Pages

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

গোলাম আযম কেস ফাইল


মেহেদী হাসান
৩ জানুয়ারি ২০১২  শুনানি শেষে গোলাম আযমের মামলা পুনর্বিচারে আসামিপরে আবেদন খারিজ করে দেয় ট্রাইব্যুনাল ।

২০১২  সালের ১৯ ডিসেম্বর মামলাটির পুনর্বিচারের আবেদন জানান গোলাম আযমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ কার্যদিবসে আবেদনগুলোর ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আসামিপে আবেদনের পে শুনানি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সিনিয়র আইনজীবী বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, আসামিপরে প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ও অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। অপরদিকে আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ বেলজিয়ামের ব্রাাসেলস প্রবাসী বাংলাদেশি আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-১ এর পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথনের সূত্র ধরে এ আবেদন করেন আসামিপ।

ওই স্কাইপ কথোপকথনের সূত্র ধরে বিচারাধীন জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এ জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা ৪টিরও পুনরায় শুরু করার আবেদন ২০১৩ সালের  ৩ ও ৭ জানুয়ারি খারিজ করে দেন দু’টি ট্রাইব্যুনাল।

১০ জানুয়ারি এসব খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপ রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন। ১৫-১৬ জানুয়ারি শুনানি শেষে ২১ জানুয়ারি সেসব আবেদনও ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেওয়ায় মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রমের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে।

অন্যদিকে একই ঘটনার সূত্র ধরে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাশাপাশি পুনর্গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালও। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর প্রথম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন আর তার স্থলাভিষিক্ত হন এ ট্রাইব্যুনালেরই বিচারক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। 


মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম
২০১০ সালের ১৫ জুলাই গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত শেষে তদন্ত প্রতিবেদন, অন্যান্য তথ্য-প্রমাণ, এবং আলামত তদন্ত সংস্থার প থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করা হয়।
১২ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনের প থেকে ট্রাইব্যুনালের কাছে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অভিযোগগুলো আমলে নেওয়ার জন্য ধার্য দিনে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি সঠিক বিন্যাসে উপস্থাপিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তা আবার প্রসিকিউশনের কাছে ফেরত পাঠান।

২০১২ সালের  ৫ জানুয়ারি ফেরতপ্রাপ্ত অভিযোগপত্রটিকে সঠিকভাবে বিন্যস্ত করে প্রসিকিউশন টিম পুনরায় ট্রাইব্যুনালের কাছে দাখিল করেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের জমা দেওয়া ওই আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মোট ৬২টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। মোট ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়।

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল ১১ জানুয়ারি সশরীরে গোলাম আযমকে হাজির করতে তার আইনজীবীদের নির্দেশ দেন। ওই দিন হাজির না হলে ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোযাানা জারির কথা জানান ট্রাইব্যুনাল। ১০ জানুয়ারি গোলাম আযমের আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেন।

১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় গোলাম আযমকে। ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ আমলে নেন এবং জামিন নামঞ্জুর করে গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তার স্বাস্থ্য ও বয়সের দিকটি বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে রাখার নির্দেশ দেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি থকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয।

রাষ্ট্রপরে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম অভিযোগ গঠনের পে যুক্তি উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে গোলাম আযমকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে যুক্তি দেন তার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।

মানবতাবিরোধী ৫ ধরনের অপরাধের ৬১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের  ১৩ মে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

৩০ মে গোলাম আযমের মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তরের আবেদন করেন আসামিপ। শুনানি শেষে ১৮ জুন তা খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল।

১০ জুন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপ। ১৪২ পৃষ্ঠার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপরে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াাদ আল মালুম, নূরজাহান বেগম মুক্তা, এ কে এম সাইফুল ইসলাম, সুলতান মাহমুদ ও মীর ইকবাল হোসেন।

১ জুলাই থেকে শুরু করে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপরে সাীদের স্যাগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার ৭ সাীসহ রাষ্ট্রপরে মোট ১৭ জন সাী স্যা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ জন সাীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিকেই স্যা হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

সাক্ষী :
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপে স্যা দেওয়া ঘটনার সাীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর  ড. মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, টিআইবি চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা দণিপাড়া গ্রামের সোনা মিয়া, আনোয়ারা বেগম (ক্যামেরা ট্রায়াল), গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, রাজধানীর নাখালপাড়ার ফরিদ আলম এবং মহসিন আলী খান।

আর জব্দ তালিকার সাীরা হলেন- বাংলা একাডেমীর সহ গ্রন্থাগারিক মো. এজাব উদ্দিন মিয়া, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) রাজনৈতিক শাখার উচ্চমান সহকারী সেলিনা আফরোজ, কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের উচ্চমান সহকারী কাজী আইয়ুব হোসেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার কামালের বোন ডা. মুনিয়া ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় যাদুঘরের কিপার ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মরত সাঁট মুদ্রারিক জামিনুর শেখ।

গোলাম আযমের পে তার ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সাক্ষ্য দেন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি  থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত এবং বুধবার ১২ কার্যদিবসে রাষ্ট্রপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ, প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন। অন্যদিকে ১০ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এবং বুধবার ১২ কার্যদিবসে আসামিপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট ইমরান সিদ্দিকী।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  অভিযোগ
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ হলো, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র, সহযোগিতা, উস্কানি, সম্পৃক্ততা ও বাধা না দেওয়া এবং নির্যাতন।

অভিযোগগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত ৬টি, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা সংক্রান্ত ৩টি, উস্কানি দেওয়ার ২৮টি, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেওয়ার ২৩টি এবং ব্যক্তিগত হত্যা ও নির্যাতন সংক্রান্ত ১টি অভিযোগ রয়েছে।

১ নং অভিযোগ :
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গঠিত প্রথম  অভিযোগ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত।  এ ধরনের অভিযোগে ছয়টি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া ফরমাল চার্জে।  এগুলোর মধ্যে  রয়েছে  একাত্তরের ৪ এপ্রিল গোলাম আযম, নুরুল আমীন, মৌলভী ফরিদ আহমেদ, খাজা খয়েরউদ্দিন, এ কে এম শফিকুল ইসলাম, মাওলান নুরুজ্জামান, হামিদুল হক চৌধুরী, মোহসিনউদ্দিন আহমেদ, এ টি সাদীসহ ১২ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে নাগরিক শান্তি কমিটি গঠনের সড়যন্ত্র  করেন। আগের সাাতের সূত্র ধরে ৬ এপ্রিল গোলাম আযম আবারও টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং পূর্বোল্লিখিত ষড়যন্ত্রে  অংশ নেন। ১৯ জুন এই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় গোলাম আযম রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া  খানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের  একটি বৈঠক করেন। ১ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে আবারও ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে মোকাবিলার জন্য রাজাকার বাহিনীর শক্তি বাডাানোর পরামর্শ দেন।

২ নং অভিযোগ :
 মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনার অভিযোগ।   অভিযোগে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।  ৪ এপ্রিল টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠকে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৯ এপ্রিল গোলাম আযম ও অন্যরা ঢাকায ১৪০ সদস্যের নাগরিক শান্তি কমিটি গঠন করেন। ৪ মে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে এ কিউ এম শফিকুল ইসলামের বাসভবনে খাজা খয়েরউদ্দিনের সভাপতিত্বে শান্তি কমিটির সভা হয় যেখানে গোলাম আযম উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিয়নের  শান্তি কমিটি গঠনের বিষয়ে  পরিকল্পনা করা হয়।


৩ নং অভিযোগ :
এখানে  মানবতাবিরোধী অপরাধে উস্কানির ২৮টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।  এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে  ৭ এপ্রিল গোলাম আযম এক যুক্ত বিবৃতিতে স্বাধীনতাকামী মানুষকে ‘ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের যেখানেই দেখা যাবে, সেখানেই ধ্বংস করা হবে। ২২ এপ্রিল শান্তি কমিটির সভা শেষে এক বিবৃতিতে গোলাম আযম অধীনস্থ সংগঠনগুলোর সদস্যদের ‘দেশপ্রেমিক নাগরিক’ উল্লেখ করে দেশের সাধারণ নাগরিকদের ধ্বংস করার আহ্বান জানান।

১৭ মে গোলাম আযম ঢাকায়  এক সভায় স্বাধীনতা আন্দোলনকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ’ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ উল্লেখ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নমের সেনা অভিযানের প্রশংসা করেন। একাত্তরের ১৬ জুলাই রাজশাহী, ১৮ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া , ৪ আগস্ট খুলনা, ৭ আগস্ট কুষ্টিয়া প্রভৃতি এলাকায় আয়োজিত  বিভিন্ন সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও উত্তেজনাকর বক্তব্য দেন। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের ২৫তম আজাদী দিবস উপলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  কার্জন হলে, ১৭ ও ২৩ আগস্ট দলীয়  সভায় এবং ২৬ আগস্ট পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত দলীয়  অনুষ্ঠানে গোলাম আযম বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।

১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল এডুকেশন সেন্টারে শিা গ্রহণরত রাজাকারদের শিবির পরিদর্শন করে তাদের সশস্ত্র হওয়ার  আহ্বান জানান। ৩ অক্টোবর ঢাকায় মজলিসে শুরার সভায়  একই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন গোলাম আযম।

৪ নং অভিযোগ:
চতুর্থ অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগিতা বা সম্পৃক্ততার ২৩টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ৪ ও ৬ এপ্রিল টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে গোলাম আযমসহ অন্যরা সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ৯ এপ্রিল গোলাম আযমের সহযোগিতায় নাগরিক শান্তি কমিটি গঠিত হলে ১৫ এপ্রিল এর নাম পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি করা হয়।  শান্তি কমিটির ২১ সদস্যের কার্যকরী কমিটির একজন সদস্য ছিলেন গোলাম আযম।

১৮ জুন লাহোর বিমানবন্দরে গোলাম আযম বলেন, জনগণ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে চায়। ১৯ জুন রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া  খানের সঙ্গে দেখা করে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মোকাবিলার জন্য রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান জানান। পরদিন লাহোরে জামায়াাতের পশ্চিম পাকিস্তান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে দুষ্কৃতকারীরা সক্রিযয় রয়েছে  এবং তাদের  প্রতিরোধে  ও শান্তিপ্রিয়  নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসজ্জিত হওয়া  উচিত।

৫ নং অভিযোগ :
পঞ্চম অভিযোগে হত্যা ও নির্যাতনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  এতে বলা হয়  কুমিল্লার হোমনা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সিরু মিয়া  একাত্তরে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় দারোগা (সাব-ইন্সপেক্টর) হিসেবে কর্মরত  ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ তিনি স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও ১৪ বছরের ছেলে আনোয়ার কামালকে নিয়ে  কুমিল্লার নিজ বাড়িতে  যান। সেখানে সিরু মিয়া  শরণার্থীদের ভারত গমনে  সাহায্য করতেন।

২৭ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে কসবা থানার তন্তর চেকপোস্টের কাছে সিরু মিয়া ও তার ছেলেসহ ছয়জন  ভারতে যাওয়ার সময় রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন।  তাদের রাজাকার ক্যাম্পে  নিয়ে কয়েক দিন নির্যাতনের পর ব্রাাহ্মণবাড়িয়ার কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।  স্বামী-সন্তানের ধরা পড়ার  খবর পেয়ে সিরু মিয়ার স্ত্রী  গোলাম আযমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সিরু  মিয়ার ভগ্নিপতি ছিলেন গোলাম আযমের দুই ছেলে আজমী ও আমীনের শিক। তিনি গোলাম আযমের কাছে সিরু মিয়া  ও তার ছেলেকে মুক্তি দিতে অনুরোধ জানান।

গোলাম আযম ব্রাাহ্মণবাড়িয়া শান্তি কমিটির নেতা  পেয়ারা মিয়ার কাছে  একটি চিঠি পাঠান, যাতে সিরু মিয়া  ও তার ছেলেকে হত্যার নির্দেশ ছিল। চিঠি পাওয়ার পর  ঈদের দিন রাতে সিরু মিয়াসহ  ৩৮ জনকে পাকিস্তানি সেনারা রাজাকার ও আলবদরদের সহযোগিতায়  হত্যা করা হয়। মোট ৪০ জনকে হত্যার জন্য সেল থেকে বের করা হয়েছিল। একজনকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং অপর একজন প্রানে বেঁচে যায় হত্যাকান্ড থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন