Pages

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

ট্রাইব্যুনালে আদেশ পাশ//সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরার সময় বেঁধে দেয়া হবে

মেহেদী হাসান,  ৬/৭/২০১২, শুক্রবার
সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরার জন্য  সময় নির্দিষ্ট করে  দেয়া হবে এখন থেকে। অর্থাৎ সাক্ষী কতক্ষন জবানবন্দী দেবেন এবং তাকে কতক্ষন  জেরা করতে পারবেন প্রতিপক্ষের আইনজীবী সে বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল সময় বেঁধে  দেবেন আগে থেকে।  এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল -১ গতকাল বৃহষ্পতিবার আদেশ পাশ করেছে।

আদেশে বলা হয়েছে এখন থেকে ভবিষ্যতে যেসব সাক্ষী কোর্টে সাক্ষ্য দিতে আসবেন তাদের জবানবন্দী এবং জেরায় সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। গত বৃহষ্পতিবারই সাক্ষী মুনতাসির মামুনের ক্ষেত্রে আদেশটি কার্যকর করা হয়েছে। সাক্ষী মুনতাসির মামুনকে  আসামী পক্ষ আর অর্ধদিবস জেরার সময় পাবেন বলে সময় বেঁধে দিয়েছেন কোর্ট । 

যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে  প্রণীত ১৯৭৩ (২০০৯ সালে সংশোধিত) সালের আইনের ১১ (৩) (এ) (বি) ধারা অনুযায়ী এ আদেশ পাশ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত   আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, বিচারপতি আনোয়রুল হক এবং বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ পাশ করলেন।

আদেশে ট্রাইব্যুনাল   বলেন, আইনের ১১ (৩) ধারা ট্রাইব্যুনালকে  ক্ষমতা দিয়েছে সময় ব্যবস্থাপনার এবং দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা বিষয়ে। আমরা  আইন মেনে চলতে বাধ্য। আইনের ঐ ধারায় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে অকারণ বিলম্ব পরিহার করে দ্রুত বিভিন্ন বিষয় নিষ্পত্তি করা বিষয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর সাক্ষী মুনতাসির মামুনের  জেরা করাকে কেন্দ্র করে  ট্রাইব্যুনালে আদেশটি পাশ হয়।

সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরায় সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া বিষয়ে আদেশ পাশের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আদেশে বলা হয়েছে এ বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য বাইরে জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। (উই আর হেয়ারিং ক্রাইং পিপল আইটসাইড টু কমপ্লিট দি জাস্টিস।) সেজন্য বিচার প্রকৃয়া দ্রুত  এগিয়ে নেয়া দরকার।

আদেশটি পাশের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল আরো একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরেন । ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা মনে করি এভাবে যদি  দীর্ঘ সময় নিয়ে সাক্ষীর জেরা চলতে থাকে তাহলে সাক্ষীরা এখানে এসে সাক্ষ্য দিতে  আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তারা এখানে আসতে চাইবেননা। আমরা চাই সাক্ষীরা আসুক। সাক্ষ্য দিক। এটি দুই পক্ষের জন্যই প্রযোজ্য।
(আইনের ১১  (৩) (এ) ধারায় বলা হয়েছে  উত্থাপিত অভিযোগ সংক্রান্ত  বিভিন্ন ইস্যু  দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করবে ট্রাইব্যুনাল। (বি) অনর্থক বিলম্ব সৃষ্টি করে এমন সব বাঁধা দূরীকরনে পদক্ষেপ নিবে। )


সময় নির্দিষ্টকরন বিষয়ে আদেশে  ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামী পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে জনাব মুনতাসির  মামুনকে আরো  কিছু সময় জেরা করার অনুমতি  দিতে আমরা ইচ্ছুক।  সে কারনে মুনতাসির মামুনের জেরা আজকের মত মুলতবি করা হল  এবং তাকে জেরার জন্য আমরা সময়  নির্দিষ্ট করে দিতে চাই।
আমরা আজ এখন থেকে সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরার সময়  নির্দিষ্ট করে দেয়ার আদেশ পাশ করলাম।   এখন থেকে ভবিষ্যতে  প্রতি সাক্ষীর জবানবন্দী এবং জেরার সময় আমরা নির্দিষ্ট করে  দেব।

মুনতাসির মামুনের ক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই তাকে  আর  এক বেলা জেরা করার অনুমতি পাবেন আসামী পক্ষ।  জনাব মুনতাসির মামুন যেদিন  কোর্টে আসার  সময় বের করতে পারবেন সেদিন তিনি আসবেন এবং সেদিন তাকে জেরা করতে হবে।

ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, আমরা বারবার আসামী পক্ষকে বলেছি জনাব মুনতাসির মামুনকে জেরা দ্রুত শেষ করার জন্য। গত রোববার তার জবানবন্দী শেষে  তাকে একঘন্টা জেরা করা হয়। এরপর মঙ্গল, বুধ এবং বৃহষ্পতিবার পূর্ন ছয়টি সেশন তাকে জেরা করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী। জনাব মুনতাসির মামুন  ইতিহাসের এজন গবেষক । তিনি  অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি এবং ব্যস্ত মানুষ।  দেশে এবং দেশের বাইরে তার কাজ  রয়েছে।  তবে   এসব আমরা বিবেচনা করছিনা। 

আদেশে ট্রাইব্যুনাল আরো উল্লেখ করেন গত বুধবার থেকে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের  আমরা বলে আসছি  তাকে  যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জেরা শেষ করেন।  আজ শুরুতেই  বলেছি আজ  জেরা শেষ করতে হবে। বারবার তাদের (আসামী পক্ষ) স্মরন করিয়ে দিয়েছি বিষয়টি। কিন্তু তারা আরো সময় চাচ্ছেন। আমরা মনে করি আসামী পক্ষ পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন তাকে জেরা করার জন্য। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমাদের ধারণা সাক্ষীরা সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসবেননা।


তাজুল ইসলামের প্রতিকৃয়া:
আদেশ পাশের বিষয়ে  আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বাইরের লোক কি চাইল বা না চাইল সেদিকে তাকানো ট্রাইব্যুনালের উচিত নয় এবং সেদিকে লক্ষ্য করে বিচার দ্রুত এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াও ঠিক নয়। বাইরের  লোকের দিকে তাকিয়ে ওনাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। বাইরের লোক কি চাইল বা না চাইল তা দেখার দায়িত্বও  তাদের নয়। তাদের চাওয়ার দিকে তাকিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ন্যায় বিচারের পরিপন্থী হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, শুধু বাইরের কেন সারা দুনিয়ার  বড় বড় অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন যে আইনে বিচার হচ্ছে তা সংশোধন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে।  এ চাওয়ার কি হবে?
তাজুল ইসলাম বলেন, আইনের ১১ ধারায় বলা  আছে ট্রাইব্যুনালে উত্থাপিত বিভিন্ন ইস্যু দ্রুত নিষ্পত্তি করা এবং অনর্থক বিলম্ব না করা বিষয়ে । কিন্তু আমরা এক মিনিটও বিলম্ব করিনি। সাক্ষী যেসব বিষয় উত্থাপন করেছেন, জবানবন্দী দিয়েছেন তার প্রতিটি বিষয়ে জেরা করার অধিকার আমাদের আছে। জেরা যতক্ষন পর্যন্ত নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, প্রসঙ্গের বাইরে না যাবে, অপ্রাসঙ্গিক না হবে ততক্ষন পর্যন্ত  জেরার করার অধিকার দিতে  হবে।

তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সাক্ষী (মুনতাসির মামুন) তার ইচ্ছামত লাগামহীন  বক্তব্য দিয়েছেন কোর্টে। এখন জেরার  সময় যখন তিনি দেখছেন তার তার বক্তব্য  জেরার মাধ্যমে ডিসক্রেডিট হচ্ছে তখন তিনি বারবার  তাকে দ্রুত ছেড়ে দেয়ার জন্য বলছেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী বারবার বলছেন অমুক সময়ের মধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। আজকের যে আদেশ দেয়া হল তার সাথে সরকারের মন্ত্রী এবং নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের সাযুজ্য রয়েছে।

আদেশ পাশের প্রেক্ষাপট:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মুনতাসির মামুনের জেরাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ পাশ করলেন।
গত ১ জুলাই রোববার মুনতাসির মামুন ট্রাইব্যুনালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  জবানবন্দী প্রদান করেন।  ঐদিন তার  একঘন্টার মত জেরা হয়। এরপর একদিন মুলতবি দিয়ে মঙ্গল বুধ এবং বৃহষ্পতিবার  পরপর তিনদিন তাকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।  জেরার সময়  প্রফেসর মুনতাসির মামুন তিনদিনে বারবার তাগিদ দেন তাকে দ্রুত ছেড়ে দেয়ার জন্য।  দীর্ঘ এবং বিস্তারিত জেরায় তিনি বারবার ক্ষোভ এবং উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বারবার বলেন আমি চুরি ডাকাতির মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসিনি। আমি কোন নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসিনি যে আমাকে এভাবে জেরা করা হবে। আমার পক্ষে আর এভাবে সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব হবেনা।  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুমও গত বৃহষ্পতিবার অভিযোগ করেন এভাবে জেরার মাধ্যমে সাক্ষীকে টরচার করা হচ্ছে।

গত বুধবার থেকে ট্রাইব্যুনালও আসামী পক্ষের আইনজীবীদের  তাগিত দিতে থাকেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার জেরা শেষ করতে।  গত বৃহষ্পতিবার ট্রাইব্যুনাল বলেন, যেভাবেই হোক আজকের মধ্যে জেরা অবশ্যই শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে আজ সময় বাড়িয়ে দিয়ে হলেও জেরা শেষ করতে হবে। তা না হলে  তারা আদেশ পাশ করতে বাধ্য হবেন। অবশেষে গত বৃহষ্পতিবার  কোর্টের সময় শেষ হয়ে আসায় ট্রাইব্যুনাল বারবার তাগিদ দিতে থাকেন মিজানুল ইসলামকে   ঐ দিনের মধ্যে জেরা শেষ করার জন্য।  মিজানুল ইসলাম বলেন, আজ শেষ করা সম্ভব হবেনা। সাক্ষীর যদি তাড়া থাকে তাহলে আজ ওনার জেরা মুলতবি করা হোক। অন্য সাক্ষী আনা হোক।  প্রফেসর মুনতাসির মামুনের জেরা  আমরা প্রয়োজনে পরে করব।

এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক চলে ট্রাইব্যুনালে।   ট্রাইব্যুনাল মিজানুল ইসলামের কাছে জানতে চান আপনার আর কতক্ষন লাগবে জেরা শেষ করতে । মিজানুল ইসলাম বলেন, দুইদিন লাগবে তবে আমরা চেষ্টা করব একদিনের মধ্যে শেষ করতে।

বিতর্ক শেষ হলে  উভয় পক্ষের শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল জবানবন্দী এবং জেরায় সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে  আদেশ পাশ করেন।

বিচার দ্রুত করতে গিয়ে ন্যায় বিচারের অধিকার খর্ব করা যাবেনা:
গত বুধবার প্রফেসর মুনতাসির মামুনের জেরার এক পর্যায়ে বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, বাইরে মেসেজ যাচ্ছে আমরা খুব স্লো। আমরাও তাই মনি করি। সেজন্য দুই পক্ষকেই বলব শর্ট করার জন্য। আমরা টাইম ঠিক করে দেব। জবানবন্দী কতটুকু হবে, জেরা কতটুকু হবে, তা ঠিক করে দেব।  সাধারনত জেরা হবে  জবানবন্দীর দ্বিগুন। তবে ব্যতিক্রম থাকতে পারে এবং থাকবে।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিতে যাওয়া মানে সময় নষ্ট হওয়া, হয়রানির শীকার হওয়া সেটি যেন তারা মনে না করে সেটি আমরা তাদের বোঝাতে চাই। কোন পক্ষের সাক্ষীই যেন মনে না করে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গেলে হয়রানির শীকার হতে হয়।

জেরার সময় বিচারপতি নিজামুল হক বলেন আজ বুধবার শেষ করতে  পারবেন কিনা। তখন আসামী পক্ষ আপত্তি জানালে নিজামুল হক  হাসি দিয়ে বলেন, আগামী কাল হাফ এন আওয়ারে শেষ করবেন।

পরদিন গত বৃহষ্পতিবার জেরার শুরুতেই বিচারপতি নিজামুল হক  বলেন মি. মিজান সাহেব। একটু তাড়াতাড়ি। দুপুরের বিরতির পর তিনি বলেন, ৩টা ৪৫ মিনিটে শেষ করতে হবে জেরা। তিনটা ৪৫ মিনিট বাজার সাথে সাথে সাক্ষী মুনতাসির মামুন বলেন, মাই লর্ড তিনটা ৪৫ মিনিট বেজে গেছে।  আপনি বলেছেন আমাকে আজ ছেড়ে দেবেন । আমি জানি হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়েনা।

এরপর ট্রাইব্যুনাল  চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক   আসামী পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা বারবার বলেছি  মামুন সাহেবকে আজ ছেড়ে দেব। গতকাল থেকে বারবার আমরা একটা কথা বলার চেষ্টা করেছি আজো বারবার বলেছি    আজকের মধ্যে ওনার জেরা শেষ করব। আমরা অনুরোধ করছি আজ শেষ করেন। আজ প্রয়োজনে আমরা সময় বাড়িয়ে দেব। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। তাহলে আর আদেশ পাশ করতে হবেনা। তা না হলে আদেশ পাশ করতে বাধ্য হব।

আসামী পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এ পর্যায়ে শুনানীতে অংশ নিয়ে বলেন, এই মামলায় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যত বড় অভিযোগ তা আর কারো বিরুদ্ধে নেই। তার বিরুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা, চার লাখ মা বোনের ইজ্জত হরন,   লাখ লাখ ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশান্তর এবং  হাজার হাজার মানুষ জোর করে ধর্মান্তরকরনে সহযোগিতার অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপ্তি শুধুমাত্র বাংলাদেশের ৫৫ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং ভারতের শরনার্থী শিবির থেকে শুরু করে পাকিস্তান পর্যন্ত লক্ষ্য মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। কারণ পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের বিষয়ও অভিযোগের মধ্যে আনা হয়েছে। 

আপনারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন  যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে সেভাবে উনি উত্তর দেননি। প্রশ্নকর্তার আশা থাকে যেভাবে প্রশ্ন করা হয় সেভাবে উত্তর আসবে। তা নাহলে জেরার উদ্দেশ্য সফল হয়না। উনি যদি সরাসরি উত্তর দিতেন তাহলে ভিন্ন বিষয়ের অবতারনা হতনা এবং  সে বিষয়ে বাড়তি প্রশ্নও আসতনা।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আপনারা সময়ের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। সময় নষ্ট হয় কিনা তা অবশ্যই দেখবেন।  কিন্তু মুল বিষয় হল ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। দ্রত বিচার করতে গিয়ে ন্যায় বিচার পাবার অধিকার  যেন খর্ব না হয় সেটি  বিবেচনা করতে হবে।


মিজানুল ইসলাম বলেন, যতক্ষন পর্যন্ত আমরা ইস্যুর মধ্যে থাকি ততক্ষন পর্যন্ত ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাকে আমাদের জেরা করতে দেয়া উচিত এবং এটি আমার অধিকার।
মিজানুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে  গ্রেফতার   করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর ইয়াহিয়া খানকে এক বৃটিশ সাংবাদিক  প্রশ্ন করেন বিচার ছাড়াই তার ফাঁসি দেবেন? তখন ইয়াহিয়া   খান বলেছিলেন ফাঁসি হবে তবে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালের কাছে অনুরোধ করেন বৃহষ্পতিবার   জেরা শেষ করার জন্য।

এটা কি ন্যায় বিচার হল:
গতকাল জেরা শেষ না করে আরো এক বেলা জেরার অনুমতি দেয়ায় প্রফেসর মুনতাসির মামুন বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, যার বিচার হচ্ছে তাকে এখানে এনে এক ঘন্টা পরে  আবার পাঠিয়ে দেয়া   হচ্ছে। আর আমাকে এভাবে দীর্ঘ সময় এখানে  রাখা হচ্ছে। এটা কি ন্যায় বিচার হল?  আপনি সবার  প্রতি সুবিচার করেছেন। কিন্তু আমি ন্যায় বিচার পাইনি।

রাজাকার  পরিচালককে ১৯৭৩ সরকার সচিব করেছিল?
মিজানুল ইসলাম জেরার সময় মুনতাসির মামুনকে প্রশ্ন করেন  ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী বিধিবদ্ধ   হওয়ার পর এর প্রথম ডিরেক্টর করা হয়  আব্দুর  রহমান শেখকে । তাকে ৭৩ সালে সরকার সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়। এটি আপনার জানা আছে কি-না।  মুনতাসির মামুন জানা নেই বলে জবাব দেন।

জেরায় মিজানুল  ইসলামকে সহযোগিতা করেন অ্যডভোকেট মনজুর আহমেদ আনছারি। অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ মিঠু, ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক, আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ।

মীর কাসেম আলীকে সেফ হোমে  জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন:
দিগন্ত মিডিয়া করপোরশেনের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে সেফ হোমে নিয়ে   তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানানো হয়েছে। ।  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা গত বৃহষ্পতিবার এ আবেদন জানান  ট্রাইব্যুনালে।  একই সাথে তার আটকাদেশের মেয়াদ বাড়ানোরও আবেদন করা হয়েছে।  বৃহষ্পতিবার  তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের।  এ উপলক্ষে তাকে সকালে  ট্রাইব্যুনালে আনা হলেও কোর্টে ওঠানো হয়নি ।   মীর কাসেম   আলীর বিরুদ্ধে আবেদনের শুনানী আগামী রোববার নির্ধারন করা হয়েছে। । এদিন তাকে আবার কোর্টে হাজির করার  কথা রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন