মেহেদী হাসান, ২৮/৩/১২
অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ৪০ বছর পরে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পূর্ণ নজিরবিহীন একটি ঘটনা। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরালিওন, কম্বোডিয়া এবং হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে এর কোন নজির নেই। বাংলাদেশের েেত্র এই নজির বিহীন বিলম্বের যুক্তি সঙ্গত কারণ ট্রাইব্যুনালের সামনে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র পরে আইনজীবীদের । কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এর পক্ষে কোন যুক্তি সঙ্গত বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা যদি যুক্তি সঙ্গত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হন তাহলে এ বিচার কার্য চলতে পারে না।
জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমকে মামলা থেকে অব্যাহতিদান এবং তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের বিরোধীতা করে বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত ২৫ মার্চ তিনি প্রথম দিন বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ঐদিন বক্তব্য উপস্থাপনের সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক জানতে চেয়েছিলেন, কম্বোডিয়াতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার কতদিন পর বিচার শুরু হয়েছিল? উত্তরে আজ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে জানান, কম্বোডিয়াতে যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে এবং শেষ হয় ১৯৭৯ সালে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ চলে দীর্ঘ ১৯ বছর । এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছরের মধ্যে ২০০১ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় ট্রাইবুনাল গঠিত হয় এবং বিচার কার্য শুরু হয়।
জামায়াত ছাত্রসংঘকেও সহায়ক বাহিনী আখ্যা:
ব্যারিস্টার রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, জামায়াতে ইসলামী এবং তৎকালীন ছাত্রসংঘকেও পাকিস্তান আর্মির সহায়ক বাহিনী হিসেবে দেখানো হয়েছে গোলম আযমের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জশিটে ।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র সংঘতো দূরের কথা এমনকি রাজাকার বাহিনীও সহায়ক বাহিনীর মধ্যে পরেনা। আইনে বর্নিত সহায়ক বাহিনীর (অক্সুলিয়ারি ফোর্স) সংজ্ঞা উল্লেন করে তিনি বলেন, সহায়ক বাহিনীকে আর্মি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত হতে হবে । কিন্তু রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট। অর্ড্যন্যিান্সের শুরুতে
বলা হয়েছে এটি একটি ভলানটারি (স্বেচ্ছাসেবক) ফোর্স। এর প্রধান নির্বাহী একজন পরিচালক। তাকে নিয়োগ দেন সরকার। আর্মি নয়। সুতরাং এটি একটি সিভিলিয়ান ফোর্স। তিনি বলেন জামায়াত এবং ইসলামী ছাত্র সংঘ কোন সহায়ক বাহিনী ছিলনা কখনো। জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল এবং ইসলামী ছাত্রসংঘ ছিল ছাত্রদের একটি সংগঠন।
গোলাম আযমের একটি চিঠির ভিত্তিতে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় ৩৮ জন বন্দীকে জেল থেকে বের করে হত্যার অভিযোগ বিষয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে চিঠির ওপর ভিত্তি করে এ অভিযোগ আনা হল সে চিঠিটি নেই। চিঠি যিনি বহন করে নিয়ে গেছেন বলে বলা হল তিনিও জীবিত নেই। এমনকি চিঠি যিনি পড়েছেন তিনিও জীবিত নেই। তাহলে কেমন করে প্রমান করা হবে যে, অধ্যাপক গোলাম আযম চিঠি দিয়েছিলেন এবং চিঠিতে ৩৮ জনকে হত্যার নির্দেশনা ছিল?
এ সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরদের বক্তব্য হল অধ্যাপক গোলাম আযম জামায়াত আমীর ছিলেন। জামায়াতের লোকজন রাজাকার বাহিনী গঠন করেছে। জামায়াতের নেতা হিসেবে এসব বাহিনীর ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল। তিনি পাকিস্তানী নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। তাদের কাছে অস্ত্র দাবি করেছেন। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। সে হিসেবে তিনি অভিযুক্ত। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য বলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক রাজাকার বাহিনী গঠনের প্রশ্নই আসেনা। এটি গঠিত হয়েছিল সরকারি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে। জামায়ত কখনো আলবদর আল শামসও গঠন করেনি।
অনুপস্থিত ৪৬ সাক্ষী বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য:
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে একটি দরখাস্ত দিয়ে আদালতে জানানো হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষী হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই ঐ ৪৬ জন সাক্ষী বিভিন্ন সময়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক। এ আবেদন বিষয়ে আজ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, হায়দার সাহেব, আবেদনটি নতুন ধরনের। তাই প্রথমে আপনি আবেদনটি উপস্থাপন করেন। পড়ে শোনান।
সৈয়দ হায়দারি আলী বলেন, তালিকার এক নম্বরে থাকা উষারানী মালাকার অসুস্থ, স্মরনশক্তি লোপ, ভ্রমনে মুত্যু ঝুকি রয়েছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুখরঞ্জন বালী চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর নিখোঁজ। তালিকার ৩ থেকে পাচ নম্বরে থাকা আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
তালিকায় ৬ থেকে ১৯ নম্বর মোট ১৪ জন সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আসামীর পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির
প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। এরা হল সুরেষ চন্দ্র মন্ডল, গণেশ চন্দ্র সাহা, শহিদুল ইসলাম খান সেলিম, আইউব আলী হাওলাদার, গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল, বজলুর রহমান, সিতারা বেগম, রানী বেগম, মো: মোস্তফা, আব্দুল লতিফ হাওলাদার, অনিল চন্দ্র মন্ডল, অজিত কুমার
শীল, খলিলুর রহমান শেখ এবং এছহাক আলী খান। উক্ত ১৯ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা সকলেই মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় বর্ণিত ঘটনার চাুস সাক্ষী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দরখাস্তে বলা হয়েছে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তালিকায় প্রথম ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ক্রমিক নং ২০ থেকে ৪৬ পর্যন্ত সাক্ষীদের নাম তিনি পড়ে শোনাননি। এদের মধ্যে দুই তিনজনের নাম উচ্চারনের পর তিনি বলেন এদের নাম আর পড়লামনা। আপনাদের কাছে আছে।
এরা কেন আসতে পারবেননা সে বিষয়ে দরখাস্তে কোন কারণও উল্লেখ করা হয়নি। তালিকার ক্রমিক নং ২০ থেকে ৪৬ পর্যন্ত সাক্ষীদের মধ্যে পাঁচজন অতি পরিচিত সাক্ষী রয়েছেন। এরা হলেন ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, লেখক প্রফেসর জাফর ইকবাল (হুমায়ুন আহমেদের ভাই), খ্যাতিমান জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, পিরোজপুর সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নামও রয়েছে।
তালিকায় থাকা প্রথম ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে যেসব সাক্ষীদের সাঈদীর পক্ষ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে পিরোজপুরের অস্ত্রধারীরা খুন জখমের হুমকি দিয়েছে।
তিনি বলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী জবানবন্দী দেয়ার পর থেকে নিখোঁজ। তাকে জীবিত পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। তার নিখোঁজ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। অন্য যারা নিখোঁজ তাদেরও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। যেহেতু তাদের খুঁজে পাওয়া অনিশ্চিত এবং কখন পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই তাই তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের পূর্বে দেয়া জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
এরপর সৈয়দ হায়দার আলী ২৩ মার্চ দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী ঠেকাতে অপপ্রচারের কৌশল’ শীর্ষক খবরটি ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান তার বক্তব্যের সমর্থনে। কালের কণ্ঠের ঐ খবরের মূল বিষয় হল মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বাসুদেব নামে এক সাক্ষী হার্টএ্যাটাক করে মারা যাবার পর এটাকে পুঁজি করে এলাকায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার কারনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে সাঈদীর লোকজন এলাকায় ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে এবং এ কারনে আর কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসছেনা।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয় গত ৮ জানুয়ারি বাসুদেব সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর ১৬ দিনের মাথায় হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান। তার আগে একজন সাক্ষী ধরে আনতে গিয়ে আব্দুল গনি নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল হার্টএ্যাটাক করে মারা যান।
বজলুর রহমান নামে আরেক সাক্ষী জানান, সাক্ষী দিতে ঢাকায় গিয়েছিলাম কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর দিতে পারিনি। মানসে কয় সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে মোর শরীল ভাল থাকবেনা। সাক্ষী দিতে যাবার কথা মনে হইলেই শরীর দুর্বল হইয়া পরে।
আরো কয়েকজন অনিচ্ছুক সাক্ষীর উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে রিপোর্টে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষী তো সাক্ষ্য দেবে। ক্রস ইক্সামিনেশন ছাড়া সাক্ষীর কোন ভ্যালূ আছে?
বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, যাদের ঢাকায় নিয়ে আসলেন সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তাদের বেড়াতে যেতে দিলেন কেন? সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, কোন মুক্ত মানুষকে আমরা আটকে রাখি কিভাবে।
আইনের ১৯ (২) ধারায় রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছে ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ বিষয়ে। ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে বিচার চলাকলে কোন ব্যক্তি মৃত হলে, তাকে হাজির করা যদি কালপেক্ষন এবং ব্যাবহুল হয় এবং ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন এভাবে সময় এবং অর্থ ব্যায় করে কাইকে হাজির করা যুক্তিসঙ্গত নয় তাহলে মেজিস্ট্রেট বা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে উক্ত ব্যক্তিদের প্রদত্ত জবানবন্দী আদালত এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করতে পারেন।
৪৬ জন অনুপস্থিত সাক্ষী সম্পর্কিত আবেদন পেশের শুরুতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আইনের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী এ আবেদন করা হয়েছে কি-না সেটাই হল আসল কথা। তা না করে বললেই হবেনা যে, সাক্ষী আসে নাই অতএব তাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নেন।
বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, যারা বেড়াতে গিয়ে আর আসলনা, যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারা কিভাবে আইনের ১৯ (২) ধারায় পরে? কাউকে হাজির করা কালক্ষেপন বা ব্যয়বহুল বলতে বোঝায় কোন সাক্ষী যদি আমেরিকায় থাকে, তার পাসপোর্ট ভিসা পেতে যদি সমস্যা হয়, তাকে আনতে যদি অতিরিক্ত সময় এবং অর্থ লাগে সেটা কালক্ষেপনের আওতায় ধরা যায়। কিন্তু আইনে তো মিসিং বা নিঁেখাজ শব্দ নেই। যারা ভারতে পালিয়ে গেল, নিখোঁজ যাদের ডেবডিও পাওয়া যায়নি তাদের কি হবে?
আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে:
সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে জামিনে থাকা আব্দুল আলিমের জামিনের মেয়াদ ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ঐদিন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানী শুরুর জন্য নির্ধারন করা হয়েছে।
নিজামী এবং সালাউদ্দিন কাদেরের মামলার তারিখ পেছাল:
জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের বিরোধীতা করে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করার কথা ছিল গতকাল। তার মামলার তারিখ আগামী ১ এপ্রিল নির্ধারন করা হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি ট্রাইব্যুনালের হাযত খানায় ছিলেন। আজ মোট পাঁচটি মামলার কার্যক্রম থাকায় তার মামলার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তাই সারা দিন হাজতখানায় অপেক্ষ করেন তিনি।
এদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমাদের টিমে নতুন একজন সদস্য (বিচারপতি আনোয়ারুল হক) এসেছেন। তিনি এখনো সবকিছু দেখে নেয়ার সুযোগ পাননি। তাই আমরা জনাব সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চার্জ গঠনের অর্ডার দেয়ার জন্য আরেকটু সময় নিতে চাই। আগামী বুধবার ৪ঠা এপ্রিল চার্জ গঠনের আদেশ দানের জন্য ধার্য্য করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক প্রথমে মঙ্গলবার ৩ এপ্রিল তারিখ নির্ধারন করলে ঐদিন ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা জানান ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। এসময় আদালতের ডকে থাকা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী উচ্চস্বরে বলেন, উনি না থাকলে অসুবিধা নেই। আমিতো থাকব। মঙ্গলবারই রাখেন। কোন অসুবিধা নেই।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে বলেন, আপনার অসুবিধার কথা বিবেচনা করে বুধবার ৪ তারিখই করা হল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আবারো উচ্চস্বরে বলেন, আমাকে ৪০০ দিন বাইন্ধা রাখছেন। আই এ্যাম এ বিগ ট্রাবল।
এ পর্যন্ত যে আটজনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচজনকেই গতকাল ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এরা হলেন অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মাওলানা সাঈদী এবং আব্দুল আলিম। এদের মধ্যে একমাত্র আব্দুল আলিম জামিনে মুক্ত আছেন। বাকীরা জেলে বন্দী।
অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আজ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ৪০ বছর পরে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পূর্ণ নজিরবিহীন একটি ঘটনা। নুরেমবার্গ থেকে শুরু করে প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরালিওন, কম্বোডিয়া এবং হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে এর কোন নজির নেই। বাংলাদেশের েেত্র এই নজির বিহীন বিলম্বের যুক্তি সঙ্গত কারণ ট্রাইব্যুনালের সামনে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র পরে আইনজীবীদের । কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এর পক্ষে কোন যুক্তি সঙ্গত বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা যদি যুক্তি সঙ্গত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হন তাহলে এ বিচার কার্য চলতে পারে না।
জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমকে মামলা থেকে অব্যাহতিদান এবং তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের বিরোধীতা করে বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত ২৫ মার্চ তিনি প্রথম দিন বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ঐদিন বক্তব্য উপস্থাপনের সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক জানতে চেয়েছিলেন, কম্বোডিয়াতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার কতদিন পর বিচার শুরু হয়েছিল? উত্তরে আজ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে জানান, কম্বোডিয়াতে যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে এবং শেষ হয় ১৯৭৯ সালে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ চলে দীর্ঘ ১৯ বছর । এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছরের মধ্যে ২০০১ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় ট্রাইবুনাল গঠিত হয় এবং বিচার কার্য শুরু হয়।
জামায়াত ছাত্রসংঘকেও সহায়ক বাহিনী আখ্যা:
ব্যারিস্টার রাজ্জাক ট্রাইব্যুনালে বলেন, জামায়াতে ইসলামী এবং তৎকালীন ছাত্রসংঘকেও পাকিস্তান আর্মির সহায়ক বাহিনী হিসেবে দেখানো হয়েছে গোলম আযমের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জশিটে ।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র সংঘতো দূরের কথা এমনকি রাজাকার বাহিনীও সহায়ক বাহিনীর মধ্যে পরেনা। আইনে বর্নিত সহায়ক বাহিনীর (অক্সুলিয়ারি ফোর্স) সংজ্ঞা উল্লেন করে তিনি বলেন, সহায়ক বাহিনীকে আর্মি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, পরিচালিত হতে হবে । কিন্তু রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট। অর্ড্যন্যিান্সের শুরুতে
বলা হয়েছে এটি একটি ভলানটারি (স্বেচ্ছাসেবক) ফোর্স। এর প্রধান নির্বাহী একজন পরিচালক। তাকে নিয়োগ দেন সরকার। আর্মি নয়। সুতরাং এটি একটি সিভিলিয়ান ফোর্স। তিনি বলেন জামায়াত এবং ইসলামী ছাত্র সংঘ কোন সহায়ক বাহিনী ছিলনা কখনো। জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল এবং ইসলামী ছাত্রসংঘ ছিল ছাত্রদের একটি সংগঠন।
গোলাম আযমের একটি চিঠির ভিত্তিতে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় ৩৮ জন বন্দীকে জেল থেকে বের করে হত্যার অভিযোগ বিষয়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে চিঠির ওপর ভিত্তি করে এ অভিযোগ আনা হল সে চিঠিটি নেই। চিঠি যিনি বহন করে নিয়ে গেছেন বলে বলা হল তিনিও জীবিত নেই। এমনকি চিঠি যিনি পড়েছেন তিনিও জীবিত নেই। তাহলে কেমন করে প্রমান করা হবে যে, অধ্যাপক গোলাম আযম চিঠি দিয়েছিলেন এবং চিঠিতে ৩৮ জনকে হত্যার নির্দেশনা ছিল?
এ সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটরদের বক্তব্য হল অধ্যাপক গোলাম আযম জামায়াত আমীর ছিলেন। জামায়াতের লোকজন রাজাকার বাহিনী গঠন করেছে। জামায়াতের নেতা হিসেবে এসব বাহিনীর ওপর তার নিয়ন্ত্রন ছিল। তিনি পাকিস্তানী নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। তাদের কাছে অস্ত্র দাবি করেছেন। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। সে হিসেবে তিনি অভিযুক্ত। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য বলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম কর্তৃক রাজাকার বাহিনী গঠনের প্রশ্নই আসেনা। এটি গঠিত হয়েছিল সরকারি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে। জামায়ত কখনো আলবদর আল শামসও গঠন করেনি।
অনুপস্থিত ৪৬ সাক্ষী বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য:
গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে একটি দরখাস্ত দিয়ে আদালতে জানানো হয় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ৪৬ জন সাক্ষী হাজির করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। তাই ঐ ৪৬ জন সাক্ষী বিভিন্ন সময়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা তাদের অনপস্থিতিতে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করা হোক। এ আবেদন বিষয়ে আজ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, হায়দার সাহেব, আবেদনটি নতুন ধরনের। তাই প্রথমে আপনি আবেদনটি উপস্থাপন করেন। পড়ে শোনান।
সৈয়দ হায়দারি আলী বলেন, তালিকার এক নম্বরে থাকা উষারানী মালাকার অসুস্থ, স্মরনশক্তি লোপ, ভ্রমনে মুত্যু ঝুকি রয়েছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুখরঞ্জন বালী চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে বের হবার পর নিখোঁজ। তালিকার ৩ থেকে পাচ নম্বরে থাকা আশিষ কুমার মন্ডল, সুমীত রানী মন্ডল এবং সমর মিস্ত্রী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ। সম্ভবত তারা গোপনে ভারতে পালিয়ে গেছে।
তালিকায় ৬ থেকে ১৯ নম্বর মোট ১৪ জন সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আসামীর পক্ষ অবলম্বনকারী পিরোজপুরের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সাক্ষীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকির
প্রেক্ষিতে ভয়ে ভীত হয়ে তারা আত্মপোগন করেছে। এরা হল সুরেষ চন্দ্র মন্ডল, গণেশ চন্দ্র সাহা, শহিদুল ইসলাম খান সেলিম, আইউব আলী হাওলাদার, গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল, বজলুর রহমান, সিতারা বেগম, রানী বেগম, মো: মোস্তফা, আব্দুল লতিফ হাওলাদার, অনিল চন্দ্র মন্ডল, অজিত কুমার
শীল, খলিলুর রহমান শেখ এবং এছহাক আলী খান। উক্ত ১৯ জন সাক্ষী সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা সকলেই মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় বর্ণিত ঘটনার চাুস সাক্ষী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দরখাস্তে বলা হয়েছে ৪৬ জন সাক্ষীকে হাজির করা আদৌ সম্ভব নয়। তালিকায় প্রথম ১৯ জন সাক্ষী হাজির করতে না পারা বিষয়ে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ক্রমিক নং ২০ থেকে ৪৬ পর্যন্ত সাক্ষীদের নাম তিনি পড়ে শোনাননি। এদের মধ্যে দুই তিনজনের নাম উচ্চারনের পর তিনি বলেন এদের নাম আর পড়লামনা। আপনাদের কাছে আছে।
এরা কেন আসতে পারবেননা সে বিষয়ে দরখাস্তে কোন কারণও উল্লেখ করা হয়নি। তালিকার ক্রমিক নং ২০ থেকে ৪৬ পর্যন্ত সাক্ষীদের মধ্যে পাঁচজন অতি পরিচিত সাক্ষী রয়েছেন। এরা হলেন ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, লেখক প্রফেসর জাফর ইকবাল (হুমায়ুন আহমেদের ভাই), খ্যাতিমান জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, পিরোজপুর সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নামও রয়েছে।
তালিকায় থাকা প্রথম ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে যেসব সাক্ষীদের সাঈদীর পক্ষ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে পিরোজপুরের অস্ত্রধারীরা খুন জখমের হুমকি দিয়েছে।
তিনি বলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী জবানবন্দী দেয়ার পর থেকে নিখোঁজ। তাকে জীবিত পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ। তার নিখোঁজ বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। অন্য যারা নিখোঁজ তাদেরও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। যেহেতু তাদের খুঁজে পাওয়া অনিশ্চিত এবং কখন পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই তাই তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের পূর্বে দেয়া জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক।
এরপর সৈয়দ হায়দার আলী ২৩ মার্চ দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী ঠেকাতে অপপ্রচারের কৌশল’ শীর্ষক খবরটি ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান তার বক্তব্যের সমর্থনে। কালের কণ্ঠের ঐ খবরের মূল বিষয় হল মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে বাসুদেব নামে এক সাক্ষী হার্টএ্যাটাক করে মারা যাবার পর এটাকে পুঁজি করে এলাকায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার কারনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে সাঈদীর লোকজন এলাকায় ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে এবং এ কারনে আর কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসছেনা।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয় গত ৮ জানুয়ারি বাসুদেব সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর ১৬ দিনের মাথায় হার্ট এ্যাটাক করে মারা যান। তার আগে একজন সাক্ষী ধরে আনতে গিয়ে আব্দুল গনি নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল হার্টএ্যাটাক করে মারা যান।
বজলুর রহমান নামে আরেক সাক্ষী জানান, সাক্ষী দিতে ঢাকায় গিয়েছিলাম কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর দিতে পারিনি। মানসে কয় সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে মোর শরীল ভাল থাকবেনা। সাক্ষী দিতে যাবার কথা মনে হইলেই শরীর দুর্বল হইয়া পরে।
আরো কয়েকজন অনিচ্ছুক সাক্ষীর উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে রিপোর্টে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, সাক্ষী তো সাক্ষ্য দেবে। ক্রস ইক্সামিনেশন ছাড়া সাক্ষীর কোন ভ্যালূ আছে?
বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, যাদের ঢাকায় নিয়ে আসলেন সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তাদের বেড়াতে যেতে দিলেন কেন? সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, কোন মুক্ত মানুষকে আমরা আটকে রাখি কিভাবে।
আইনের ১৯ (২) ধারায় রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছে ৪৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দী তাদের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ বিষয়ে। ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে বিচার চলাকলে কোন ব্যক্তি মৃত হলে, তাকে হাজির করা যদি কালপেক্ষন এবং ব্যাবহুল হয় এবং ট্রাইব্যুনাল যদি মনে করেন এভাবে সময় এবং অর্থ ব্যায় করে কাইকে হাজির করা যুক্তিসঙ্গত নয় তাহলে মেজিস্ট্রেট বা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে উক্ত ব্যক্তিদের প্রদত্ত জবানবন্দী আদালত এভিডেন্স আকারে গ্রহণ করতে পারেন।
৪৬ জন অনুপস্থিত সাক্ষী সম্পর্কিত আবেদন পেশের শুরুতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আইনের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী এ আবেদন করা হয়েছে কি-না সেটাই হল আসল কথা। তা না করে বললেই হবেনা যে, সাক্ষী আসে নাই অতএব তাদের জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নেন।
বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, যারা বেড়াতে গিয়ে আর আসলনা, যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারা কিভাবে আইনের ১৯ (২) ধারায় পরে? কাউকে হাজির করা কালক্ষেপন বা ব্যয়বহুল বলতে বোঝায় কোন সাক্ষী যদি আমেরিকায় থাকে, তার পাসপোর্ট ভিসা পেতে যদি সমস্যা হয়, তাকে আনতে যদি অতিরিক্ত সময় এবং অর্থ লাগে সেটা কালক্ষেপনের আওতায় ধরা যায়। কিন্তু আইনে তো মিসিং বা নিঁেখাজ শব্দ নেই। যারা ভারতে পালিয়ে গেল, নিখোঁজ যাদের ডেবডিও পাওয়া যায়নি তাদের কি হবে?
আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে:
সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে জামিনে থাকা আব্দুল আলিমের জামিনের মেয়াদ ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ঐদিন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানী শুরুর জন্য নির্ধারন করা হয়েছে।
নিজামী এবং সালাউদ্দিন কাদেরের মামলার তারিখ পেছাল:
জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের বিরোধীতা করে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করার কথা ছিল গতকাল। তার মামলার তারিখ আগামী ১ এপ্রিল নির্ধারন করা হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি ট্রাইব্যুনালের হাযত খানায় ছিলেন। আজ মোট পাঁচটি মামলার কার্যক্রম থাকায় তার মামলার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তাই সারা দিন হাজতখানায় অপেক্ষ করেন তিনি।
এদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আজ চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আমাদের টিমে নতুন একজন সদস্য (বিচারপতি আনোয়ারুল হক) এসেছেন। তিনি এখনো সবকিছু দেখে নেয়ার সুযোগ পাননি। তাই আমরা জনাব সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চার্জ গঠনের অর্ডার দেয়ার জন্য আরেকটু সময় নিতে চাই। আগামী বুধবার ৪ঠা এপ্রিল চার্জ গঠনের আদেশ দানের জন্য ধার্য্য করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক প্রথমে মঙ্গলবার ৩ এপ্রিল তারিখ নির্ধারন করলে ঐদিন ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা জানান ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম। এসময় আদালতের ডকে থাকা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী উচ্চস্বরে বলেন, উনি না থাকলে অসুবিধা নেই। আমিতো থাকব। মঙ্গলবারই রাখেন। কোন অসুবিধা নেই।
তখন বিচারপতি নিজামুল হক ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে বলেন, আপনার অসুবিধার কথা বিবেচনা করে বুধবার ৪ তারিখই করা হল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আবারো উচ্চস্বরে বলেন, আমাকে ৪০০ দিন বাইন্ধা রাখছেন। আই এ্যাম এ বিগ ট্রাবল।
এ পর্যন্ত যে আটজনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচজনকেই গতকাল ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এরা হলেন অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মাওলানা সাঈদী এবং আব্দুল আলিম। এদের মধ্যে একমাত্র আব্দুল আলিম জামিনে মুক্ত আছেন। বাকীরা জেলে বন্দী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন