Pages

বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

মাওলানা সাঈদী ১৯৬৯ থেকে যশোরে আমাদের বাসার পাশে থাকতেন

মেহেদী হাসান, ১০/১০/২০১২, বুধবার
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে  আজ বুধবার ১২ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।  যশোরের এ সাক্ষীর নাম হাফিজুল হক। সাক্ষী বলেন, আমরা ১৯৬৬ সাল থেকে যশোরের নিউটাউনে থাকতাম। আমাদের বাসার পাশে একটি বাসায় ১৯৬৯ সাল থেকে ভাড়া থাকতেন মাওলানা  সাঈদী। এরপর ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের যুদ্ধ শুরু হলে মাওলানা সাঈদীসহ আমরা পাশাপাশি চারটি পরিবার একত্র হয়ে  ৪ এপ্রিল  গ্রামের দিকে চলে যাই।  এর কিছুদিন পর মাওলানা সাঈদী  যশোরের মহীরনে তার এক পীর সাহেবের বাড়িতে যান।

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যে অভিযোগ তাতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের  ৮ মে পাড়েরহাটে যখন পাকিস্তান আর্মি আসে তখন  অন্যান্য রাজাকারদের সাথে মাওলানা সাঈদী তাদেরকে স্বাগত জানান পাড়েরহাট রিক্সাস্ট্যান্ডে। এরপর ওই দিনই পাড়েরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান আর্মি,  মাওলানা সাঈদীসহ অন্যান্য রাজাকার এবং শান্তিকমিটির নেতৃবৃন্দ লুটপাট, হত্যা, অগ্নিসংযোগে অংশ নেন। এছাড়া  ৮ মে পাড়েরহাটে পাকিস্তান আর্মি আসার আগে সেখানে শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী  গঠনের বিষয়ে মাওলানা সাঈদী ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষী এ  মর্মে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে   গতকালের সাক্ষীসহ আরো কয়েকজন যশোরের সাক্ষী মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, মাওলানা সাঈদী যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই যশোরে থাকতেন স্বপরিবারে এবং    এপ্রিল, মে মাস থেকে শুরু করে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যশোরেই  ছিলেন।

জবানবন্দী :
আমার নাম মোঃ হাফিজুল হক । বয়স-৫২ বছর । গ্রাম- খড়কী, বামনপাড়া রোড, থানা-কোতয়ালী, জেলা-যশোর। আমি মুদি মালের ব্যবসা করি। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ১১ বছর এবং আমি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম ১৯৬৬ সালে যশোর নিউ টাউনে এ ব্লকের ১৮৪ নম্বর বাসা একজন এ্যালটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা ঐ বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৮ সালে আমার বাসার পশ্চিম পাশে ১৮৫ নম্বর বাসা মৃত হযরত আলী সাহেব এক এলোটির কাছ থেকে ক্রয় করেন। তারপর আমরা দুই পরিবার পাশাপাশি বসবাস করতে থাকি। ১৯৬৯ সালে আমার বাসার পূর্বদিকে প্রিন্সিপাল আনোয়ার সাহেবের ১৮৩ নম্বর বাসায় মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন।  ঐ একই সময়ে প্রফেসর আনোয়ার সাহেবের ১৮২ নম্বর বাসায় মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করতে থাকেন। আমার পিতা মাস্টার  মোঃ শহিদুল ইসলাম শেখহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মরহুম হযরত আলী মিয়া যশোর এস.পি অফিসের হেড কার্ক ছিলেন। মাওঃ
আবুল খায়ের সাহেব আমার পিতার স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। মাওঃ দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিল করতেন।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ  ভয়াল রাতে  যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে যশোর শহরের উপর গোলাগুলি চলতে থাকে।  পরবর্তী ২/৩ দিন ও একই ভাবে গোলাগুলি চলতে থাকে। এমতাবস্থায় শহরের লোকজন গ্রামের দিকে আশ্রয় নিতে থাকে। আমার পিতা, হযরত আলী চাচা, আবুল খায়ের চাচা এবং সাঈদী চাচা সম্মিলিতভাবে এক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার।
পরবর্তী ৪ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে শেখহাটি চলে যাই। ওখানে আমার পিতার স্কুলের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মরহুম জয়নুল আবেদীন সাহেবের বাসায় রাত্রি যাপন করি। পরের দিন সকালে চাচা আবুল খায়ের সাহেবের মামার বাড়িতে ধান কাটাঘাটা নামক স্থানে চলে যাই। ওখানে আমরা ৭/৮ দিন থাকি। অনেকগুলি পরিবার এক জায়গায় থাকায় আবার ৪ জন মুরব্বিরা মিলে  সিদ্ধান্ত  নেন অন্যত্র চলে যাওয়ার। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব বলেন যে, তিনি বাঘার পাড়ায় মহিরণের পীর সাহেবের বাড়ি যাবেন। আমার পিতা এবং হয়রত আলী সাহেব একত্রে ইন্ডিয়া চলে যাবেন। পরবর্তী দিন সকালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব মহিরনের উদ্দেশ্যে চলে যান। তারপর হযরত আলী এবং আমরা ভারতের উদ্দেশ্যে চলে যাই এবং মাওলানা আবুল খায়ের সাহেব ঐ বাড়িতেই থেকে যান।

জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন