Pages

রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও উচ্চারন করলেননা সাক্ষী////জেরা অস্বীকার আইনজীবীর


মেহেদী হাসান, ১৬/৯/২০১২
আজ   সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিলেন অরুনাাংশু বিমল  চৌধুরী। তিনি তার  সাক্ষ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি । এমনকি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামও উচ্চারন করেননি। তার জবানবন্দী শেষ হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, আমি স্বাক্ষীকে জেরা করবনা (ক্রস ইক্সামিনেশন ডিকলাইন্ড)।

জবানবন্দী :
আমার নাম অরুনাংশু বিমল চৌধুরী। বয়স ৮০/৮২ বছর।
১৯৭১ সালে আমার বয়স ৪০/৪১ বছর ছিল। আমি মেট্রিক পাশ করে এল.এম.এফ. পাশ করি। আমার গ্রামের বাড়ি সুলতানপুর, জগতমল্লপাড়া, থানা-রাউজান, জেলা-চট্টগ্রাম। আমি ডাক্তারী করি। আমি রাঙ্গুনিয়ায় রানীহাটে ডাক্তারী করতাম। যেদিন ঘটনা ঘটে রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরের চেয়ারম্যান কায়কোবাদ চৌধুরী আমার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান।  আমাকে বলেন,  বাবু আপনি এুুনি বাড়ি চলে যান এবং বাড়ি গিয়ে আপনার ফেমেলি সহ রাস্তা থেকে দুই মাইল দূরে সরে যাবেন। তখন আমি স্বপরিবারে বিনাজুড়িতে আমার শ্বশুড় বাড়িতে চলে গেলাম। আমি ওখানে পৌঁছার ঘন্টা দুয়েক পরে শুনতে পাই যে, জগতমল্লপাড়ার সব লোককে গুলি করে হত্যা করে ফেলেছে। তখন আমি মনে করলাম যে, আমি একটু গিয়ে দেখে আসি। তারপর সেখানে যাওয়ার পথে আমার ভাবীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। আমার বাড়ি থেকে এক মাইলের মত দেিণ আমার ভাবীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখি। আমার ভাবীর নাম জোৎস্না বালা চৌধুরী। তার বাবার বাড়িও বিনাজুড়িতে। তখন বিনাজুড়িতেও লুটপাট শুরু হয়ে যায়। আমার ভাবীকে বিনাজুড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে তার সংগে আমার কোন কথাবার্তা হয়নাই। এই ঘটনাগুলি কারা ঘটিয়েছে তাহা আমি জানিনা, কারণ আমি বাড়িতে ছিলামনা।

বিনাজুড়িতে যখন লুটপাট হয় তখন আমরা েেতর আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম। এই ঘটনার পরে রাত্রি ৯-০০টার সময় স্বপরিবারে ভারতে চলে যাই। আমি পদব্রজে ভারতে চলে যাই। আমি যখন বর্ডারে যাই তখন আমার শিক সাধন ধর, আবদুল্লাহ আল হারুণ ও খালেদ সাহেবের সংগে দেখা হয়। তারা আমাকে একটা স্লিপ দেয়। তৎপর আমি নদী পাড় হয়ে ভারতে চলে যাই। মুক্তিযুদ্ধের পরে আমরা ভারত থেকে দেশে ফিরে আসি। বাড়ি ফিরে এসে দেখি গ্রামের সব শেষ হয়ে গেছে, কিছুই নেই, মাটির ঘরগুলি দাঁড়িয়ে আছে। ফিরে আসার পরে আমি দেখি যে, জগতমল্লপাড়ায় সব তিগ্রস্থ হয়েছে। আমি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, কোথায় থাকবো, কি খাব, যার ফলে অন্য গ্রামে কি হয়েছে  না হয়েছে তা দেখিনাই।

আমার বড়ভাই হিমাংশু বিমল চৌধুরী, বৌদি নীলুবালা  চৌধুরী,  আমার অপর ভাই সিতাংশু বিমল চৌধুরী, আমার কাকা সুরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, তার স্ত্রী চারুবালা চৌধুরী, আমার অপর ভাই কিরণ চন্দ্র চৌধুরী সহ আরো অনেককে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন  সময়ে। এদেরকে আমাদের বাড়িতে হত্যা করা হয়। এরপরে শুনেছি যে, আনুমানিক এক মাস পরে আরও তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলির পরে স্থানীয় লোকজন কে কোথায়  ছিল তা দেখার সুযোগ আমার হয়নাই। এই হত্যাকান্ডে জগতমল্লপাড়ায় যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মৃতিরার্থে শহীদ মিনার তৈরী করা হয়েছে। সেই শহীদ মিনারে শহীদদের নাম লেখা আছে।

এ পর্যন্ত বলার পর সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদ সিমন প্রশ্ন করেন মামলা চলাকালে আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দী দিয়েছিলেন কি-না বা তদন্ত কর্মকর্তা আপনার জবানবন্দী  নিয়েছিলেন কি-না। প্রশ্নটি  ভাল করে বুঝতে না পারাই ট্রাইব্যুনাল তাকে আবার  বুঝিয়ে প্রশ্নটি করেন। তখন তিনি জবাব দেন। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে আমার নিকট কোনকিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন কিনা তা আমার মনে পড়ছেনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন