Pages

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ২৪ জুন সাক্ষ্য গ্রহন শুরু // কোরআন হাদিস না দেয়ায় ক্ষোভ ট্রাইব্যুনালের

মেহেদী হাসান, ১০/৬/২০১২
জামায়াতে ইসলামের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আগামী ২৪ জুন সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। আজ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে ১৪২ পৃষ্ঠার সূচনা বক্তব্য পাঠ শেষ করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল সাক্ষী হাজির এবং সাক্ষ্য গ্রহনের তারিখ নির্ধারন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী (চিফ প্রসিকিউটর) গোলাম আরিফ টিপু সকালে সূচনা বক্তব্য পাঠ শুরু করেন। এরপর আরো কয়েকজন প্রসিকিউটর পালাক্রমে  সূচনা বক্তব্য পাঠ করে শোনান। প্রায়  সাড়ে চারটা বেজে যায় সূচনা বক্তব্য পাঠ  শেষ করতে।

গোলাম আযমকে কোরআন হাদিস না দেয়ায় তীব্র ক্ষোভ
সূচনা বক্তব্য পেশের আগে আজ  ট্রাইব্যুনালের একটি আদেশ অমান্য করাকে কেন্দ্র করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল।
অধ্যাপক গোলাম আযমকে প্রিজন সেলে পবিত্র কোরআনের তাফসীর, হাদীস গ্রন্থ এবং রসুলের (সা) এর জীবনী সরবরাহ করার আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।  ট্রাইবু্যুনাল এ বিষযে সর্বশেষ সময় বেঁধে দেয়া সত্ত্বেও বই সরবরাহ নিশ্চিত না করায়  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং  এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত  জেল কর্মকর্তাদের ওপর তীব্র ক্ষোভ এবং অসন্তোষ  প্রকাশ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।   ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করার দায়ে আজ  সোমবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেল কমকর্তাদের বিষয়ে আদেশ  দেবেন বলে জানিয়েছেন  ুব্ধ ট্রাইব্যুনাল।

গত ১৩ মে  অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।  অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ঐদিন তাকে প্রিজন সেলে কোরআন হাদীস এবং রসুলের জীবনী সরবরাহের নির্দেশ প্রদান  করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বুধবার অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে জানান  ঐদিন পর্যন্ত তাকে সে বই দেয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক সেদিন ক্ষোভ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুমের কাছে জানতে চান কেন এখনো বই সরবরাহ করা হয়নি। জেয়াদ আল মালুম তখন ট্রাইব্যুনালের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন জেল  কর্তৃপক্ষের ।  বই সরবরাহ বিষয়ে  জেল কর্তৃপক্ষ  চিঠি পাঠিয়েছিলেন জেলা মেজিস্ট্রেট এর কাছে যাচাই বাছাইয়ের জন্য। এ চিঠি দেখে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান আরো ক্ষেপে যান। তিনি  ক্ষোভের সাথে বলেন,  ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ এতদিন পর্যন্ত না মেনে তারা চিঠি পাঠায় জেলা মেজিস্ট্রেট এর কাছে? তাও এতদিন পর?  আমি দেখতে চাই আজকের মধ্যে গোলাম আযমকে বই দেয়া হয়েছে। যদি এ আদেশ মান্য করা না হয় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।   এরপর জেয়াদ আল মালুম বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত সময় চাইলে  ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।

আজ সকালে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের সামনে দাড়িয়ে বলেন,  গত বৃহষ্পতিবারও অধ্যাপক গোলাম আযমকে বই দেয়া হয়নি। তাজুল  ইসলাম বলেন,

এভাবে ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করা হলে ট্রাইব্যুনালের আদেশের কোন গুরুত্ব থাকবেনা। সাধারন মানুষের কাছে ট্রাইব্যুনালের গুরুত্ব হারাবে। 
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম  কিছু বলার  জন্য দাড়ালে ুব্ধ চেয়ারম্যান বলেন, আপনার কোন কথা শোনা হবেনা। আপনি বসেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন,  শুধু চিফ প্রসিকিউটর কথা বলবেন। তিনি চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জবাব চান কেন বই দেয়া হলনা।
তখন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এবং সৈয়দ হায়দার আলী  আইন এবং নিয়ম কানুনের কিছু সমস্যা তুলে ধরেন।

এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ক্ষোভের সাথে বলেন, বারবার এসব অজুহাত চলবেনা। ১৩ মে আদেশ দেয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত তা কেন মানা হলনা? ২৩ দিন পর জেল কর্তৃপক্ষের চিঠি এনে দেখাবেন। তারপর আবার কয়দিন পর আরেকটা  অজুহাত দেখাবেন । এরপর বলবেন, বাজারে এসব   বই পাওয়া যায়না।  যখন আদেশ পাশ করা হল তখন কেন এসব সমস্যার কথা বলেননি?

এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম তখন রাষ্ট্রপক্ষের কোন কোন আইনজীবীর প্রতি অভিযোগ করে বলেন, ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ইচ্ছা করেই তারা এটি করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। 
তাজুল ইসলাম বলেন, একের পর এক  কোর্টের আদেশ অমান্য করার মাধ্যমে এটাকে একটি প্রহসন এবং কৌতুকে পরিণত করা হয়েছে (হ্যাস টার্নড ইনটু এ ফার্স এন্ড জোক)। এটা  আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোর্ট! (দিস ইজ এ কোর্ট অব ল’ !)
এরপর ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, কাল যথাযথ আদেশ পাশ করা হবে। আমি চাইছিলাম বিষয়টা আজ এখানেই শেষ হয়ে যাক। একটু পরে একটা ভাল মামালা (গোলাম  আযমের কেস) আছে। সেটা আমরা শুনতে চাই।

ভাল মামলা আছে মন্তব্য বিষয়ে এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, এভাবে বলার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক  গোলাম আযমের মামলার প্রতি বিশেষ আগ্রহ  দেখালেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন