Pages

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৩

সিরাজ সিকদার বিষয়ে প্রশ্ন গ্রহণ করেননি ট্রাইব্যুনাল// গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষীর জেরা শেষ

মেহেদী হাসান, ৩১/৭/২০১২
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী মাহবুব উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) এর জেরা আজ শেষ হয়েছে। জেরার সময়  তাকে অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী প্রশ্ন করেন “আপনি এসপির দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের কাষ্টডিতে থাকা অবস্থায় সিরাজ সিকদার নিহত  হন।”
প্রশ্নটি করার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে প্রথমে আপত্তি তোলা হয় । এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন এ প্রশ্ন যাবেনা।
এরপর  অধ্যাপক  গোলাম আযমের আইনজীবী আবার তাকে  প্রশ্ন করেন “সিরাজ সিকদার হত্যা বিষয়ে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ”
তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ প্রশ্নও যাবেনা। অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম তখন বলেন, প্রশ্ন দুটি গ্রহণ করার জন্য আমরা লিখিত আবেদন জানাব।

অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম   সাংবাদিকদের বলেন, সিরাজ সিকদার নিহত হবার সময় সাক্ষী মাহবুব উদ্দিন আহমদ ঢাকা জেলার এসপি ছিলেন। সিরাজ সিকদার হত্যা মামলায় তিনি এক নম্বর আসামী। সাক্ষীকে ডিসক্রেডিট করার জন্য এ প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাইবু্যুনাল সে প্রশ্ন নেননি। আমরা লিখিত আবেদন জানাব প্রশ্নটি যাতে গ্রহণ করা হয় সেজন্য।

সাক্ষীকে জেরা করেন অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে আইনজীবী মিজানুল ইসলাম এবং মনজুর আহমদ আনসারী। তাদের সহায়তা করেন ব্যারিস্টার এমরান এ সিদ্দিক।

সাক্ষী মাহবুব উদ্দিন জেরায় প্রশ্নের জবাবে জানান তিনি যে সাতক্ষীরা অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্বে ছিলেন সে অঞ্চলের  কোন রাজাকার, আল বদর, আল শামস সদস্যকে চিনতেননা। এমনকি ওই অঞ্চলে এসব বাহিনীর প্রধান কারা ছিল তাও তিনি  জানেননা।  সাক্ষী জানান তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের ২৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার এসপি ছিলেন।
গত ১৫ জুলাই সাক্ষী মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম ট্রাইব্যুনালে (১) জবানবন্দী প্রদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ঝিনাইদহ মহকুমার সাবডিভিশনাল  পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) ছিলেন এবং  ঐ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন বলে জানান।  

জেরা (সংক্ষিপ্ত)
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মিরপুর অঞ্চল ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি শত্রুমুক্ত হয়। (এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে  ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তুললে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের   জানুয়ারি মাসে ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে   প্রতিরক্ষা   মন্ত্রনালয়ে যোগদান  করেন। সে কারনে এটি তার জানা থাকার কথা।)
উত্তর : মিরপুরে অনেক শত্রু থাকায় তাদের উৎখাত করে ৩১ জানুয়ারি সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।
প্রশ্ন : ২৫ মার্চের কতদিন আগে থেকে আপনি সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন?
উত্তর : ১৮ মার্চ ১৯৭১  তারিখ থেকে ঝিনাদহ আনসার মুজাহিদদের সাথে স্থানীয় যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করি।
প্রশ্ন : আনসার ও মুজাহিদ পুলিশের নিয়ন্ত্রনাধীন কোন সংস্থা নয়।
উত্তর : তবে সাধারনত তারা পুলিশের তত্ত্বাবধানে কাজ করে।
প্রশ্ন : ঝিনাইদহে আনসার বাহিনীর যিনি প্রধান ছিলেন তার সাথে ২৫ মার্চের আগে সাক্ষাৎ হয়েছিল?
উত্তর : দুয়েকবার হতে পারে।
প্রশ্ন : তিনি কি স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন?
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার সাথে দেখা হয়?
উত্তর : মনে করতে পারছিনা।
প্রশ্ন : ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইট ছিল  পুরোপুরি পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত ও পরিকল্পিত একটি আক্রমন  বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র জনগনের ওপর ।
উত্তর : সঠিক।
প্রশ্ন : পাকিস্তানের তৎকালীন সরকারের ওপর কোন রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রন, কর্তৃত্ব  ছিলনা।
উত্তর : তখনো ছিলনা এখনো নেই।
প্রশ্ন : পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক ও গভর্নর টিক্কা খান এবং পরবর্তীতে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার  এএকে নিয়াজি সরাসরি সামরিক শাসক এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হতেন।
উত্তর : এটা তাদের কমান্ডের ...
প্রশ্ন : পরবর্তীতে বেসামরিক গভর্নর মালেক সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন ছিলনা নিয়াজীর ওপর।
উত্তর : তারা ছিল শিখন্ডী সরকার। কে কাকে নিয়ন্ত্রন কারত  তা আমি জানিনা।
প্রশ্ন : নিয়াজি যখন  আত্মসমর্পন করেন তখন সেখানে বেসামরিক সরকারের কেউ ছিলনা।
উত্তর : ছিলনা।
প্রশ্ন : পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পনের সময় নিয়াজির সাথে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, সিভিল আর্মড ফোর্স, মুজাহিদ, রাজাকার, পশ্চিম পাকিস্তান পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা ছিল।
উত্তর : আমার জানা নেই। ইপিক্যাপ, সেনাবাহিনী এবং তাদের এলাইড ফোর্সের সদস্যরা ছিল। অন্যদের বিষয় জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনি কোন সময় ঢাকা জেলার এসপি ছিলেন?
উত্তর : ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
প্রশ্ন : পদাধিকার বলে ঢাকা জেলার এসবির দায়িত্বেও আপনি ছিলেন।
উত্তর : হ্যা।



প্রশ্ন : এই দায়িত্ব পালনকালে যুদ্ধকালীন সময়ে আপনার জেলার  পুলিশের পাক্ষিক রিপোর্ট আপনি  পর্যালোচনা করেননি।
উত্তর : আমার  দায়িত্বকালীন সময়ের বাইরে কোন রিপোর্ট দেখিনি।
প্রশ্ন : আপনার এলাকায় বিশেষ কোন মামলার অভিযোগ বা গুরুত্বপূর্ণ কোন অভিযোগ থাকলে সে রিপোর্ট আপনাকে  দেয়া হত। মামলার অভিযোগ দায়ের বা তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে আপনাকে অবহিত করত।
উত্তর :  সত্য।
প্রশ্ন : ঢাকা জেলায় আপনি এসপি দায়িত্ব পালনকালে আপনি অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগপত্র দায়ের করার কোন সুপারিশ করেননি।
 উত্তর : আমার কাছে কোন ফাইল আসেনি।
প্রশ্ন : প্রতি মাসে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বৈঠক হত। সেখানে এসপি বা তার একজন প্রতিনিধি থাকত। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ মামলার অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হত।
উত্তর :  তখন নিয়মিত বৈঠক হতনা। দালাল আইনের মামলার বিষয় সে বৈঠকে আসতনা কারণ তার জন্য ভিন্ন একটি কমিটি ছিল।
প্রশ্ন : যে কমিটিতে দালাল আইনের মামলা পর্যালোচনা করা হত সেখানে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি এবং এসপির একজন প্রতিনিধি থাকত।
উত্তর : আমি কোনদিন ওই মিটিংয়ে যাইনি। এসপির প্রতিনিধি বা থানার ওসি থাকত কি-না তা আমার মনে নেই।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালের ১৭ মে’র আগ পর্যন্ত  কোন রাজাকার গ্রেফতার করে আপনার সামনে হাজির করা হয়েছিল?
উত্তর : যুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করে হাজির করা হয়। তারখ মনে নেই।
প্রশ্ন : রাজাকার বাহিনী একটি সরকারি বেতনভুক্ত বাহিনী এবং তাদের নির্দিষ্ট পোশাক ছিল।
উত্তর : তা জানা নেই তবে আমার কাছে যাদের আনা হয়েছে তাদের দুয়েকজনের পরনে পোশাক দেখেছি।
প্রশ্ন : আপনি যে সাতক্ষীরা অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই অঞ্চলের আল বদর, রাজাকার, আল শামসের প্রধান কারা ছিলেন বলতে পারবেন?
উত্তর : স্মরন নেই। 
প্রশ্ন : ওই এলাকার কতজন রাজাকার, আল বদর, আল শাসস সদস্য চিনতেন আপনি?
উত্তর : একজনকেও না।
প্রশ্ন : হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র বইটি সম্পর্কে আপনার জানা আছে?
উত্তর : বইটির সবগুলো খন্ড আমি কিনেছি।
প্রশ্ন : এ বই সম্পাদনার পূর্বে হাসান হাফিজুর রহমান পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন  স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ঘটনা  যারা জানেন তা জানাতে এবং কারো কাছে কোন দলিলপত্র থাকলে তা জমা দিতে।
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : চুকনগর হত্যাকান্ড বিষয়ে আপনি কোন বক্তব্য  তাদের দিয়েছিলেন ?
উত্তর : কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি।
প্রশ্ন : অন্য কোন গবেষক তার গবেষনাকালে যোগাযোগ করেছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : জনাব মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, ডা. এমএ হাসানের সাধে আপনার ১৯৮০ সালের  আগে থেকে পরিচয় ছিল।
উত্তর : মুনতাসির মামুন এবং শাহরিয়ার কবিরের সাথে ৫/৭/১০ বছর যাবত আমার পরিচয় আছে । মাঝে মাঝে দেখা হয়। ডা. এম এ হাসানের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় নেই।

প্রশ্ন : স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গ্রেফতারকৃত মুসলিম লীগ নেতার বাসা থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। এ বিষয়ে জানা আছে?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোন অভিযোগ আনা হয়নি।
উত্তর : অভিযোগ আনার বিচার প্রকৃয়া তখন শুরু হয়নি।
প্রশ্ন : বিচারের কোন চেষ্টা তখন সরকার চালায়নি।
উত্তর : আমার জানা নেই। ’
প্রশ্ন : আপনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অসৎ উদ্দেশে এই মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন