: মঠবাড়িয়া থানার রাজাকার কমান্ডার কে ছিলেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী: আল বদর, আল শাসম  কমান্ডার?
সাক্ষী:  মনে নেই।
আইনজীবী: ঐ থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার, সার্কেল অফিসার কারা ছিলেন বলতে পারবেন?
সাক্ষী: মনে নেই। রইজুদ্দীন, সইজুদ্দিন এবং আমি তিনজনে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করি। আমি পিরোজপুর এবং পারের হাটের দায়িত্বে ছিলাম।
আইনজীবী: কিন্তু পূর্বে যে আপনি সাক্ষ্যদানকালে বলেছিলেন পুরো পিরোজপুর জেলায় গোয়েন্দা হিসেবে আপনি দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং এলাকায় এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড অবলোকন করেন এবং    তা সুন্দরবন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সরবরাহ করেণ? একথা কি তাহলে মিথ্যা?
সাক্ষী : আমার ভুল হতে পারে।
আইনজীবী: একথা আপনাকে কে শিখিয়ে দিয়েছিল?
সাক্ষী: কেউ নয়। আমার নিজের উক্তি।
আইনজীবী: আপনি মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, নাজিরপুর, কাউখালি, নেছারাবাদ এলাকায় কোনদিন গোয়েন্দা হিসেবে যাননি?
সাক্ষী: আমার দায়িত্ব ছিলনা। গোয়েন্দা হিসেবে যাইনি।
আইনজীবী: ভান্ডারিয়া এলাকায় কে গোয়েন্দার দায়িত্বে কে ছিলেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী: কাউখালি, নাজিরপুর, স্বরূপকাঠী এলাকায় গোয়েন্দা কারা ছিলেন তাও আপনার মনে নেই?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: বরিশাল জেলার রাজাকার কমান্ডার কে ছিলেন বলতে পারবেন?
সাক্ষী: বলতে পারবনা।
আইনজীবী : জিয়া নগর  উপজেলা কোন সময় হয় বলতে পারবেন?
সাক্ষী: খালেদা জিয়া সরকারের সময়
আইনজীবী : প্রথম  বার না দ্বিতীয়বার?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: শঙ্করপাশা কি জিয়ানগর উপজেলায় পড়েছে?
সাক্ষী: কিছু অংশ আছে জিয়ানগরের পাশে।
আইনজীবী: শঙ্কর পাশার পিস কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি কে ছিলেন?
সাক্ষী : মনে নেই। পারেরহাট কমিটিই শঙ্কর পাশার কমিটি সমন্বয় করত।
আইনজীবী: শঙ্কর পাশার পিস কমিটির সভাপতি ছিলেন একরাম খলিফা। এটা আপনি গোপন করেছেন।
সাক্ষী: সত্য নয়।
আইনজীবী: একরাম খলিফা শঙ্করপাশার চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাক্ষী: সেটা জানি।
আইনজীবী: ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আপনার এলাকায়  প্রাদেশিক পরিষদে  এবং জাতীয়  পরিষদে মোট কতজন প্রার্থী ছিল বলতে পারবেন?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কতভোট পেয়েছিল মনে আছে?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: ১৯৭৪ সালে পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান কে ছিলেন মনে আছে?
সাক্ষী: মনে নেই।
আইনজীবী: আব্দুস সালাম, পিতা নবাব আলী, গ্রাম উমেদপুর। একে চেনেন?
সাক্ষী: হ্যা
আইনজীবী: আস্রাব আলী, পিতা মৃত সেকেন্দার আলী, গ্রাম হোগলাবুনিয়া। তাকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনিনা।
আইনজীবী: চিত্তরঞ্জন তালুকদার, গ্রাম উমেদপুর। একে চেনেন?
সাক্ষী: চিনতাম।
আইনজীবী: তিনি কি দেশে থাকেন?
সাক্ষী: মারা গেছেন।
আইনজীবী: কোন সালে?
সাক্ষী: এক বছর আগে।
আইনজীবী:ইউসুফ হাওলাদার, পিতা মোতাহার আলী, শঙ্করপাশা। তাকে চেনেন?
সাক্ষী: মনে করতে পারছিনা।
আইনজীবী: আবুল বাশার মন্টু, পিতা মৃত এমদাদুল খান খোকন। একে চেনেন?
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: মিজানুর রহমান, পিতা আস্রাব আলী হাওলাদার। তাকে চেনেন?
সাক্ষী : চিনি।
আইনজীবী: তিনি কি দেশে আছেন?
সাক্ষী: মাঝে মাঝে দেখি।
আইনজীবী: পিরোজপুর আদালতে আপনি আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলেন তাতে এদের সবাইকে আপনি সাক্ষী মেনেছিলেন একথা সত্য?
সাক্ষী: হ্যা।
আইনজীবী: মাহবুব হোসেন, পিতা মান্নান হোসেন। তাকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনিনা
আইনজীবী: জাহাঙ্গীর পসারী, পিতা সইজুদ্দীন পসারী। তাকে চেনেন?
সাক্ষী: চিনি।
আইনজীবী: একই লোকের আরেক ছেলে কাঞ্চন পসারীকে চেনেন?
সাক্ষী: না
আইনজীবী: হরিপদ মিস্ত্রি, চাদব চন্দ্র, মোজাহার খান, খবির হাওলাদার এদের চেনেন?
সাক্ষী: খেয়াল নেই।
আইনজীবী: আপনিন  ২/২/২০১১ তারিখ থানা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন  ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আল শামস  কর্তৃক হত্যা ধর্ষণ, লুণ্ঠন অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে সংশোধনী এনে।
সাক্ষী: হ্যা।
এরপর আরো দুয়েকটি  প্রশ্ন করার পর গতকাল তিনটায় আদালতের কার্যক্রম মুলতবী করা হয়। আজ আবার সাক্ষী মাহবুবুল আলমের জেরা শুরু হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন