Pages

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানী শুরু// জামিন আবেদনের আদেশ ২৩ ফেব্রুয়ারি

মেহেদী হাসান, ১৫/২/১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানী আজ শুরু হয়েছে। 

অন্যদিকে গোলাম আযমের  জামিনের জন্য দায়ের করা দ্বিতীয় দফা আবেদনের  আদেশ দেয়া হবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি।  সকালে জামিন আবেদনের ওপর শুনানী শেষে ট্রাইব্যুনাল এ তারিখ ধার্য্য করেন। গত ১১ জানুয়ারি তার প্রথম জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে ঐদিন তাকে কারাগারে পাঠানোর নিদের্শ দেন আদালত।

সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে অধ্যাপক গোলাম আযমের বিষয়ে ৬টি আবেদন  শুনানীর জন্য পেশ করেন তার আইনজীবীরা। এর মধ্যে  উল্লেখযোগ্য হল জামিন আবেদন, মামলা মুলতবি করা  এবং  অধ্যাপক গোলাম  আযমের বিরুদ্ধে  প্রাথমিক অভিযোগপত্র চেয়ে করা আবেদন।  এছাড়া প্রসিকিউশন থেকে আসামী পক্ষে সরবরাহকৃত ডকুমেন্টের  অস্পষ্ট কপি, সিডি এবং  আরো কিছু ডকুমন্টে না থাকা বিষয়ে আবেদন সকালে আদালতের কার্যক্রমের  শুরুতে নিষ্পত্তি করা হয়। মামলা মুলতবী বিষয়ক আবেদন অনিষ্পন্ন রাখা হয়েছে। চার্জ শুনানী শেষ হলে মুলতবির আশ্বাস  দিয়েছেন  ট্রাইব্যুনাল।

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামিন আবেদনের ওপর শুনানীনে অংশ নিয়ে বলেন,   তার বয়স প্রায় ৯০ বছর। যতদিন তিনি জীবিত থাকবেন ততদিন তাকে পরিবারের সাথে থাকতে দেয়া হোক। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তার  যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছেনা। এ বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকেও বারবার অভিযোগ করা হয়েছে।  গোলাম আযমের অসুস্থতা  এবং চিকিৎসায় অবহেলা বিষয়ে তার স্ত্রী আফিফা আযমের বরাত দিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক নয়া দিগন্ত  এবং দৈনি সংগ্রামে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন তিনি আদালতে পেশ করেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইতোমধ্যে তিনি বাৎরুমে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন জামিন বিষয়ে আদালত যে শর্ত দেবে তার সবই  তারা মেনে চলতে রাজি আছেন।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গোলাম আযমের জামিন আবেদনের পক্ষে ১৯৯২ সালের নাগরিকত্ব মামলার রায়ের আপিল বিভাবের পর্যবেক্ষন তুলে ধরেন আদালতে তিনি বলেন, ঐ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষনে বলা হয়েছে ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেসব বর্বরতার অভিযোগ রয়েছে, তা সংঘটনের সাথে অধ্যাপক গোলাম আযম কোনোভাবে সরাসরি জড়িত ছিলেন, এমন কোনো কিছু আমরা পাইনি।’..... ‘পাকিস্তানি আর্মি এবং তাদের সহযোগী বাহিনী রাজাকার, আলবদর কিংবা আলশামসের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যেসব বর্বরতার অভিযোগ রয়েছে, তার একটির সাথেও অধ্যাপক গোলাম আযমের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।’

আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি এটিএম আফজাল, বিচারপতি মুস্তাফা কামাল ও বিচারপতি লতিফুর রহমান ঐ রায় দিয়েছিলেন। এরা সকলেই পরে প্রধান বিচারপতি হন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে  যেসব বর্বরতার অভিযোগ আনা হয়েছে তার একটির সাথেও তিনি জড়িত নন।

ট্রাইব্যুনাল এসময় ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চান গোলাম আযমের অবস্থা খারাপ  এ মর্মে আদালতে কোন  দরখাস্ত  দায়ের করা হয়েছে কি-না ইতোমধ্যে। তখন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কারাগারের পাঠানোর পর থেকে  আজ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। এতেই প্রমান হচ্ছে তিনি খুবই অসুস্থ। তাছাড়া হাসপাতালের ডাক্তারি রিপোর্ট পাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। তার স্ত্রী সন্তানেরা তার সাথে দেখা করেছেন কয়েকবার এবং তারা জানতে পেরেছেন তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সে বিষয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট এবং এ বিষয়ে বিবরন দিয়েছি জামিন আবেদনের দরখাস্তে।

শুনানী শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, গোলাম আযমকে প্রথম দিন যে অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে তার অবস্থা তার থেকেও অবনতি হয়েছে। তার নিয়মিত ফিজিও থেরাপী দেয়া দরকার। কিন্তু তা হচ্ছেনা।
আজ শুনানীর সময় অধ্যাপক গোলাম আযম  ক্ষীনকন্ঠে  কিছু একটা বলেন এবং  উঠে দাড়িয়ে আদালতের অনুমতি চান কিছু বলার জন্য।  এসময় আইনজীবী তাজুল ইসলাম তার কাছে যান। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আদালতকে বলেন, তিনি (গোলাম আযম)  আদালতে কিছু বলতে চান। আদালত বলেন, আপনার মাধ্যমেই  তো তিনি কথা বলছেন। আলাদা করে তার   কথা বলার দরকার হবেনা।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তার সমস্যার কথা বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে বলতে দেয়া হলনা। 

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আদালতে আরো উপস্থিত ছিলেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, ফরিদ উািদ্দন খান,  ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার এমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবির, শাহজাহান কবির, শিশির মনির প্রমুখ।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন