Pages

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

স্কাইপ ডকুমেন্ট প্রমানের দায়িত্ব কার?

১৬/১/২০১২
ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগী চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন বিষয়ে  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়েছে যারা এটা হাজির করেছে তাদেরই প্রমান করতে এটা সত্য কি-না। যারা এটা ব্যবহার করতে চায় তাদের দায়িত্ব এটার সত্যতার ব্যাপারে প্রমান করা।   অপর দিকে আসামী পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এটা সত্য কি-না তার প্রমানের দায়িত্ব তাদের (আসামী পক্ষ) নয়; বরং যারা এটার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ  করছে, যারা এটা অস্বীকার করছে   তাদেরই প্রমান করতে হবে যে,  এটা সত্য নয়।

আজ আন্তর্জাতিক  অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ    পুনরায় বিচার শুরু করা বিষয়ক   রিভিউ আবেদনের শুনানীর সময় উভয় পক্ষের আইনজীবীরা পাল্টপাল্টি এ দাবি করেন।

বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারির জের ধরে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার আবার নতুন করে  শুরুর আবেদন করা হয়েছিল আসামী পক্ষ থেকে। আবেদনের পক্ষে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত স্কাইপ কথোপকথন জমা দেয়া হয় ডকুমেন্ট হিসেবে।  শুনানী শেষে গত ৩ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল   খারিজ করে দিয়েছেন  পুনরায় বিচারের আবেদন।  এরপর খারিজ আদেশ  পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে আসামী পক্ষ।  গতকাল এ আবেদনের ওপর  উভয় পক্ষের শুনানী শেষ হয়েছে। আগামী ২১ জানুয়ারি এ বিষয়ে আদেশের জন্য ধার্য্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

পুনরায় বিবেচনার (রিভিউ)  আবেদনের শুনানীর সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী গতকাল বলেন,  যারা স্কাইপ কথোপকথন এর ডকুমেন্ট এনেছে  তাদেরই প্রমান করতে হবে এটা সত্য কি-না। যারা এটা ব্যবহার করতে চান এটার সত্যাসত্যতা তাদেরই প্রমান করতে হবে। বিচারপতি নিজামুল হক স্কাইপে কথা বলেছেন  তা সত্য। তিনি তা স্বীকার করেছেন। কিন্তু যে স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশিত হয়েছে এটাই  যে সেকথা তার প্রমান কি? যে কথোপকথন প্রকাশিত হয়েছে এটা যে  সত্য তার প্রমান তাদেরই (আসামী পক্ষ) করতে হবে।

তিনি বলেন, সবকিছু মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় এটা একটা অনিরাপদ ডকুমেন্ট। এর কোন মূল্য নেই। তাই নতুন করে  বিচারের যে আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে  সে আদেশ পুনরায় বিবেচনার কোন সুযোগ নেই।

জবাবে আসামী পক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এটা  আমাদের প্রমান করতে হবে।  আমি বলতে চাই এটা প্রমানের দায়িত্ব আমাদের নয়। আমাদের দায়িত্ব ডকুমেন্ট হাজির করার। আমরা তা করেছি। যারা এটা অস্বীকার করছে  যারা এটাতে সন্দেহ করছে তাদের  প্রমান করতে হবে যে, এটা সত্য নয়।

তাজুল ইসলাম বলেন, আজ পর্যন্ত স্কাইপ কথোপকথন কেউ  অস্বীকার করেননি। কাজেই প্রতিষ্ঠিত এবং সত্য  ডকুমেন্ট   প্রমানের দরকার হয়না। যারা স্কাইপ কথোপকথন করেছেন তারা চ্যালেঞ্জ করুক যে এটা তাদের কথা নয়; তাদের নামে যে কথোপকথন প্রকাশিত হয়েছে সেসব কথা তারা বলেননি। তারা বলুক এ কণ্ঠস্বর তাদের নয়।  তারপর আমরা প্রমান করব তারা একথা বলেছেন কি বলেনসনাই। কিন্তু তারা তো কেউ অস্বীকার করেননি এবং চ্যালেঞ্জও করেননি প্রকাশিত কথোপকথন  বিষয়ে।

তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের দাবি এটা আনসেফ (অনিররাপদ) ডকুমেন্ট।  আমাদের  প্রশ্ন কেন আনসেফ হবে? কেউ কি বলেছেন বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে আমার দেশ পত্রিকায়? কেউ কি বলেছেন তারা যা বলেননি তাদের নামে তাই  ছাপা হয়েছে?  তাতো বলেননি কেউ। কাজেই আমরা যে  ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি তা যদি আনসেফ হয়  তাহলে রাষ্ট্রপক্ষ অধ্যাপক গোলাম আযমের  মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় যে পত্রপত্রিকার রিপোর্ট এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট জমা দিয়েছেন তা নিরাপদ হবে কি করে? তা কেন  আনসেফ নয়? ওগুলোওতো পত্রপত্রিকার রিপোর্ট।  আমরা পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট জমা দিয়েছে এবং তা আনসেফ হয়ে গেল  আর তারা যেসব পত্রিকার রিপোর্ট জমা দিয়েছে তা সেফ হয়ে যাবে  কোন যুক্তিতে?
তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি যদি এ ডকুমেন্ট নিয়ে কোন সন্দেহ থাকে তাহেল দক্ষ লোক এনে পরীক্ষা করা হোক। আমরা শুধু  আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত  রিপোর্টই জমা দেইনি বরং সিডিও জমা দিয়েছি। দক্ষ লোক এনে এসব পরীক্ষা করা  হোক সন্দেহ  থাকলে। প্রয়োজনে এর সত্যতা প্রমানের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক।

এরপর তাজুল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দিয়ে বলতে চাই কাউকে গোলাপ ফুল দেয়ার পর যদি সে বলে কিছুই বুঝিলামনা তাহা হইলে বলিতেই হইবে   ইহাতে বুঝিবার কিছুই নাই। ইহাতে শুধুই গন্ধ।

তাজুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আরেকজন আইনজীবী দাবি করেছেন যা কিছূ ঘটেছে তাতে নাকি বিচার কলুষিত হয়নি। বিচার কলুষিত হবার মত, নতুন করে বিচার শুরু করার মত তেমন  কিছুই নাকি ঘটেনি। আমাদের প্রশ্ন আর কতটা ঘটলে পরে বিচার কলুষিত হবে? কতটা পথ হাটলে পরে একজনকে  পথিক বলা যাবে?
তাজুল ইসলাম বলেন, পাঠান মুল্লূকে খুন খারাপি হলে তা  কোন আমলে নেয়া হয়না। কারণ ওটা ওখানে সাধারন ঘটনা। আমাদের দেশও পাঠান মুল্লুক হয়ে গেল যে এতবড় ঘটনার পরও বলা হচ্ছে কিছুই ঘটেনি?

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

শুনানীর সময় আসামী পক্ষে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী, ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন।

হরতালে সকালে চলেনি ট্রাইবু্যুনাল :

এদিকে আজ  সকালে হরতালের কারনে ট্রাইব্যুনাল-১ মুলতবি করা হয় বেল দুইটা পর্যন্ত। সকালে নির্ধারিত সময়ে ট্রাইব্যুনাল বসলে আসামী পক্ষের একজন মাত্র জুনি“ আইনজীবী হাজির ছিলেন।  রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন তিনজনের মত।  চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন হরতালের কারনে অন্যান্য প্রসিকিউটররা আসতে পারেননি। তখন দুইটা পর্যন্ত মুলতিব দিয়ে নেমে যান ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে রিভিউ আবেদনের শুনানীর পর মাওলানা সাঈদীর মামলায় পুনরায় যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন