মেহেদী হাসান, ১১/১২/২০১৩, বুধবার
আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ডাদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণ করা হবে কি হবেনা সে বিষয়ে শুনানী আগামীকাল বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রিভিউ বিষয়ে শুনানী শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ বহাল থাকবে। এ সময়ের মধ্যে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যাবেনা।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানী গ্রহণ শুরু করেন। শুনানী শেষে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত শুনানী মুলতবি করা হয়। শুনানীর সময় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে আর নতুন করে কোন আদেশের দরকার নেই। বিষয়টি এখন কোর্টের বিবেচানধীন রয়েছে।
শুনানী শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, শুনানী শেষ না হওয়া পর্যন্ত আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কোন উপায় নেই।
শুনানী শেষে এ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক ভাবেই শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রায় কার্যকর স্থগিত থাকবে। যখন কোন কিছু সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে এবং সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে আমি উপস্থিত থাকি, সেেেত্র সরকার নিজে থেকে তো অন্য কোন ধরণের পদপে নেয় না।
মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানীর শুরুতে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতের কাছে আবেদন করেন মৃত্যৃদন্ড কার্যকর বিষয়ে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন যে স্থগিত আদেশ দিয়েছেন তা বর্ধিত করা হোক। আর রিভিউ বিষয়ে শুনানীর জন্য পরবর্তীতে একটা তারিখ ধার্য্য করা হোক। রিভিউ বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিষয়টি স্থগিত করার আবেদন করেন।
এসময় তিনি মঙ্গলবার রাত ১২টার পর আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা তুলে ধরেন। এরপর তারা কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে চেম্বার বিচারপতির কাছে যান স্টে অর্ডার এবং রিভিউ আবেদন নিয়ে যান সে বিষয়ে বলেন।
আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানী উপলক্ষে সকাল থেকে সুপ্রীম কোর্টে ভিড় করতে থাকেন বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক এবং আইনজীবী। শুনানী শুরু হবার আগেই প্রধান বিচারপতির সুবিশাল এজলাস কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। স্থানাভাবে অনেক আইনজীবী আদালত কক্ষের বাইরে দাড়িয়ে থাকেন। একটায় শুনানী বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি হওয়ার পর আসামী পক্ষের আইনজীবীদের ঘিরে ধরেন বিপুল সংখ্যক ফটো সাংবাদিক এবং টিভি ক্যামেরাম্যান। তাদের ভিড় সামলে সামনে এগুতে রীতিমত কসরত করতে হয় আইনজীবীদের। আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ভবনে প্রবেশের সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী সরকার বিরোধী স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন আদালত অঙ্গন।
সকাল নয়টার সামান্য পরেই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ বসে। এসময় এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্থগিতাদেশ বিষয়ে বলেন তিনি এ সম্পর্কে কিছু জানতেননা। তাকে জানানো হয়নি। এছাড়া চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন কর্তৃক কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ প্রদানের পর রাতে প্রধান বিচারপতির সাথে এটর্নি জেনারেল এর বৈঠক বিষয়ে কোন কোন টিভিতে খবর প্রচার বিষয়ে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেন এটর্নি জেনারেল । তিনি এ ধরনের কোন বৈঠকের বিষয়ে অস্বীকার করেন। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেনও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এরপর কিছুক্ষনের জন্য বিরতিতে যায় কোর্ট।
৯.৫৫ মিনিটে পুনরায় কোর্ট বসার আগেই আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন।
রিভিউ আবেদন শুনানী :
৯.৫৫ মিনিটে পুনরায় কোর্ট বসার পর প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর উদ্দেশে বলেন আপনি কি রিভিউ আবেদনের কপি পেয়েছেন? এটর্নি জেনারেল বলেন, না। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি তখন প্রধান বিচারপতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, গতকাল আমরা তাকে পাইনি। আজ সকালে সেকশনে জমা দিয়েছি।
এরপর প্রধান বিচারপতি এটর্নি জেনারেলকে বলেন রিভিউ আবেদন বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? এটর্নি জেনারেল প্রথমে বলেন দণ্ড কার্যকর স্টে অর্ডার এর সময় বাড়ানো উচিত হবেনা। আর রিভিউ আবেদনে বিষয়ে এটর্নি জেনারেল বলেন, আমার সিরিয়াস অবজেকশন আছে। এটা অবশ্যই চলতে পারেনা। তিনি ট্রাইব্যুনাল আইন এবং সংবিধান এর বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে যুক্তি পেশ করে বলেন রিভিউ আবেদন করা এবং গ্রহনের কোন সুযোগ নেই।
এসময় তিনি বলেন, সংবিধানে ৪৭ (৩) ধারায় বলা হয়েছে “ এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবাতা বিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া গণ্য হইবেনা কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনী হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবেনা।”
৪৭ ক (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “এই সংবিধানে যাহা বলা হাইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবেনা।”
এটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানে এটা স্পস্ট যে, আইসিটিতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুপ্রীম কোর্টের কাছে কোন প্রতিকার চাইতে পারবেননা। ট্রাইব্যুনাল আইনেও রিভিউ বিষয়ে কিছু বলা নেই।
রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানীর সময় আদালত থেকেই প্রশ্ন করা হয় এ আবেদন চলতে পারে কিনা।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানী পেশ করার পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান বিচারপতি শুনানী পেশ করার জন্য বললে তিনি সময় প্রার্থনা করে বলেন, আমাদের কোন প্রস্তুতি নেই। সময় দরকার।
এরপর প্রধান বিচারপতি বেশ কয়েকবার অনুরোধ করে বলেন, শুরু করেন তারপর দেখা যাবে। আগে শুরু করেন। এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামীর রিভিউ আবেদন করার অধিকারের পক্ষে যুক্তি পেশ শুরু করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রিভিউ আবেদনের পক্ষে প্রথমে সংবিধানের ১০৫ ধারা পড়ে শোনান : এতে বলা হয়েছে ‘সংসদের যেকোন আইনের বিধানাবলীর-সাপেক্ষে এবং আপিল বিভাগ কর্তৃক যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপিল বিভাগের ঘোষিত কোন রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’
এরপর সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান তিনি। এখানে বলা হয়েছে ‘এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসামাঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ , এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (১) । রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কোন আইন প্রনয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (২)।’
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রিভিউ করার বিষয়টি আপিল বিভাগের সহজাত ক্ষমতা। কোন আইনের বলে সংবিধানে প্রদত্ত এবং আপিল বিভাগের সহজাত ক্ষমতা কেড়ে নেয়া যাবেনা।
একটা পর্যন্ত চলা শুনানীর সময় মাঝখানে একঘন্টার বিরতি দেয়া হয় ।
আব্দুল কাদের মোল্লার আবেদন শুনানীর জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এইএচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ।
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের পর গত ৫ ডিসেম্বর ৭৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আট তারিখ তার বিরুদ্ধে মৃত্য পরোয়ানা জারি করা হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে । এরপরই শুরু হয় যা দণ্ড বাস্তবায়নের প্রস্তুতি। সোমবার রাতেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতে পারে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে রিভিউ বিতর্ক, জেলকোড কার্যকর নিয়ে বিতর্ক অবসানের পূর্বেই মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে মর্মে ঘোষনা দেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়নের যাবতীয় প্রস্ততি সম্পন্ন করে জেল কর্তৃপক্ষ। কাদের মোল্লার আত্মীয় স্বজনকে শেষ সাক্ষাতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাত আটটায় ডেকে পাঠানো হয়। তারাও শেষ সাক্ষাত করে রাতে বের হয়ে আসেন জেলগেট থেকে। ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে সমগ্র ঢাকাসহ জেলখানার আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়। সন্ধ্যা থেকে দেশের এবং বিদেশের বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ভিড় করতে থাকেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে। ওদিকে রাতেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে মর্মে খবর প্রকাশের পরপরই আসামী পক্ষের আইনজীবীরা ছুটে যান চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর বাসভবনে। মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আর মাত্র দেঘন্টা বাকি। এমন সময় চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ঘোষনা করেন ফাঁসি কার্যকর করা স্থগিত করা হল বুধবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত। এভাবেই দেশে এবং বিদেশে আলোচিত ও ঘটনাবহুল মামলাটি আরো একবার আলোচনার বিষয় আকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করল গোটা বিশ্বসম্প্রদায়ের।
শুনানী বিষয়ে এটর্নি জেনারেল ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর ব্রিফিং
রিভিউ আবেদন চলবে কি চলবেনা এ বিষয়ে শুনানী শেষে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার অফিসে বসে সাংবাদিকদের বলেন, এই রিভিউ আবেদন যে গ্রহণযোগ্য না আমি সেই ব্যপারে যুক্তি তুলে ধরে আদালতে আমার বক্তব্য রেখেছি। আমি বলেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে । এটাই ছিল প্রথম সংবিধান সংশোধনী। তাতে ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ সংযোজিত করে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যদি কোন আইন করা হয়, সেই আইন যদি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিকও হয় তবু সেটা বাতিল হবে না। আর ৪৭(ক)তে বলা আছে, যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের ক্ষেত্রে সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা প্রযোজ্য হবেনা। ৪৭(ক)(২) তে আছে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, দন্ডিত তারা কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করতে পারবে না। যেহেতু কাদের মোলা মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত হয়েছেন, সেজন্য তিনি যে প্রতিকারের জন্য সুপ্রিমকোর্টে যে রিভিউ করেছেন, সেটা সংবিধান অনুযায়ী পারেন না।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বার এসোসিয়েশন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে বলেন, সংবিধানের ৪৭ ধারাসহ যেসব ধারা এবং অনুচ্ছেদ এর কথা তিনি বলেছেন তার কোন একটিতেও সংবিধানের ১০৫ ধারায় প্রদত্ত রিভিউ অধিকার কেড়ে নেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনেও সংবিধানের এ রিভিউ অধিকার কেড়ে নেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনে কোথাও বলা নেই তিনি রিভিউ করতে পারবেননা। সংবিধান আসামীকে রিভিউ করার অধিকার দিয়েছে এটাই আমাদের দাবি।
কোর্ট রিপোটিং দায়িত্বের সাথে করতে হয়: প্রধান বিচারপতি
মঙ্গলবার রাতে প্রধান বিচারপতি ও এটর্নি জেনারেল এর মধ্যে বৈঠক বিষয়ে টিভি চ্যানেলে খবর প্রচার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন আদালতে বলেন, কোর্ট রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্বের সাথে রিপোর্ট করা উচিত। সঠিকভাবে না জেনে এ ধরনের সংবাদ দেয়া ঠিক নয় তা সে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক যে মিডিয়াই হোক না কেন। প্রধান বিচারপতি এসময় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এটর্নি জেনারেল রাত ১১টায় প্রধান বিচারপতির সাথে বৈঠক করেন? এটর্নি জেনারেল প্রধান বিচারপতিকে দরখাস্ত দিতে পারেন, সাবমিশন রাখতে পারেন। আর তাওতো হয়নি। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজ করলে সবার জন্য ভাল হয়।
আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ডাদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণ করা হবে কি হবেনা সে বিষয়ে শুনানী আগামীকাল বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রিভিউ বিষয়ে শুনানী শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ বহাল থাকবে। এ সময়ের মধ্যে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যাবেনা।
প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানী গ্রহণ শুরু করেন। শুনানী শেষে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত শুনানী মুলতবি করা হয়। শুনানীর সময় প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেন মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে আর নতুন করে কোন আদেশের দরকার নেই। বিষয়টি এখন কোর্টের বিবেচানধীন রয়েছে।
শুনানী শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, শুনানী শেষ না হওয়া পর্যন্ত আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কোন উপায় নেই।
শুনানী শেষে এ বিষয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাভাবিক ভাবেই শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রায় কার্যকর স্থগিত থাকবে। যখন কোন কিছু সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে এবং সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে আমি উপস্থিত থাকি, সেেেত্র সরকার নিজে থেকে তো অন্য কোন ধরণের পদপে নেয় না।
মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানীর শুরুতে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতের কাছে আবেদন করেন মৃত্যৃদন্ড কার্যকর বিষয়ে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন যে স্থগিত আদেশ দিয়েছেন তা বর্ধিত করা হোক। আর রিভিউ বিষয়ে শুনানীর জন্য পরবর্তীতে একটা তারিখ ধার্য্য করা হোক। রিভিউ বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিষয়টি স্থগিত করার আবেদন করেন।
এসময় তিনি মঙ্গলবার রাত ১২টার পর আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা তুলে ধরেন। এরপর তারা কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে চেম্বার বিচারপতির কাছে যান স্টে অর্ডার এবং রিভিউ আবেদন নিয়ে যান সে বিষয়ে বলেন।
আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ এবং রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানী উপলক্ষে সকাল থেকে সুপ্রীম কোর্টে ভিড় করতে থাকেন বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক এবং আইনজীবী। শুনানী শুরু হবার আগেই প্রধান বিচারপতির সুবিশাল এজলাস কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। স্থানাভাবে অনেক আইনজীবী আদালত কক্ষের বাইরে দাড়িয়ে থাকেন। একটায় শুনানী বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি হওয়ার পর আসামী পক্ষের আইনজীবীদের ঘিরে ধরেন বিপুল সংখ্যক ফটো সাংবাদিক এবং টিভি ক্যামেরাম্যান। তাদের ভিড় সামলে সামনে এগুতে রীতিমত কসরত করতে হয় আইনজীবীদের। আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ভবনে প্রবেশের সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী সরকার বিরোধী স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন আদালত অঙ্গন।
সকাল নয়টার সামান্য পরেই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ বসে। এসময় এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্থগিতাদেশ বিষয়ে বলেন তিনি এ সম্পর্কে কিছু জানতেননা। তাকে জানানো হয়নি। এছাড়া চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন কর্তৃক কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর স্থগিত আদেশ প্রদানের পর রাতে প্রধান বিচারপতির সাথে এটর্নি জেনারেল এর বৈঠক বিষয়ে কোন কোন টিভিতে খবর প্রচার বিষয়ে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেন এটর্নি জেনারেল । তিনি এ ধরনের কোন বৈঠকের বিষয়ে অস্বীকার করেন। প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেনও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এরপর কিছুক্ষনের জন্য বিরতিতে যায় কোর্ট।
৯.৫৫ মিনিটে পুনরায় কোর্ট বসার আগেই আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন।
রিভিউ আবেদন শুনানী :
৯.৫৫ মিনিটে পুনরায় কোর্ট বসার পর প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর উদ্দেশে বলেন আপনি কি রিভিউ আবেদনের কপি পেয়েছেন? এটর্নি জেনারেল বলেন, না। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি তখন প্রধান বিচারপতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, গতকাল আমরা তাকে পাইনি। আজ সকালে সেকশনে জমা দিয়েছি।
এরপর প্রধান বিচারপতি এটর্নি জেনারেলকে বলেন রিভিউ আবেদন বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? এটর্নি জেনারেল প্রথমে বলেন দণ্ড কার্যকর স্টে অর্ডার এর সময় বাড়ানো উচিত হবেনা। আর রিভিউ আবেদনে বিষয়ে এটর্নি জেনারেল বলেন, আমার সিরিয়াস অবজেকশন আছে। এটা অবশ্যই চলতে পারেনা। তিনি ট্রাইব্যুনাল আইন এবং সংবিধান এর বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে যুক্তি পেশ করে বলেন রিভিউ আবেদন করা এবং গ্রহনের কোন সুযোগ নেই।
এসময় তিনি বলেন, সংবিধানে ৪৭ (৩) ধারায় বলা হয়েছে “ এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবাতা বিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া গণ্য হইবেনা কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনী হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবেনা।”
৪৭ ক (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “এই সংবিধানে যাহা বলা হাইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবেনা।”
এটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানে এটা স্পস্ট যে, আইসিটিতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুপ্রীম কোর্টের কাছে কোন প্রতিকার চাইতে পারবেননা। ট্রাইব্যুনাল আইনেও রিভিউ বিষয়ে কিছু বলা নেই।
রিভিউ আবেদন বিষয়ে শুনানীর সময় আদালত থেকেই প্রশ্ন করা হয় এ আবেদন চলতে পারে কিনা।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানী পেশ করার পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান বিচারপতি শুনানী পেশ করার জন্য বললে তিনি সময় প্রার্থনা করে বলেন, আমাদের কোন প্রস্তুতি নেই। সময় দরকার।
এরপর প্রধান বিচারপতি বেশ কয়েকবার অনুরোধ করে বলেন, শুরু করেন তারপর দেখা যাবে। আগে শুরু করেন। এরপর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আসামীর রিভিউ আবেদন করার অধিকারের পক্ষে যুক্তি পেশ শুরু করেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক রিভিউ আবেদনের পক্ষে প্রথমে সংবিধানের ১০৫ ধারা পড়ে শোনান : এতে বলা হয়েছে ‘সংসদের যেকোন আইনের বিধানাবলীর-সাপেক্ষে এবং আপিল বিভাগ কর্তৃক যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপিল বিভাগের ঘোষিত কোন রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে।’
এরপর সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান তিনি। এখানে বলা হয়েছে ‘এই ভাগের বিধানাবলীর সহিত অসামাঞ্জস্য সকল প্রচলিত আইন যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ , এই সংবিধান প্রবর্তন হইতে সেই সকল আইনের ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (১) । রাষ্ট্র এই ভাগের কোন বিধানের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কোন আইন প্রনয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোন বিধানের সহিত যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হাইয়া যাইবে (২)।’
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রিভিউ করার বিষয়টি আপিল বিভাগের সহজাত ক্ষমতা। কোন আইনের বলে সংবিধানে প্রদত্ত এবং আপিল বিভাগের সহজাত ক্ষমতা কেড়ে নেয়া যাবেনা।
একটা পর্যন্ত চলা শুনানীর সময় মাঝখানে একঘন্টার বিরতি দেয়া হয় ।
আব্দুল কাদের মোল্লার আবেদন শুনানীর জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এইএচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ।
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের পর গত ৫ ডিসেম্বর ৭৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। আট তারিখ তার বিরুদ্ধে মৃত্য পরোয়ানা জারি করা হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে । এরপরই শুরু হয় যা দণ্ড বাস্তবায়নের প্রস্তুতি। সোমবার রাতেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতে পারে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে রিভিউ বিতর্ক, জেলকোড কার্যকর নিয়ে বিতর্ক অবসানের পূর্বেই মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে মর্মে ঘোষনা দেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। মৃত্যুদন্ড বাস্তবায়নের যাবতীয় প্রস্ততি সম্পন্ন করে জেল কর্তৃপক্ষ। কাদের মোল্লার আত্মীয় স্বজনকে শেষ সাক্ষাতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাত আটটায় ডেকে পাঠানো হয়। তারাও শেষ সাক্ষাত করে রাতে বের হয়ে আসেন জেলগেট থেকে। ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষে সমগ্র ঢাকাসহ জেলখানার আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়। সন্ধ্যা থেকে দেশের এবং বিদেশের বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ভিড় করতে থাকেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে। ওদিকে রাতেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে মর্মে খবর প্রকাশের পরপরই আসামী পক্ষের আইনজীবীরা ছুটে যান চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর বাসভবনে। মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আর মাত্র দেঘন্টা বাকি। এমন সময় চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ঘোষনা করেন ফাঁসি কার্যকর করা স্থগিত করা হল বুধবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত। এভাবেই দেশে এবং বিদেশে আলোচিত ও ঘটনাবহুল মামলাটি আরো একবার আলোচনার বিষয় আকারে দৃষ্টি আকর্ষণ করল গোটা বিশ্বসম্প্রদায়ের।
শুনানী বিষয়ে এটর্নি জেনারেল ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর ব্রিফিং
রিভিউ আবেদন চলবে কি চলবেনা এ বিষয়ে শুনানী শেষে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার অফিসে বসে সাংবাদিকদের বলেন, এই রিভিউ আবেদন যে গ্রহণযোগ্য না আমি সেই ব্যপারে যুক্তি তুলে ধরে আদালতে আমার বক্তব্য রেখেছি। আমি বলেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে । এটাই ছিল প্রথম সংবিধান সংশোধনী। তাতে ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ সংযোজিত করে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যদি কোন আইন করা হয়, সেই আইন যদি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিকও হয় তবু সেটা বাতিল হবে না। আর ৪৭(ক)তে বলা আছে, যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের ক্ষেত্রে সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা প্রযোজ্য হবেনা। ৪৭(ক)(২) তে আছে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, দন্ডিত তারা কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করতে পারবে না। যেহেতু কাদের মোলা মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত হয়েছেন, সেজন্য তিনি যে প্রতিকারের জন্য সুপ্রিমকোর্টে যে রিভিউ করেছেন, সেটা সংবিধান অনুযায়ী পারেন না।
আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বার এসোসিয়েশন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে বলেন, সংবিধানের ৪৭ ধারাসহ যেসব ধারা এবং অনুচ্ছেদ এর কথা তিনি বলেছেন তার কোন একটিতেও সংবিধানের ১০৫ ধারায় প্রদত্ত রিভিউ অধিকার কেড়ে নেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনেও সংবিধানের এ রিভিউ অধিকার কেড়ে নেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনে কোথাও বলা নেই তিনি রিভিউ করতে পারবেননা। সংবিধান আসামীকে রিভিউ করার অধিকার দিয়েছে এটাই আমাদের দাবি।
কোর্ট রিপোটিং দায়িত্বের সাথে করতে হয়: প্রধান বিচারপতি
মঙ্গলবার রাতে প্রধান বিচারপতি ও এটর্নি জেনারেল এর মধ্যে বৈঠক বিষয়ে টিভি চ্যানেলে খবর প্রচার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন আদালতে বলেন, কোর্ট রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্বের সাথে রিপোর্ট করা উচিত। সঠিকভাবে না জেনে এ ধরনের সংবাদ দেয়া ঠিক নয় তা সে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক যে মিডিয়াই হোক না কেন। প্রধান বিচারপতি এসময় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এটর্নি জেনারেল রাত ১১টায় প্রধান বিচারপতির সাথে বৈঠক করেন? এটর্নি জেনারেল প্রধান বিচারপতিকে দরখাস্ত দিতে পারেন, সাবমিশন রাখতে পারেন। আর তাওতো হয়নি। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজ করলে সবার জন্য ভাল হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন